ইংরেজিতে ‘ডগস্ লাইফ’-এর অর্থ, শোচনীয় অবস্থা। অনেকে বলছেন, উত্তরপ্রদেশের পথকুকুরদের দশা এ বার তেমনই হবে। কারণ, দু’বার মানুষকে কামড়ালেই তারা পাবে কড়া শাস্তি। সারা জীবনের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা বন্ধ হয়ে যাবে। দু’বার কামড়ানোর শাস্তি, ‘আজীবন কারাদণ্ড’! পথকুকুরের আতঙ্ক দূর করতে এমনই নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার।
পথকুকুর সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশ ঘিরে দেশ জুড়ে চর্চা হয়েছে। যদিও পরে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ খানিক বদলেছে। অন্য দিকে, কুকুরের আক্রমণ বা কামড় নিয়ে বাড়তে থাকা আতঙ্কের মাঝে উত্তরপ্রদেশ সরকার কড়া অবস্থান নিয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘বিনা প্ররোচনায়’ কোনও কুকুর যদি মানুষকে কামড়ায়, সেই কুকুরের ১০ দিনের ‘হাজতবাস’ হবে। মানে ১০ দিন তাকে কোনও পশুকেন্দ্রে আটকে রাখা হবে। একই দোষ দু’বার করলে? একেবারে আজীবন বন্দি!
বন্দিদশা কাটানোর কোনও উপায় আছে? মানুষের মতো জামিনের কোনও বন্দোবস্ত? উত্তরপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, যদি কেউ অপরাধী কুকুরকে পোষ্য নিতে চান, তবেই তার বন্দিদশা ঘুচবে। উত্তরপ্রদেশের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি অমৃত অভিজাতের সই করা নির্দেশাবলী অনুযায়ী, সে রাজ্যের শহর এবং গ্রামীণ এলাকার কোনও বাসিন্দা জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিয়েছেন অথচ সম্প্রতি তাঁকে কুকুরে কামড়েছে, এমন ঘটনার তদন্ত হবে। প্রয়াগরাজ পুরসভার পশুচিকিৎসক বিজয় অমৃত রাজ সংবাদমাধ্যমকে জানান, বেওয়ারিশ কুকুরকে জীবাণুমুক্ত করার লক্ষ্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোনও পথকুকুর কামড়ালে সেটিকে ১০ দিনের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তার আচরণ লক্ষ্য করা হবে। ছেড়ে দেওয়ার আগে একটি মাইক্রোচিপ জুড়ে দেওয়া হবে শরীরে। তাতে সমস্ত বিবরণ থাকবে। এর ফলে পুরসভা তাকে পরে প্রয়োজনে শনাক্ত করতে পারবে। পথকুকুরের কামড় নিয়ে আতঙ্কের জন্য পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার। যদি সংশ্লিষ্ট কুকুর দ্বিতীয় বার কাউকে কামড়ায়, তাকে আজীবন পশুকেন্দ্রে রেখে দেওয়া হবে।
কিন্তু কোনও পথককুর ‘বিনা প্ররোচনায়’ কাউকে কামড়েছে, সেটা ঠিক হবে কী ভাবে? উত্তরপ্রদেশ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, অঞ্চল বা পুরসভায় তিন সদস্যের একটি করে কমিটি গঠিত হবে। তাতে স্থানীয় এক জন পশুচিকিৎসক থাকবেন। এক জন পুরসভা বা অঞ্চলের লোক এবং বাকি এক জন থাকবেন, যাঁর জীবজন্তুদের আচরণ, ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। তাঁরা ঠিক করবেন, কুকুরটি বিনা প্ররোচনায় কাউকে কামড়েছে কি না। যদি দেখা যায়, কেউ ঢিল ছুড়ে মারার পর কুকুরটি গিয়ে তাঁকে কামড়েছে, সে ক্ষেত্রে তা প্ররোচনা বলে বিবেচিত হবে।
অন্য দিকে, দু’বার কামড়ে ‘আজীবন সাজাপ্রাপ্ত’ কোনও কুকুরকে যদি কেউ পোষ্য করতে চান, তাঁকে তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। বাড়ির ঠিকানা, নাম-পরিচয় ইত্যাদি জমা থাকবে প্রশাসনের কাছে।