নেপালের অন্তবর্তী সরকারের মাথায় কে বসবেন? কার নেতৃত্বে এগোবে ভারতের পড়শি দেশ? কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর থেকেই এই প্রশ্নই ঘুরছে নানা মহলে। বিভিন্ন নাম নিয়ে চর্চা চলছে। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে পাল্লা ভারী কাঠমান্ডুর নির্দল মেয়র বলেন্দ্র শাহ ওরফে বলেনের দিকে। তবে বুধবার বুধবার নেপালের ছাত্র-যুব নেতৃত্বের তরফ থেকেই উঠে আসে সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নাম। এমনকি, সুশীলাকে সমর্থন করেন বলেনও! অনেকেই ভেবেছিলেন, অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হচ্ছেন সুশীলাই। কিন্তু বৃহস্পতিবার আলোচনায় উঠে আসে আরও এক জনের নাম। শোনা যায়, প্রাক্তন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কুল মান ঘিসিং নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের হাল ধরুন, এমনটাই চাইছেন গণবিক্ষোভে নেপালের ওলি সরকারকে গদিচ্যুত করা আন্দোলনকারীরা। অর্থাৎ, অন্তবর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে নিজেরাই একমত হতে পারছেন না তাঁরা!
সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঢেউয়ে ভেসে যায় ওলির সরকার। বর্তমানে নেপালের শাসনভার সেনাবাহিনীর হাতে। বুধবার আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেওয়ার পরেই দেশ জুড়ে কার্ফু জারি করে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের চেষ্টা করে সেনা। অবশ্য রাতে কার্ফু শিথিল হয়। বহস্পতিবার সকাল থেকে নেপালে সে ভাবে বড় ধরনের উত্তেজনা বা অশান্তির খবর মেলেনি। তবে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত অশান্তির ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। বিশেষত, নেপালের জেলগুলির নিরাপত্তাই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সে দেশের সেনার। একই সঙ্গে চলছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়াও।
ওলির উত্তরসূরি কে?
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে নেপালের আন্দোলনকারী ‘জেন-জ়ি’ (তরুণ প্রজন্ম)-দের মধ্যেই ‘ফাটল’ দেখা গিয়েছে। আন্দোলন-পর্বে নেপালের ছাত্র-যুবদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের বলেন্দ্র। অস্থির সময়ে তিনিই নেপালের হাল ধরতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই নেপালের আকাশে-বাতাসে ঘুরতে শুরু করে সুশীলার নাম। আন্দোলনকারীদের অনেকেরই পছন্দের তালিকায় ছিলেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরবর্তী প্রধানকে বেছে নিতে বুধবার আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা কাঠমান্ডুতে আলোচনায় বসেছিলেন। অনলাইনে বিভিন্ন জেলা থেকে আন্দোলনকারী নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা ওই আলোচনাসভায় যোগ দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার আলোচনার পরে পাঁচ হাজারেরও বেশি আন্দোলনকারী বেছে নেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সুশীলাকে।
তবে বৃহস্পতিবার আরও এক নাম উঠে আসে আলোচনায়। আন্দোলনকারীদের একাংশ সুশীলাকে নন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে কুল মান ঘিসিংকে চায়। নেপালে বিদ্যুতের দীর্ঘমেয়াদি ঘাটতি দূর করার নেপথ্যে নানা অবদান রয়েছে তাঁর। ১৯৯৪ সালে ঘিসিং দেশের বিদ্যুৎ বোর্ডে যোগ দিয়েছিলেন। তার পর থেকে নেপালের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ বোর্ডের সর্বেসর্বা হন। সে সময় চরম বিদ্যুৎবিভ্রাটে ভুগছিল ভারতের প্রতিবেশী দেশ। কখনও কখনও দিনে ১৮ ঘণ্টাও লোডশেডিং চলত। সেই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বোর্ডের হাল ধরেন ঘিসিং। অনেকেই চান, যে ভাবে নেপালকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এনেছিলেন, তেমনই অস্থির অবস্থায় দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করুন তিনি।
আলোচনায় রাষ্ট্রপতি এবং সেনাপ্রধান
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন, তা বাছতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল এবং সে দেশের সেনাপ্রধান অশোকরাজ সিগডেল। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনও সমাধানসূত্র বার হয়নি। কার নামে সিলমোহর দেওয়া হচ্ছে, তা চূড়ান্ত হয়নি। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন রামচন্দ্র ও অশোকরাজ। কবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের নাম ঘোষণা করা হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে নানা মহলে।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ
সুশীলা না ঘিসিং? আন্দোনলকারীরাই এখন বিভক্ত। বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, আন্দোলনকারীদের মধ্যে দুই সম্ভাব্য প্রধানকে নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। কাঠমান্ডুতে সেনার হেডকোয়ার্টারের বাইরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বলে শোনা যাচ্ছে।
শান্ত থাকার বার্তা রাষ্ট্রপতির
আন্দোলনকারী-সহ দেশবাসীকে এই অস্থির পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার বার্তা দিয়েছেন নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র। তিনি জানান, সমাধান খোঁজার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তবে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা, সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার কথা বলেছেন তিনি।
জেলে অশান্তি
মঙ্গলবার থেকেই নেপালের বিভিন্ন জেলে কয়েদিদের ‘বিদ্রোহ’ শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার আন্দোলনকারীদের একাংশ জেলে ‘হামলা’ চালায়। বন্দিদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের সংঘর্ষের ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। হাজার হাজার বন্দি জেল থেকে পালিয়েছে। তাঁদের খোঁজে দেশ জুড়ে অভিযানও চলছে।
নেপালের কয়েদিই ভারতের মাথাব্যথা
অগ্নিগর্ভ নেপালে জেল ভেঙে পালিয়েছেন হাজার হাজার বন্দি! তাঁদের অনেকেই বিহার, উত্তরপ্রদেশের সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েছেন বলে খবর মিলেছে। নেপালের কয়েদিরা যাতে ভারতে প্রবেশ করতে না পারে সেই জন্য সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে ভারত সরকার। চলছে ধরপাকড়ও। সীমান্তে ইতিমধ্যেই ৩০ জনকে পাকড়াও করেছে সীমা সুরক্ষা বল (এসএসবি)। এই পরিস্থিতিতে বাংলার পানিট্যাঙ্কি সীমান্তেও কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নেপালে আটকে থাকা ভারতীয়েরা ধীরে ধীরে পানিট্যাঙ্কি সীমান্ত দিয়ে ফিরতে শুরু করেছেন। সকলের চোখেমুখেই আতঙ্কের ছাপ। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত শতাধিক মানুষ সীমান্ত পারাপার করেছেন। প্রত্যেকের পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখেই ভারতে প্রবেশের ছাড়পত্র দিয়েছে এসএসবি। এ ছাড়াও জরুরি ভিত্তিতে তেলের ট্যাঙ্কার ও সব্জির বেশ কয়েকটি ট্রাক নেপাল থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ট্রাক চালকেরা।