জলমগ্ন কলকাতায় বিদ্যুৎস্পর্শে মৃত্যু নিয়ে ‘আক্ষেপ’ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিজেপি সূত্রের খবর, নিউটাউনের হোটেলে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথোপকথনের সময়ে ‘আক্ষেপ’ করেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ‘প্রচলিত আচরণবিধি’ (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) মানে না। তাই জলমগ্ন কলকাতায় এতগুলি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাঁর আরও বক্তব্য, জল নামতে দেরি হওয়ার জন্য যে সমস্যা দায়ী বলে কলকাতা পুরসভা দাবি করেছে, সেই সমস্যা মুম্বইয়ে আরও বেশি থাকা সত্ত্বেও সেখানে এমন বিপর্যয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয় না।
বিজেপি নেতাদের পরিচালিত দু’টি দুর্গাপুজো উদ্বোধন করতে বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতায় এসেছিলেন শাহ। শুক্রবার বেলা ১২টা ৪০ মিনিটের মধ্যে দু’টি পুজোর উদ্বোধন করে এবং কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়ে শাহ বিহারে চলে গিয়েছেন। কিন্তু যে হোটেলে শাহ বৃহস্পতিবার রাতে ছিলেন, সেখানে সকাল ১০টা থেকেই রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল। মাঝে শাহও কিছুক্ষণ কয়েক জনের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন বলে বিজেপির একটি সূত্রের দাবি। বৈঠকের বাইরেও তিনি কিছুক্ষণ নানা বিষয় নিয়ে হোটেলে উপস্থিত প্রায় সব বিজেপি নেতার সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেই কথোপকথনের মাঝেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই ‘আক্ষেপ’ ব্যক্ত করেছেন।
বিজেপি সূত্রের খবর, সোমবার রাতের অতিভারী বর্ষণে কলকাতা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় পরিস্থিতির কতটা অবনতি ঘটেছিল, তা নিয়ে শাহ খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। তিনি জানতে চান, কত জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যের বিজেপি নেতারা জানান ১০ জনের। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে ‘জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী’ (এনডিআরএফ) কিছু ‘প্রচলিত আচরণবিধি’ অনুসরণ করে এবং সকলকেই তা অনুসরণের পরামর্শ দেয়। দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাই বা এই গোত্রের মহানগর জলমগ্ন হয়ে পড়লে প্রথমেই কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া সেই ‘প্রচলিত আচরণবিধি’র মধ্যে পড়ে বলে শাহ জানান। কিন্তু সে সব আচরণবিধি মানার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘অনীহা’ রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আলাপচারিতায় উপস্থিত এক বিজেপি নেতা শাহকে জানান, গঙ্গায় জোয়ার আসার ফলে শহরের জল নামতে দেরি হচ্ছিল বলে পুরসভার তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে। শাহ সে যুক্তিও নস্যাৎ করে জানান, মুম্বইতে এই জোয়ার সংক্রান্ত সমস্যা আরও বেশি। কারণ মুম্বই সমুদ্রের একেবারে তীরবর্তী এবং সেখানে জোয়ারের সময়ে জলস্ফীতি গঙ্গার জলস্ফীতির চেয়ে অনেক বেশি হয়। তা সত্ত্বেও মুম্বই জলমগ্ন হয়ে পড়লে এত প্রাণহানি ঘটে না। কারণ, সেখানে এনডিআরএফের নির্দিষ্ট করে দেওয়া আচরণবিধি মেনে কাজ হয়। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সকালে কলকাতা জলমগ্ন থাকাকালীন বিদ্যুৎস্পর্শে একের পর এক মৃত্যুর খবর রাজ্য সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছিলেন কলকাতা এবং বৃহত্তর কলকাতায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি-কে। পক্ষান্তরে, বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, সরকার এবং পুরসভার ‘দায়িত্বজ্ঞান’ সম্পর্কে।