১৮৮৯ সালে ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মোহনবাগান, তার ঠিক ১০০ বছর পরে তুর্কমেনিস্তানে জন্ম আহাল এফকে-র| জন্মের বিচারের ফারাকের মতোই এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টু-র ম্যাচেও ফারাক গড়ে দিল আহাল| মঙ্গলবার যুবভারতীতে এসে আহাল তিন পয়েন্ট নিয়ে চলে গেল|
প্রথমার্ধ
বিরতির আগে দুই দলই অত্যন্ত ম্যাড়ম্যাড়ে ফুটবল খেলল দুই দল| মোহনবাগান ও আহাল মিলে মোট তিনটি কর্নার অর্জন করেছিল| ঘরের দল দু’টি, ও বিদেশি দল একটি| কিন্তু কেউই তা কাজে লাগাতে পারেনি| ৩২ মিনিটে আহালের ফরোয়ার্ড মিরজোইয়েভ সুলেমান গোল করার সুযোগ পেয়েছিলেন| তবে তাঁর শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে| এর মিনিট পাঁচেক পর জেসন কামিংস বক্সের মধ্যে শট নিয়েছিলেন| তবে শটে তেমন রসদ না থাকায় কিছুই ঘটেনি| ৪৫ মিনিটে আহালের তোভাকেলভ নাজারের শট বিশাল কাইথ ডাইভ মেরে বাঁচিয়ে বিপন্মুক্ত করেন এই যাত্রায়| রেফারি এক মিনিট ইনজুরি টাইম দিয়েছিলেন| তখন আবার টম অলড্রেড, বাজে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখে বসেন! দুই দলের পারফরম্যান্সের তুল্যমূল্য বিচার করলে আহাল কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিল| টিমটাকে অনেক বেশি ফিট এবং গোছানো দেখাচ্ছিল|
দ্বিতীয়ার্ধ
বিরতির কিছুক্ষণ পরেই মোহনবাগান জোড়া পরিবর্তন করে| কিয়ান নাসিরির জায়গায় জেমি ম্যাকলারেন ও দীপক টাংরির পরিবর্তে অনিরুদ্ধ থাপাকে নামান বাগান চাণক্য মোলিনা| ওদিকে আহালের কোচ আনামুহামেদভ এজিজ তাঁর মিডফিল্ডার আনায়েভ গুরবানকে তুলে হোজমামেদভ দোরভানকে নামান তিনি| বিরতির আগে ঠিক যেখানে শেষ করেছিল দুই দল| বিরতির পরও ঠিক সেখান থেকেই শুরু করল বাগান| তবে ঘড়ির কাঁটা ষাট মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর মোহনবাগান যুবভারতী গরম করে দিতে শুরু করেছিল| ৬৭ মিনিটে কামিংস বক্সের মধ্যে ডান পায়ে শট নিয়েছিলেন| তবে টার্গেটে রাখতে পারেননি| এর ঠিক দু’মিনিটের মধ্যে ছ’গজ দূর থেকে ম্যাকলারেনের শট রুখে দেন আহালের গোলরক্ষক| ৭১ মিনিটে আবার বক্সের বাইরে থেকে আলবার্তো রড্রিগেজের শট বারের উপর দিয়ে উড়ে | পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনটে গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারল না মোহনবাগান! এরপর মোলিনা ফের জোড়া পরিবর্তন করেন| অভিষেক সিংয়ের জায়গায় শুভাশিস বোস ও লিস্টন কোলাসোর জায়গায় রবসন রবিনহোকে নামান মোলিনা| ৫ বিদেশিতে চলে যায় মোহনবাগান| ৭৯ মিনিটে আহাল কোচের একটা মাস্টার স্ট্রোকই কামাল করে দেয়| ডিফেন্ডার আবদুরহমনোভ আলিবেকের জায়গায় গুরবানবেরদিয়েভ বাশিমকে নামান| আর মাগটিমবেরডি বেরেনোভের জায়গায় তিনি এনোয়ার আনায়েভকে নামান| এই দুই বদলের সৌজন্যেই এল গোল| বাশিমের অ্যাসিস্ট থেকে বক্সের বাঁ-দিক থেকে বাঁ-পায়ের জোরাল শটে বক্সের ডান দিকের কোণা দিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন| গত মরসুমে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে সেবার আর্কাডাগের হয়ে যুবভারতীতে খেলে গিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে| চেনা মাঠেই গোলের স্বাদ পেয়ে দলকে জেতালেন তরুণ ফরোয়ার্ড|
মোহনবাগান সরাসরি এসিএল ২-এর গ্রুপ পর্বে খেললেও আহাল কিন্তু এসেছে প্লে-অফে জিতে। এখন তারা নিয়মিত ঘরোয়া লিগ খেলছে| ফলে পুরোদমে খেলার মধ্যেই রয়েছে| তাছাড়াও সেই জানুয়ারি থেকে প্রস্তুতি সারছে তুর্কমেনিস্তানের এই ক্লাব। জাতীয় দলে খেলা একাধিক ফুটবলারও রয়েছেন সেই ক্লাবে। কিন্তু মোহনবাগান শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছে সেই ডুরান্ড কাপে গত ১৭ অগাস্ট| ফলে দুই দলের সেই ফারাকটা ভীষণ ভাবেই চোখে পড়ল|
মঙ্গলবার যুবভারতীতে আন্তর্জাতিক ম্যাচে, বাগান সমর্থকরা মৌতাতও সেরকম তৈরি করেছিলেন| গ্যালারি থেকে ক্রমাগত গান আর ড্রামসের আওয়াজ স্টেডিয়াম মুখরিত হচ্ছিল, তবে ফুটবলাররা সেই মানের খেলাটা খেলতে পারলেন না| এ যেন অচেনা মোহনবাগান| সম্প্রতি এমন হতশ্রী মোহনবাগানকে দেখেনি যুবভারতী| ফিটনেস থেকে ফুটবল, সব মিলিয়েই মোহনবাগান হারল আজ। তবে ফিটনেস যদি এমন থাকে, তাহলে আন্তর্জাতিক মঞ্চ তো দূর, ঘরোয়া ফুটবলেও .মোলিনার ছেলেদের ভালো কিছু করার সম্ভাবনা কম।