বাবা বিশ্বনাথ সাহা তাঁকে ‘বংশের কলঙ্ক’ বলেছেন। তাঁর সব সম্পত্তি বেআইনি বলেও দাবি করেছেন। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির হাতে ধৃত বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা আদালত চত্বরে শনিবার জানালেন, তাঁর বাবা কেন এই কথা বলেছেন, তা তিনি জানেন না! তবে তিনি ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। তাঁদের ‘টার্নওভার’ কোটি কোটি টাকা বলেও দাবি করেছেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবন। প্রসঙ্গত, জীবনের সঙ্গে তাঁর বাবার ‘সুসম্পর্ক’ সর্বজনবিদিত। শনিবার আদালত চত্বরে ইডির হাতে গ্রেফতারি নিয়েও মুখ খুলেছেন তৃণমূল বিধায়ক।
শনিবার জীবনের ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাঁর পরে তাঁকে বিচারভবনে ইডির বিশেষ আদালতে শনিবারই হাজির করানো হয়। আদালত ইডির আর্জি মেনে তাঁকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। শনিবার আদালত চত্বরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ব্যবসায়ী পরিবারের লোকজন। আমাদের টার্নওভার দু’কোটি টাকা। বাবা কেন বলেছে জানি না। সেটা বাবার ব্যাপার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি প্রথম থেকে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। রেশন বিলি, চালকলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। আমরা বনেদি বংশের।’’
কী বলেছিলেন জীবনের বাবা বিশ্বনাথ? তিনি জানিয়েছিলেন, জীবনের জামিন (সিবিআইয়ের মামলায়) পাওয়াই উচিত হয়নি। তাঁর দাবি, জীবনের বিপুল সম্পত্তির সবটাই ‘অসৎ পথে’ উপার্জন করা হয়েছে। সেই সম্পত্তির সঙ্গে তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনও সম্পর্ক নেই। জীবনকে ‘বংশের কলঙ্ক’ বলতেও দ্বিধা করেননি বিশ্বনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণ পরিবারের ছেলে জীবন। আর পাঁচ জন সাধারণ ঘরের ছেলের মতো তাঁর বেড়ে ওঠা। তার পর ধীরে ধীরে রাজনীতি জগতে পা দেয়। প্রথমে রাজনীতির মঞ্চকে সাধারণ মানুষের সেবা হিসাবেই দেখত ও। তবে ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে বদলে যায় সব ছবি।’’ বিশ্বনাথের অভিযোগ, হাতে ক্ষমতা আসার পর পরই বদলে যান জীবন। অযথা ক্ষমতার দাপট দেখানো, দুর্নীতি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাঁর। ভয় দেখিয়ে একের পর এক জমি দখলের নেশায় মেতে ওঠেন জীবন। শুধু বাইরের লোকের জমি নয়, পারিবারিক সম্পত্তিও গ্রাস করা শুরু করেন। এমনই দাবি বিশ্বনাথের। এই প্রসঙ্গেই জীবন শনিবার নিজের পরিবারের সমৃদ্ধির কথা প্রকাশ করেন।
২০২৩ সালে সিবিআইয়ের হাতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন জীবন। সুপ্রিম কোর্টে তিনি জামিন পান। গত ২৫ অগস্ট ইডির হাতে আবার গ্রেফতার হন তিনি। এটা কি ষড়যন্ত্র? আদালত চত্বরে জীবন বলেন, ‘‘আমার ধারণা ছিল, যে জামিন (সিবিআইয়ের মামলায়) পাওয়ার পরে ইডি হেফাজতে নেবেই। কারণ সিবিআইয়ের হেফাজত থেকে বার হওয়ার পরে কাউকে ছাড়েনি (ইডি)। আমি ষড়যন্ত্র নিয়ে কিছু বলব না। তদন্তে সহযোগিতা করেছি।’’
অভিযোগ, ইডি হানা দিতেই বাড়ির পিছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা করেন জীবন। প্রায় ১০০ মিটার দৌড়নোর পরে তাঁকে ধরে ফেলেন তদন্তকারীরা। এই প্রসঙ্গে তিনি শনিবার বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ৭টায় হঠাৎ যদি ইডি যায় তা হলে কী করব? আমি বিধায়ক। পালাব নাকি!’’
জীবন এবং তাঁর স্ত্রী টগরি সাহার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেশ কয়েক দফায় ৪৬ লক্ষেরও বেশি টাকা জমা পড়েছে, যা সন্দেহজনক বলে মনে করছে ইডি। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি জমা পড়েছে টগরির অ্যাকাউন্টে, প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা। মাত্র চার মাসে (২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে) এই টাকা জমা পড়েছে টগরির অ্যাকাউন্টে বলে অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে জীবন বলেন, ‘‘স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে যে টাকা রয়েছে, সেটা সাত বছরের। ভিডিয়ো ভুয়ো। অনেক কিছু বানানো হবে। আমরা তো বিধায়ক।’’