বঙ্গ বিজেপির অন্যতম প্রধান মহিলা মুখ তিনি। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যেও অন্যতম। তবে গত শুক্রবার দমদমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কর্মসূচিতে দেখা মেলেনি সেই লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। ওই কর্মসূচিতে ছিলেনই না তিনি। শোনা যাচ্ছে, হুগলির প্রাক্তন সাংসদকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, লকেটকে না দেখতে পেয়ে মঞ্চ থেকেই তাঁকে ফোন করেছিলেন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। দলের অপর একটি সূত্রের দাবি, শুক্রবার মোদীর কর্মসূচিতে ‘চোখে পড়ার মতো’ কিছু গরহাজিরার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকেও খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।
বিজেপির সাম্প্রতিক বিভিন্ন বড় কর্মসূচিগুলিতে সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক এলাকার নেতানেত্রীদের ডাকা হচ্ছে। তবে লকেট কোনও নির্দিষ্ট এলাকার নেত্রী নন, তিনি দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে অন্যতম। সাধারণত, এ ধরনের বড় কর্মসূচিতে রাজ্য সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সংগঠন সম্পাদকদের মতো রাজ্যস্তরের সর্বোচ্চ নেতাদের সকলের আমন্ত্রণ থাকে। সে ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে দমদমের সভায় লকেটেরও ডাক পাওয়ার কথা ছিল। বঙ্গ বিজেপিতে বর্তমানে পাঁচ জন সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। লকেট ছাড়াও এই পদে রয়েছেন অগ্নিমিত্রা পাল, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো এবং দীপক বর্মণ। গত মাসে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে মোদীর কর্মসূচিতে পাঁচ সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে লকেট-সহ চার জনই উপস্থিত ছিলেন। শুধু উত্তরবঙ্গের নেতা দীপক দুর্গাপুরের ওই কর্মসূচিতে ছিলেন না।
তবে এ বার, শুক্রবারের কর্মসূচিতে পাঁচ জনের মধ্যে দেখা মিলল শুধুমাত্র জগন্নাথের। প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির দু’দিন আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন অগ্নিমিত্রা। বুধরাত শেষ রাতের দিকে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে থাকায় তিনি মোদীর সভায় যেতে পারেননি। কিন্তু তিনি ও জগন্নাথ ছাড়াও রাজ্য বিজেপিতে আরও তিন সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। তাঁদের কাউকে দমদমের মঞ্চে দেখা যায়নি।
বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, শুক্রবার দমদমে মোদীর কর্মসূচিতে লকেটদের দেখতে না পেয়ে খোঁজখবর নেন রাজ্য সভাপতি শমীক। মঞ্চ থেকে ফোনও করেন লকেটকে। ওই সূত্রের দাবি, তখনই লকেট শমীককে জানিয়ে দেন, তাঁর কাছে কোনও ডাক আসেনি। সাধারণত, বিজেপি এবং সঙ্ঘ উভয় ক্ষেত্রেই কর্মসূচিগুলিতে একটি প্রথা প্রচলিত রয়েছে— ‘যাহাঁ অপেক্ষিত, ওয়াহাঁ উপস্থিত’ (যেখানে উপস্থিতি প্রত্যাশিত, সেখানেই উপস্থিতি)। এমন অবস্থায় যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁর কাছে কোনও বার্তা যায়নি, তাই তিনি হাজির হননি। শমীককে লকেট এমনই জানান বলে সূত্রের দাবি। তবে দু’জনের কেউ-ই প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
হুগলির প্রাক্তন সাংসদ তথা বঙ্গ বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক লকেট আনন্দবাজার ডট কমকে সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়েছেন, “আমার ওখানে থাকার কথা ছিল না। অন্য বৈঠকের দায়িত্ব দেওয়া ছিল। আমি সেটাই করছিলাম।” তবে কেন থাকার কথা ছিল না, ডাক পাননি বলে যেতে চাননি কি না, এ সব ব্যাখ্যায় আর লকেট যেতে চাননি। প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের দিনই তাঁকে কেন অন্য বৈঠকের দায়িত্ব দেওয়া হল, সে প্রসঙ্গেও যেতে চাননি বিজেপি নেত্রী।
বিজেপির অপর একটি সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকেও এই বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। দমদমে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যে সব অনুপস্থিতি ‘চোখে পড়ার মতো’ ছিল, সেগুলির বিষয়ে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে বলে বিজেপির ওই সূত্রের দাবি। যদিও এ বিষয়ে রাজ্য সভাপতি শমীকের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে এত জল্পনা, সেই লকেটও এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।