পদ্মায় ইলিশ উঠছে। তাই নাওয়া খাওয়া ভুলে রোজ নদীতে যেত পদ্মানদীর মাঝি কুবের। মরশুমেই তো দুটো পয়সা ঘরে আনত হবে। ঠিক তেমনই, ভোড় আড়াইটের ঘোর অন্ধকারে পুকুরে নামেন শেখ বাবর আর তার সঙ্গীরা। অসীম কষ্ট তাদের সয়ে গেছে। অত রাতে দিঘির বুক থেকে পদ্মফুল তুলে আনেন তাঁরা। চৈত্র থেকে শুরু হয়েছে ফুল তোলা। পুজোর আগে এখন তো ভরা মরশুম। পদ্মে পুজিতা হবেন মা দুর্গা। আবহমানের রীতি মেনেই।
ধর্মের বেড়াজাল ডিঙিয়ে এক সম্প্রীতির ছবি ফুটে উঠেছে খণ্ডঘোষে। প্রায় তিন দশক ধরে পদ্মফুল চাষ করছেন শেখ বাবর, আর সেই পদ্মফুলেই পূজিত হচ্ছেন দেবী দুর্গা। তার সাথে কাজ করেন যারা তারা হিন্দু। হিন্দু শাস্ত্র মতে, রাবণবধের আগে শ্রীরামচন্দ্র দেবী দুর্গাকে ১০৮টি নীল পদ্ম অর্পণ করেছিলেন। সেই থেকেই দুর্গাপুজোয় দেবীর চরণে ১০৮ টি পদ্ম নিবেদন করার প্রথা চলে আসছে। আর সেই চাহিদা পূরণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন মুসলিম কৃষক শেখ বাবর।
খণ্ডঘোষের কালনার বাসিন্দা শেখ বাবর জানান, তাঁর দাদাই প্রথম পদ্ম চাষ শুরু করেছিলেন। দাদা প্রয়াত হওয়ার পরও পদ্মচাষ থামাননি তিনি। গত ৩০ বছর ধরে একই নিষ্ঠায় তিনি চাষ করে চলেছেন। চৈত্র মাস থেকেই জলাশয় পরিষ্কার করে সার ও ওষুধ ব্যবহার করে পদ্মচাষ শুরু করেন তিনি। কার্তিক মাস পর্যন্ত তিনি ফুল পান। শেখ বাবরের কথায়, “লাভ-লোকসানের হিসেব করি না। দুর্গাপুজোর সময় হিন্দু সমাজের মানুষ আমার কাছে পদ্মফুল পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন, সেটাই আমার তৃপ্তি।”
দুর্গাপুজোর আগেই পদ্মফুলে ভরে ওঠে বাজার। দেবী মহামায়ার আরাধনায় ব্যবহৃত হয় সেই ফুল। বাংলার মিলন-সম্প্রীতির বার্তা বহন করে চলেছেন পদ্মচাষি শেখ বাবর। বাবরের ওখানেই কাজ করেন শ্যাম রায়। জানালেন, প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ ফুল তারা তোলেন। আর এক কর্মী স্বপন বাগদী জানান, রাত আড়াইটা থেকে তিনটায় ফুল তোলা শুরু হয়। কলকাতার মল্লিকবাজারে এইসব ফুল বিক্রি করা হয়। বাবর, শ্যাম, স্বপনদের হাতে তোলা পদ্ম এখন রোজই বাজারের পথে।