চুপ করে থাকেননি নীতীশ রানা। দিল্লি প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ চলাকালীন মাঠেই দিগ্বেশ রাঠীর সঙ্গে বিবাদে জড়ান তিনি। কেন হয়েছিল সেই বিবাদ? কেন দিগ্বেশের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল তাঁর? সেই বিষয়ে মুখ খুললেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রাক্তন অধিনায়ক।
ম্যাচের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নীতীশ জানান, তিনি গন্ডগোল শুরু করেননি। কিন্তু কেউ যদি তাঁকে বার বার খোঁচা মারতে থাকেন তা হলে তিনি চুপ করে বসে থাকবেন না। নীতীশ বলেন, “কে ঠিক, কে ভুল সেটা আসল নয়। ও দলকে জেতাতে নেমেছিল। আমিও তাই। কিন্তু খেলাটাকে তো সম্মান দেখাতে হবে। ও গন্ডগোল শুরু করেছিল। কেন, কী ভাবে হয়েছিল সেই বিতর্কে ঢুকব না। কিন্তু কেউ যদি বার বার খোঁচা মারে তা হলে কি চুপ করে বসে দেখব?”
নীতীশ জানিয়েছেন, তিনি প্রথমে কাউকে কিছু বলতে যান না। কিন্তু যদি কেউ তাঁর সঙ্গে ঝামেলা করতে চান, তা হলে তিনি চুপ করেও থাকেন না। নীতীশ বলেন, “আমি এ ভাবেই সারা জীবন ক্রিকেট খেলেছি। আমি কারও সঙ্গে বিতর্কে জড়াতে চাই না। কিন্তু কেউ যদি আমাকে খোঁচা মারে, আমাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে, তা হলে আমিও ছক্কা মেরে তার জবাব দেব। ব্যাটের পাশাপাশি মুখেও জবাব দেব। ম্যাচে সেটা করেও দেখিয়েছি।”
বিবাদ শুরু হওয়ার পর অনেক ক্ষণ তা চলে। পরে বাকিরা মধ্যস্থতা করেন। নীতীশ জানিয়েছেন, কী ভাবে বিবাদ মিটবে সেটা তাঁর হাতে ছিল না। নীতীশ বলেন, “যে বিবাদ শুরু করেছে সেই থামাবে। মাঠে আমি অনেক বার ঝামেলায় জড়িয়েছি। কিন্তু কোনও দিন আমি তা শুরু করিনি। কেউ কিছু বললে তার জবাব দিয়েছি। আমার বাবা-মা আমাকে শিখিয়েছে, যদি তুমি ভুল না করো, তা হলে সব সময় নিজের জন্য লড়বে। সেটাই করেছি। ভবিষ্যতেও করব।”
দিল্লি প্রিমিয়ার লিগের এলিমিনেটর ম্যাচে শুক্রবার মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট দিল্লি লায়ন্স এবং সাউথ দিল্লি সুপারস্টার্জ়। চড়া মেজাজের ম্যাচে একাধিক বার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রথমে ব্যাট করে সাউথ দিল্লি করে ৫ উইকেটে ২০১ রান। জয়ের জন্য ২০২ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নামে ওয়েস্ট দিল্লি। ২১ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর চার নম্বরে ব্যাট করতে নামেন ওয়েস্ট দিল্লির অধিনায়ক নীতীশ। তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সামনে দিশাহারা হয়ে পড়েন সাউথ দিল্লির বোলারেরা। নীতীশের মনঃসংযোগ নষ্ট করার চেষ্টা করেন সাউথ দিল্লির স্পিনার দিগ্বেশ। নিজের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে দিগ্বেশ রান আপ সম্পূর্ণ করেও হাত থেকে বল ছাড়েননি। ব্যাটার নীতীশ কিছু বলেননি। শ্যাডো সুইপ শট খেলেন। দ্বিগেশ পরের বল করতে এলে শেষ মুহূর্তে উইকেট থেকে সরে যান নীতীশ। এ বারও দিগ্বেশ হাত থেকে বল ছাড়েননি। এর পর সাউথ দিল্লির স্পিনারের উদ্দেশে কিছু বলেন নীতীশ। এর পরের বলে দিগ্বেশকে রিভার্স সুইপ করে ছয় মারেন নীতীশ।
এর পরই দুই ক্রিকেটারের বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়। দু’জনকেই পরস্পরের উদ্দেশে কিছু বলতে দেখা যায়। আগ্রাসী ভাবে দু’জনে পরস্পরের দিকে তেড়ে যান। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে আন্দাজ করে ছুটে আসেন দু’দলের ক্রিকেটার এবং আম্পায়ারেরা। দু’জনকে দু’দিকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন তাঁরা। তাঁদের ঝামেলার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে।
শুক্রবারের ম্যাচে প্রথম থেকেই ছিল উত্তেজনা। নীতীশের দলের উইকেট রক্ষক-ব্যাটার কৃষ যাদবও ঝামেলায় জড়ান সাউথ দিল্লির জোরে বোলার আমন ভারতীর সঙ্গে। ওয়েস্ট দিল্লির ইনিংসের ১১তম ওভারের প্রথম বলে ছয় মারার চেষ্টা করেন কৃষ। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ ধরেন আনমোল শর্মা। কৃষ আউট হতেই তাঁর উদ্দেশে কিছু একটা বলেন আমন। পাল্টা জবাব দেন কৃষও। উত্তপ্ত হঠে পরিস্থিতি। সাউথ দিল্লির ক্রিকেটারেরা প্রায় ঘিরে ধরেন কৃষকে। আম্পায়ারেরা এবং কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রাক্তন অধিনায়ক এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। এই ঘটনার ভিডিয়োও ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে।
এই ম্যাচে ৫৫ বলে ১৩৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দিয়েছেন নীতীশ। ৮টি চার এবং ১৫টি ছয় মেরেছেন তিনি। নীতীশের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সুবাদে ১৭.১ ওভারে ৩ উইকেটে ২০২ রান তুলে নেয় ওয়েস্ট দিল্লি। এই ম্যাচে বল হাতে সাফল্য পাননি দিগ্বেশ। ২ ওভার বল করে ৩৯ রান দেন তিনি। তার মধ্যে নীতীশ একাই ১১ বলে ৩৮ রান করেছেন।
দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারেও ব্যাট হাতে সফল নীতীশ। ইস্ট দিল্লি রাইডার্সের বিরুদ্ধে ১৪০ রান তাড়া করতে নেমে ২৬ বলে ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। দলকে ফাইনালে তুলেছেন নীতীশ। সেখানে তাঁদের মুখোমুখি সেন্ট্রাল দিল্লি কিংস।
গত আইপিএলেও লখনউ সুপার জায়ান্টের দিগ্বেশ তাঁর ‘নোটবুক’ উচ্ছ্বাসের জন্য বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) তাঁকে একাধিক বার জরিমানা করে। একটি ম্যাচের জন্য নিলম্বিত (সাসপেন্ড) হতে হয় ২৫ বছরের স্পিনারকে। তার পরও তিনি নিজের উচ্ছ্বাসের ভঙ্গি পরিবর্তন করেননি। আরও এক বার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।