ডোনাল্ড ট্রাম্পের নয়া এইচ-১বি ভিসা বিতর্কের মধ্যে হোয়াইট হাউস ব্যাখ্যা দিয়েছে। এই ভিসার জন্য কাদের মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হবে? কারা স্বস্তি পেলেন, তা স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু তার পরেও চিন্তায় মার্কিন সংস্থাগুলি। শুধু তা-ই নয়, চাপে পড়েছেন ভিসাধারীরা।
এইচ-১বি ভিসা সংক্রান্ত নিয়মে বিস্তর বদল এনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানানো হয়েছে, এখন থেকে এইচ-১বি ভিসার জন্য মার্কিন সংস্থাগুলির কাছ থেকে এক লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা) নেওয়া হবে। ভারতীয় সময় অনুযায়ী রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই চালু হয়ে গিয়েছে নয়া এই নিয়ম। ট্রাম্পের এই নয়ানীতি ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন, কারা চাপে পড়বেন? সকল এইচ-১বি ভিসাধারীকেই কি এই অঙ্কের টাকা গুনতে হবে?
চাপে কারা? স্বস্তিতে কারা?
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যাঁদের ইতিমধ্যেই এইচ-১বি ভিসা রয়েছে, তাঁদের দেশে পুনঃপ্রবেশের ক্ষেত্রে কোনও টাকা দিতে হবে না। অর্থাৎ যে সব ভিসাধারী এই মুহূর্তে বাইরে রয়েছেন, ফের আমেরিকায় ঢুকতে কোনও টাকা দিতে হবে না তাঁদের। নিয়ম থাকবে আগের মতোই। তবে যাঁরা নতুন করে এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদন করবেন, তাঁদের জন্যই সংশ্লিষ্ট মার্কিন সংস্থাকে এক লক্ষ ডলার দিতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে।
কত বার দিতে হবে টাকা?
এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদনকারীদের বার বার টাকা গুনতে হবে না। শুক্রবার নতুন এইচ-১বি ভিসা-নীতি নিয়ে মার্কিন বাণিজ্যসচিব হোয়ার্ড লুটনিক জানিয়েছিলেন, বার্ষিক ভাবে এই টাকা দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, নতুন ভিসার পাশাপাশি ভিসা পুনর্নবীকরণের আবেদনকারীদের ক্ষেত্রেও এই মূল্য প্রযোজ্য হবে। তবে পরে বিষয়টি ব্যাখ্যা দিয়েছে হোয়াইট হাউস। শনিবার গভীর রাতে (ভারতীয় সময়) ভিসা-নীতির নিয়মকানুন নিয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট জানান, এটি কোনও বার্ষিক মূল্য নয়। বরং নতুন ভিসার আবেদন করতে গেলে এককালীন মূল্য হিসাবে এই টাকা দিতে হবে। নতুন ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়ানীতি। ভিসা পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে কোনও টাকা দিতে হবে না।
কেন নয়া ভিসানীতি আনলেন ট্রাম্প?
এইচ-১বি ভিসার বিরুদ্ধে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান অভিযোগ, এর জন্য মার্কিন নাগরিকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন। বিদেশিদের কারণে চাকরি যাচ্ছে আমেরিকানদের। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, আমেরিকায় ২০০৩ সালে এইচ-১বি ভিসাধারী তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর সংখ্যা ছিল ৩২ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৬৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মার্কিন নাগরিকদের বেকারত্ব। এই সব পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখেই নয়া সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
আমেরিকায় ফেরার হিড়িক
বিদেশি কর্মীদের উপর ট্রাম্পের নয়ানীতির কী প্রভাব পড়তে পারে তা ভেবে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল মার্কিন সংস্থাগুলি। বেশ কয়েকটি সংস্থা তাদের কর্মীদের দেশ না ছাড়ার জন্য সতর্কও করে দিয়েছিল। যে সব বিদেশি কর্মী আমেরিকার বাইরে ছিলেন, তাঁরাও ভাবছিলেন যে টাকা না দিলে পুনরায় মার্কিন মুলুকে ঢুকতে পারবেন না তাঁরা। অনেকেই দেশে ফেরার বিমানে উঠেও বাধ্য হয়ে নেমে পড়েছেন। ছুটি বাতিল করে কাজে ফিরবেন অনেকেই। ভ্রমণ বুকিং সংস্থা মেকমাইট্রিপ-এর এক মুখপাত্রের কথায়, রবিবার ভোর থেকে শেষ মুহূর্তে আমেরিকাগামী উড়ানে বুকিংয়ের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে টিকিটের দামও। তবে হোয়াইট হাউসের ব্যাখ্যার পরে অনেকে স্বস্তি পেলেন।
ভিসানীতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন
আমেরিকার অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্পের এই নির্দেশনামার বৈধতা নিয়ে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের সিনিয়র আধিকারিক বলেছেন, ‘‘এইচ-১বি ভিসার উপর এক লক্ষ ডলার চাপানোর আইনত কোনও অধিকারই নেই ট্রাম্পের। প্রক্রিয়াকরণের খরচ তোলার জন্য কিছুটা দাম তিনি বাড়াতে পারেন মাত্র।’’
চাপে ভারতীয়েরা!
এইচ-১বি ভিসা নিয়ে প্রতি বছর ভারত থেকে বহু মানুষ আমেরিকায় যান। এই মুহূর্তে ভারতীয়েরাই এই ভিসার সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। শুধু গত বছরেই ভিসার ৭১ শতাংশ আবেদন মঞ্জুর হয়েছে ভারত থেকে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে চিন (১১.৭ শতাংশ)। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে অ্যামাজ়ন এবং তার সহযোগী সংস্থাগুলি ১২ হাজার এইচ-১বি ভিসার আবেদন মঞ্জুর করেছে। মাইক্রোসফ্ট, মেটার মতো সংস্থা সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে পাঁচ হাজার করে আবেদনে। নতুন নিয়মের পর সেই আবেদন অনেক কমতে পারে বলেই আশঙ্কা। আমেরিকায় গিয়ে কাজ করার আশা ছাড়তে হবে অনেক দক্ষ ভারতীয়কেই। অনেকের দাবি, এই এক লক্ষ ডলার এইচ-১বি ভিসার আবেদনকারী কর্মীদের কাছ থেকেই নেবে সংস্থাগুলি। তাতে আর্থিক চাপে পড়তে পারেন বিদেশি কর্মীরা।