‘লিপুলেখ আর রামজন্মভূমির মাসুল দিতে হল’, নেপালের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়ে ওলি এ বার নিশানা করলেন ভারতকে

কাঠমান্ডুর কুর্সিতে তাঁর আগের মেয়াদে উত্তরাখণ্ডের তিন ভারতীয় এলাকার ‘দখল নিয়েছিল’ নেপাল! রামজন্মভূমি অযোধ্যাকে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছিল নেপালের মানচিত্রে! জেন জ়ির প্রবল আন্দোলনের অভিঘাতে প্রধানমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে এ বার সেই ভারতকেই দুষলেন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল) নেতা কেপি শর্মা ওলি। দাবি করলেন, সংবেদনশীল বিষয়ে নয়াদিল্লিকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস দেখানোর কারণেই তাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হল।

প্রধানমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পরে ওলি গণবিক্ষোভের আঁচ এড়াতে শিবপুরী সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছেন বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি। সেখান থেকেই দলের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর পোখরেলকে পাঠানো চিঠিতে ওই দাবি করেছেন বলে প্রকাশিত খবরগুলিতে জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, ওলির উদ্যোগেই ২০২০ সালের জুন মাসে নেপাল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভস’ (প্রতিনিধি সভা)-এ পাশ হয়েছিল নয়া মানচিত্র অনুমোদনের সংবিধান সংশোধনী বিল। নয়াদিল্লির আপত্তি উড়িয়ে তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ভারতীয় এলাকা লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখকে।

চিন অধিকৃত তিব্বত লাগোয়া উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলার ওই তিনটি অঞ্চল সামরিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বহু বছর ধরেই লিপুলেখ গিরিপথ কৈলাস ও মানস সরোবরের তীর্থযাত্রীরা ব্যবহার করেন। ২০২০ সালের গোড়ায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ নবনির্মিত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ তাওয়াঘাট-লিপুলেখ সড়কের উদ্বোধন করেছিলেন। বস্তুত, এর পরেই নেপালের তরফে ‘তৎপরতা’ শুরু হয়েছিল। যার নেপথ্যে চিনের ‘ভূমিকা’ ছিল বলে সে সময় কয়েকটি আন্তর্জাতিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল।

সে বছরের ৩১ মে সে দেশের আইনমন্ত্রী শিবমায়া তুম্বাহাম্পি হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভে মানচিত্র-বদল বিলের খসড়া পেশ করেন। ওই বিলটি পেশ হওয়ার কয়েক দিন আগে হাউসের সদস্য তথা নেপালের রাজনীতিতে ‘ভারতবন্ধু’ হিসেবে পরিচিত সরিতা গিরি একটি সংশোধনী প্রস্তাব জমা দিয়েছিলেন। তাতে একতরফা ভাবে মানচিত্র বদলের পরিবর্তে উত্তরাখণ্ড সীমান্তের ওই তিনটি ‘বিতর্কিত’ অঞ্চল নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এর পরে তরাই নেপালের ওই নেত্রীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে তছনছ করেছিলেন ওলি সমর্থকেরা। বিল পাশ হওয়ার পরে কাঠমান্ডুর পদক্ষেপকে ‘অযৌক্তিক, অসমর্থনযোগ্য এবং অ-ঐতিহাসিক’ বলে অভিযোগ করেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। পাশাপাশি বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, “আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। ১৯৫৪ সালে লিপুলেখ পাস ধরে ভারত এবং চিনের মধ্যে সীমান্তবাণিজ্য শুরু হয়। কয়েক দশক ধরে তা চলেছে। কোভিড এবং‌ অন্য কয়েকটি কারণে সম্প্রতি তা স্থগিত ছিল।” নেপালের আপত্তি যে ভারত মানবে না, তা-ও কার্যত স্পষ্ট করে দেওয়া হয় ওই বিবৃতিতে।

২০২০ সালেরই জুলাই মাসে ওলি দাবি করেছিলেন রামজন্মভূমি অযোধ্যার অবস্থান আদতে নেপালে। তিনি বলেছিলেন, “রাম এক জন নেপালি। ভারতে নয়, রামের আসল জন্মভূমি অযোধ্যাও নেপালে। কাঠমাণ্ডুর কাছে সেই ছোট্ট গ্রাম অযোধ্যা। সেখানেই জন্ম হয়েছিল রামের।” ওলির সেই মন্তব্য ঘিরে সে সময় নয়াদিল্লি-কাঠমান্ডু টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল। শুধু তাই নয়, অতিমারি-পর্বে নেপালে করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য ভারতকে দায়ী করেছিলেন নেপালের ওই কমিউনিস্ট নেতা। সেই সঙ্গে বলেছিলেন, “চিনা এবং ইতালীয় ভাইরাসের থেকে ভারতের ভাইরাস অনেক বেশি মারাত্মক।” যদিও কোভিড-১৯-এর ‘উৎস’ চিন সম্পর্কে নীরব ছিলেন তিনি। নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদককে লেখা চিঠিতে ‘চিনপন্থী’ ওলির আক্ষেপ, বিতর্কিত ভূখণ্ড লিপুলেখ নিয়ে প্রশ্ন না তুললে তিনি এখনও প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতেন। সেই সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘‘অযোধ্যায় রামের জন্মের বিরোধিতা করার কারণে আমি ক্ষমতা হারিয়েছি।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.