গত পাঁচ বছরে কোন কোন ছাত্রছাত্রীকে সরকারি বৃত্তি (স্কলারশিপ) দেওয়া হয়েছে, স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়কে সেই তালিকা দিতে বলল কলকাতা হাই কোর্ট। ২০২০-২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রত্যেক বৃত্তিপ্রাপকের তথ্য পুলিশের কাছে দিতে হবে। বুধবার এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। আদালতের নির্দেশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে তথ্য চেয়ে পুলিশ যে নোটিস পাঠিয়েছে, তাতে হাই কোর্ট হস্তক্ষেপ করবে না। স্কলারশিপ বেনিয়ম তদন্তে প্রয়োজনে ওই সকল তথ্য দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে।
গত মে মাসে ব্যারাকপুরের ‘রিস্ট’ কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা হয়। ওই পরীক্ষায় ব্যাপক নিয়মের অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগেই ফাঁস করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে আসে। পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা ছাত্রদের হয়ে প্রশ্নের উত্তর লিখে দিয়েছেন, এমনটাও অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় মোহনপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে শুধু পরীক্ষা নয় সরকারি বৃত্তির ক্ষেত্রেও বেনিয়ম হয়েছে। ওই কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় একই ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত। তাই বেনিয়মের তদন্তে বৃত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গত পাঁচ বছরের তথ্য জানা দরকার। সেই মর্মে তথ্য চেয়ে পুলিশ নোটিস পাঠিয়েছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে।
পুলিশের নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের যুক্তি, ওই কলেজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় নিজে কোনও স্কলারশিপ বা বৃত্তি দেয় না। তারা শুধু ছাত্রদের আবেদন যাচাই করে সরকারকে পাঠিয়ে দেয়। সরকার বৃত্তির টাকা সরাসরি পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠায়। তাই সব তথ্য সরকারের কাছেই রয়েছে। পাল্টা রাজ্যের পক্ষ থেকে আইনজীবী সুমন সেনগুপ্তের সওয়াল, তদন্তে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বৃত্তির টাকায় বেনিয়ম হয়েছে। একই ট্রাস্টের অধীনে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে তাদের কাছে তথ্য অবশ্যই রয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশের এই ধরনের নোটিস পাঠানোর ক্ষমতা রয়েছে।
এই মামলায় বিচারপতি ঘোষের পর্যবেক্ষণ, তদন্ত বা বিচারের কাজে প্রয়োজনীয় নথি বা প্রমাণ সংগ্রহ করা পুলিশের কাজ। সেই ক্ষমতা পুলিশ ও আদালত উভয়ের হাতেই রয়েছে। পুলিশের কাজে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। এই মামলায় পুলিশের হাতে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। আদালত তদন্তে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে চায়। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি।