নিজেদের সিদ্ধান্ত অনড় থাকলেন সূর্যকুমার যাদবেরা। এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের ট্রফিই নিল না ভারতীয় দল। ট্রফি দেওয়ার কথা ছিল এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মহসিন নকভির। তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডেরও চেয়ারম্যান। আরও এক বার পাকিস্তানকে বয়কট করল ভারত। ট্রফি ছাড়াই উল্লাস করলেন ভারতীয় ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফেরা। এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার আগে থেকে বিতর্ক চলছিল। শেষটাও হল বিতর্কের মধ্যে দিয়ে।
ফাইনাল শেষ হওয়ার পর সকলের নজর ছিল, কার হাত থেকে ট্রফি নেন সূর্যেরা। খেলা শেষ হলেও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছিল না। ভারতীয় ক্রিকেটারেরা মাঠেই দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না। শোনা গিয়েছে, ভারত নাকি জানিয়ে দেয়, তারা নকভির কাছ থেকে ট্রফি নেবে না। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে এই একই কথা বলেছিলেন অধিনায়ক সূর্য। কিন্তু মাঠে ছিলেন নকভি। কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। নকভিকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, বেশ রেগে রয়েছেন তিনি। খেলা শেষ হওয়ার ১ ঘণ্টা পর সাজঘর থেকে বেরিয়ে আসেন পাক ক্রিকেটারেরা। সওয়া ১ ঘণ্টা পর শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
প্রথমে ব্যক্তিগত পুরস্কার দেওয়া হচ্ছিল। তার পর পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের মেডেল নিতে ডাকা হয়। সেখানেও নাটক। সঞ্চালক সাইমন ডুল জানান, পাক ক্রিকেটারদের মেডেল দেবেন নকভি। কিন্তু আদতে দেখা যায়, এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের অন্য এক কর্তা আমিরুল ইসলাম তাঁদের মেডেল দিচ্ছেন। এশিয়া কাপে রানার আপ হওয়ায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার চেক পেয়েছে পাকিস্তান। অধিনায়ক সলমন আলি আঘা সেই চেক ছুড়ে ফেলে দেন।
ভারতের কুলদীপ যাদব ম্যাচের সেরা ও অভিষেক শর্মা প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পান। তাঁরা পুরস্কার নেওয়ার পর সঞ্চালক ডুল জানান, ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়নের ট্রফি নেবে না। এর থেকে স্পষ্ট, নকভিও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরেননি। অন্য কোনও কর্তাকে তিনি ট্রফি দেওয়ার অনুমতি দেননি। সেই কারণে ভারতীয় দলও নিজেদের দাবি থেকে সরেনি। এই দৃশ্য ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনও দিন দেখা যায়নি। একটা বড় প্রতিযোগিতা জিতে জয়ী দল ট্রফিই নিল না। বোঝা যাচ্ছে, এই বিতর্ক এখনই থামবে না। এশিয়া কাপ শেষ হয়ে গেলেও ভারত-পাকিস্তান সংঘাত এখনও চলবে।
এ বারের এশিয়া কাপের শুরু থেকেই দু’দলের মধ্যে সংঘাত চলছে। শুরুটা করে ভারত। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত না মেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেই ঘটনা ভাল ভাবে নেয়নি পাকিস্তান। খেলা শেষে সূর্য প্রকাশ্যে বলেন, এই জয় পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় নিহতদের পরিবারকে উৎসর্গ করছেন তাঁরা। পাশাপাশি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন তিনি। খেলা শেষে নিজেদের সাজঘরের দরজাও বন্ধ করে দেয় ভারত। সেই ঘটনা নিয়ে আইসিসি-র দ্বারস্থ হয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। সূর্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তারা। সূর্যের ম্যাচ ফি-র ৩০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে। সেই ঘটনার বিরুদ্ধে আবেদন করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
বিতর্কে জড়িয়েছেন সেই ম্যাচের রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টও। পাক বোর্ড অভিযোগ করে, পাইক্রফ্ট গিয়ে দুই দলের অধিনায়ককে হাত মেলাতে নিষেধ করেছেন। তারা দাবি জানায়, এশিয়া কাপের কোনও ম্যাচে পাইক্রফ্টকে আর দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। যদিও পাকিস্তানের দাবি উড়িয়ে দেয় আইসিসি। পরের পাক ম্যাচের আগে পাইক্রফ্টের সঙ্গে কথা বলেন পাকিস্তানের কোচ মাইক হেসন, অধিনায়ক সলমন ও অন্য কর্তারা। পরে পাক বোর্ড দাবি করেন, পাইক্রফ্ট ক্ষমা চেয়েছেন। যদিও অন্য সূত্রে দাবি করা হয়, তিনি ক্ষমা চাননি।
সুপার ফোরে ভারত-পাক ম্যাচে বিতর্ক আরও বাড়ে। অর্ধশতরান করে ‘স্টেনগান’ উল্লাস করেন পাকিস্তানের ব্যাটার সাহিবজ়াদা ফারহান। পাক পেসার হ্যারিস রউফ দু’বার ‘প্লেন ক্র্যাশ’ সেলিব্রেশন করেন। সেই ঘটনার পর ফারহান ও হ্যারিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ভারতীয় বোর্ড। ফাইনালেও যে বিতর্ক কমবে না তা বোঝা যাচ্ছিল। ফাইনাল শুরু হওয়ার আগেই ভারতের পেসার অর্শদীপ সিংহের নামে অভিযোগ করে পাক বোর্ড। তাদের অভিযোগ, সুপার ফোরের ম্যাচে ‘অশ্লীল’ ভঙ্গী দেখিয়েছেন অর্শদীপ।
ফাইনাল শুরুর আগে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার সময় খোশগল্প করছিলেন পাকিস্তানের দুই ক্রিকেটার হ্যারিস ও শাহিন শাহ আফ্রিদি। ক্রিকেটের নিয়মে রয়েছে, অন্য দেশের জাতীয় সঙ্গীতের সময়ও সাবধান ভঙ্গীতে থাকতে হবে ক্রিকেটারদের। গল্প করা যাবে না। কিন্তু পাকিস্তানের দুই ক্রিকেটার সেটাই করেন। তার জন্য দু’জনের সমালোচনা শুরু হয়েছে। ভারতীয় সমর্থকদের অভিযোগ, ভারতের জাতীয় সঙ্গীতকে অসম্মান করেছেন তাঁরা। হ্যারিস ও শাহিনের শাস্তির দাবিও উঠেছে। ফাইনালে হ্যারিসকে বোল্ড করে তাঁকে জবাব দেন জসপ্রীত বুমরাহ। তিনিও ‘প্লেন ক্র্যাশ’ উল্লাস করেন।
খেলার মধ্যেই যে এই বিতর্ক শেষ হবে না তা বোঝা যাচ্ছিল। হলও তাই। খেলা শেষে পাকিস্তানের ক্রিকেটারেরা সাজঘরে ঢুকে গেলেন। পর পর তিন ম্যাচে ভারতের কাছে হারের ধাক্কা হজম করা সহজ ছিল না। পাশাপাশি গোটা প্রতিযোগিতা জুড়ে ভারত বয়কট করেছে পাকিস্তানকে। সেই জ্বালাও হয়তো ছিল। পাক ক্রিকেটারদের মাঠে নামতে দেরি হওয়া দেখে জল্পনা শুরু হয়েছে, সলমনেরা কি অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? শেষ পর্যন্ত কি নকভির ফোনে নামেন তাঁরা? নইলে এত দেরি কেন করলেন তাঁরা। যদিও ভারতীয় ক্রিকেটারেরা আরও এক বার পাত্তা দিলেন না নকভিকে। এশিয়া কাপ জিতে ট্রফিই নিলেন না সূর্যেরা।