সেপ্টেম্বরে এখনও পর্যন্ত বেশ ভাল পরিমাণেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। সামান্য পরিমাণে হলেও গত দু’মাসের তুলনায় মস্কো থেকে তেল আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে কূটনৈতিক চাপানউতর বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের উপর চড়া হারে শুল্ক চাপিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান থেকে ইঙ্গিত মিলছে, ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিতে বিশেষ প্রভাব পড়েনি। যদিও শুল্ক-কোপের সার্বিক প্রভাব পড়েছে কি না, তা স্পষ্ট হতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।
অপরিশোধিত তেল কেনার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে যে চুক্তিগুলি হয়, তা সাধারণত সরবরাহের ৬-৮ সপ্তাহ আগে চূড়ান্ত করা হয়। অর্থাৎ, সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে যে তেল আমদানি করা হচ্ছে, তা মূলত জুলাই মাসের শেষ দিকে এবং অগস্টের শুরুর দিকে চূড়ান্ত হয়েছিল বলে ধরে নেওয়া যায়। বস্তুত, ওই সময়েই (৩০ জুলাই) ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন ট্রাম্প। সঙ্গে রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ‘জরিমানা’র হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। পরে গত ৬ অগস্ট রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপান ট্রাম্প, যা কার্যকর হয় ২৭ অগস্ট থেকে। বাণিজ্য বিশ্লেষকদের অনুমান, দ্বিতীয় শুল্ক চাপানোর ফলে কোনও প্রভাব পড়েছে কি না, তা সেপ্টেম্বরের শেষ বা অক্টোবরে আরও স্পষ্ট হতে পারে।
বিশ্ববাজারের রিয়েল-টাইম ডেটা সংগ্রহকারী সংস্থা কেপলারের তথ্য অনুসারে, সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৬ দিনে রাশিয়া থেকে প্রতি দিন ১৭ লক্ষ ৩০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে ভারত। গত দু’মাসের তুলনায় এই পরিসংখ্যান কিছুটা বেশি। গত জুলাইয়ে প্রতি দিন ১৫ লক্ষ ৯০ হাজার ব্যারেল এবং অগস্টে প্রতি দিন ১৫ লক্ষ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি হয়েছে মস্কো থেকে। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ জানাচ্ছে, ১-১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাশিয়ার বন্দরে ভারতের জন্য তেল প্রতিদিন ১২ লক্ষ ২০ ব্যারেল তেল ‘লোড’ করা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিসংখ্যান আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ, রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল বোঝাই বেশ কিছু ট্যাঙ্কার মিশরের সৈয়দ বন্দরের দিকে যাচ্ছে। সেগুলির চূড়ান্ত গন্তব্যস্থল এখনও স্পষ্ট নয়। তবে গত কয়েক মাস ধরে এই ট্যাঙ্কারগুলিতে নিয়মিত ভাবে ভারতের বিভিন্ন বন্দরে অশোধিত তেল এসেছে। তা থেকে বিশ্লেষকদের অনুমান, ওই ট্যাঙ্কারগুলির একটি বড় অংশ ভারতেও আসবে।
বর্তমানে রাশিয়ার অশোধিত তেল সবচেয়ে বেশি কেনে চিন এবং তার পরেই রয়েছে ভারত। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প বার বার অভিযোগ করেছেন, তেল বিক্রির অর্থ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করছে রাশিয়া। তাঁর দাবি, রাশিয়া থেকে তেল কেনার ফলে যুদ্ধে প্রকারান্তরে রাশিয়াকে সাহায্য করা হচ্ছে। ভারতের উপর শুল্ক চাপানোর নেপথ্যেও সেটিই কারণ, তা-ও স্পষ্ট করেছেন ট্রাম্প। তবে সেপ্টেম্বর মাসের প্রাথমিক পরিসংখ্যান বলছে, আমেরিকার শুল্ক-হুমকির পরেও মস্কো থেকে তেল আমদানিতে পিছু হটেনি ভারত।
যদিও জুলাই-অগস্ট মাসে ভারতে রাশিয়া থেকে তেল কেনার হার তুলনামূলক ভাবে কিছুটা কমেছিল। তবে জ্বালানি শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মতে, ট্রাম্পের চাপের কারণে তা হয়নি। আমেরিকা ভারতের উপর শুল্ক চাপানোর আগেই তেল কেনার ওই চুক্তিগুলি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। মূলত মস্কো তেলের উপর ছাড় কমিয়ে দেওয়ার কারণেই ওই সময় জ্বালানি কেনার হার কিছুটা কমেছিল বলে মত বিশ্লেষকদের। বস্তুত, নয়াদিল্লিও ধারাবাহিক ভাবে বলে আসছে, ভারত যেখানে সবচেয়ে ভাল সুবিধা পাবে, কোনও নিষেধাজ্ঞা না থাকলে সেখান থেকেই তেল কিনবে। বর্তমানে রাশিয়া থেকে তেল কেনার উপর কোনও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা নেই। এটি মূলত ট্রাম্পের একতরফা একটি সিদ্ধান্ত।