ভারতকে নির্বাসিত করার দাবি পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটারের, ‘ক্রিকেটের কুৎসিত দিন দেখতে হল ওদের জন্য’

পাকিস্তানের বোর্ডপ্রধান মহসিন নকভির থেকে এশিয়া কাপের ট্রফি নিতে রাজি হয়নি ভারতীয় দল। ট্রফি ছাড়াই মঞ্চের সামনে গিয়ে উচ্ছ্বাস করেছে তারা। এই ঘটনার নিন্দা করেছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার রশিদ লতিফ। তাঁর দাবি, আইসিসি-র উচিত ভারতকে নির্বাসিত করা। তবে এটাও জানিয়েছেন, ভারতের দাপট থাকার কারণে আইসিসি হয়তো সেই কাজ করার সাহস পাবে না। আর এক প্রাক্তনী শোয়েব মালিক জানিয়েছেন, এই ঘটনা তাড়া করে বেড়াবে ভারতীয় দলকে।

রবিবারের ঘটনাকে ক্রিকেটের ‘কুৎসিত দিন’ বলে বর্ণনা করেছেন লতিফ। সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “এসিসি চেয়ারম্যানের থেকে ট্রফি এবং পুরস্কার নিতে রাজি হয়নি ভারত। নিঃসন্দেহে ওদের নির্বাসিত করা উচিত আইসিসি-র। অন্য কোনও খেলা হলে সহজেই বিষয়টির সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু আইসিসি-র চেয়ারম্যান, সিইও, সিএফও, বাণিজ্যিক বিভাগের প্রধান এবং প্রতিযোগিতা বিভাগের প্রধানেরা সকলেই ভারতীয় হওয়ায় নির্বাসনের সম্ভাবনা কম।”

তিনি আরও লিখেছেন, “ক্রিকেটের কুৎসিত দিন। একটা ভদ্রলোকের খেলার সংস্কৃতির বিরোধী কাজ করেছে ভারতীয়রা। তা-ও আবার দিনের আলোয় সকলের সামনে।”

শোয়েব বলেছেন, “ক্রিকেটারেরা কতটা পরিশ্রম করেছে দেখুন। গরমের মধ্যে খেলেছে, কঠোর পরিশ্রম করেছে। এ সব কিসের জন্য? ট্রফি জিততে। তার পরে ওরা ট্রফি নিতেই এল না। আজ হয়তো বিষয়টা নিয়ে ওরা ওদের মতো করে উৎসব করছে। তবে কয়েক বছর পরে এই ঘটনা ওদের কুরে কুরে খাবে।”

কী হয়েছিল রবিবার?

এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ও পাকিস্তান বোর্ডের চেয়ারম্যান নকভির হাত থেকে পুরস্কার নেবে না— জানিয়ে দিয়েছিল ভারত। একই সঙ্গে অনুরোধ করেছিল, এমিরেটস বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান খালিদ আল জারুনি তাদের ট্রফি দিন। এসিসি কর্তারা আলোচনা শুরু করেন। ফিরিয়ে দেওয়া হয় ভারতের অনুরোধ।

নকভি মাঠে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না। মাঠে দাঁড়িয়ে কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেখা যায় নকভিকে। তাঁকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, বেশ রেগে রয়েছেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটারেরাও অপেক্ষা করছিলেন মাঠে। তাঁরা কোনও ভাবেই নকভির কাছ থেকে পুরস্কার নিতে চাইছিলেন না।

নকভি যখন মঞ্চে আসেন, তখন স্টেডিয়ামে ভারতীয় সমর্থকদের গলায় ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনি। সঞ্চালক সাইমন ডুল জানান, পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের পদক দেবেন নকভি। কিন্তু তাঁর বদলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি আমিরুল ইসলামের কাছ থেকে পদক পান সলমন আলি আঘারা। নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে ভারতীয় ক্রিকেট দল। পাক বোর্ড তথা এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নকভির কাছ থেকে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি নেননি সূর্যকুমার যাদবেরা। সাইমন ডুল পরে বলেন, “আমাকে এসিসি থেকে জানানো হয়েছে যে ভারতীয় ক্রিকেট দল পুরস্কার গ্রহণ করবে না। তাই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এখানেই শেষ।”

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব দেবজিৎ শইকীয়া অভিযোগ করেন, এশিয়া কাপের ট্রফি ও ভারতীয় ক্রিকেটারদের পদক নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন নকভি। পাকিস্তানের সমালোচনা করে শইকীয়া বলেন, “যে হেতু ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি রয়েছে, তাই আমরা এমন কারও কাছ থেকে পুরস্কার নেব না, যিনি পাকিস্তানের মন্ত্রী। নীতিগত ভাবে এই সিদ্ধান্ত আমরা আগেই নিয়েছিলাম। তার মানে এই নয় যে ভদ্রলোক ট্রফি ও মেডেল নিয়ে পালিয়ে যাবেন। এই ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আশা করছি ভদ্রলোক দ্রুত ট্রফি ও মেডেল ভারতে ফেরত দিয়ে দেবেন। নভেম্বর মাসে দুবাইয়ে আইসিসি-র বৈঠক আছে। সেখানে আমরা এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জোরাল প্রতিবাদ জানাব‌।”

সাংবাদিক বৈঠকে সূর্য বলেন, “চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি পাচ্ছে না, ক্রিকেট খেলা শুরু করার পর থেকে জীবনে এমন ঘটনা আমি দেখিনি। তবে আমার মতে দলের ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফেরাই আসল ট্রফি। সকলে বলছেন, ভারত এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন। এটাই আসল কথা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.