ভগবানকে চোর বলা যায়? যায় না। তাই শ্রীকৃষ্ণকে ‘মাখনচোর’ বলা যাবে না। ‘ভগবান’-এর নামে নানা ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্যের বিরোধিতা করে এমনই দাবি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবের। তার পরেই শ্রীকৃষ্ণের ‘ভাবমূর্তি’ উদ্ধারে ‘সংস্কারী উদ্যোগ’ নিল মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার। পাল্টা বিরোধীরা কটাক্ষ করলেও গায়ে মাখছে না সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী মোহনের দাবি, কৃষ্ণের ননী চুরির অর্থ পূরাণে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের। কোনও জায়গায় বলা হচ্ছে, তিনি সব সময় সাদা। মাখন বা ননীর রং যেমন সাদা বা শুভ্র, তেমনই তাঁর হৃদয়ও দাগহীন, নির্ভেজাল এবং স্বচ্ছ। মন থেকে রাগ, অহঙ্কার, ঘৃণা, হিংসা, লোভ, অহং ইত্যাদি দূর করার প্রতীকী রূপ ননী চুরি। কিন্তু আজকালকার ছেলেপুলেরা না-বুঝে হাঁড়ি ভাঙার প্রচলনে অংশ নিচ্ছে। মধ্যপ্রদেশ সরকারের পরিকল্পনা, পাঠ্যপুস্তকেই এই বিষয়গুলোর বিশদ ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সে সব নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। পাশাপাশি, সংস্কৃতি দফতরও বেশ কিছু পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
গত ১৬ অগস্ট জন্মাষ্টমী উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন। সেখানেই তিনি দাবি করেন, শ্রীকৃষ্ণকে ‘মাখনচোর’ বলা যাবে না। এই মর্মে রাজ্যে প্রচারও শুরু করতে বলেছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘ভগবানকে আবার চোর বলা যায় নাকি!’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মাখনের হাঁড়ি ভাঙা চুরি নয়। এটা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে কৃষ্ণের প্রতীকী প্রতিবাদ। সেই সময়ে হাজার হাজার গরুর দুধ থেকে মাখন তৈরি করে মথুরায় পাঠানো হত। মথুরার রাজা তখন কংস। মাখনের হাঁড়ি ভেঙে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন কৃষ্ণ। গোপাল (কৃষ্ণের অষ্টশত নামের একটি) রাখালদের উদ্দেশে বলেছিলেন, তোমরা মাখন খেয়ে নাও। তার পর হাঁড়ি ভেঙে ফেলো। কিন্তু মনে রেখো, একটা হাঁড়িও যেন শত্রুদের হাতে না যায়।’’ মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, কৃষ্ণ বর্ধিষ্ণু পরিবারের সন্তান ছিলেন। চুরি করার কোনও দরকার ছিল না তাঁর।
মুখ্যমন্ত্রী মোহনের এই ব্যাখ্যার পরে নড়েচড়ে বসেছে মধ্যপ্রদেশের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। কৃষ্ণ সম্পর্কে ‘সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি’ আনতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা শ্রীরাম তিওয়ারি বলেন, ‘‘সাধুসন্তরাও ‘মাখনচোর’ শব্দে আপত্তি করেন। শ্রীকৃষ্ণকে এই নামে ডাকা চলে না।’’ তিনি জানিয়েছেন, সন্ন্যাসী, পুরোহিত থেকে গল্পকারেরা কৃষ্ণকে নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা করতে হাজির হবেন সাধারণ মানুষের কাছে। এর মধ্যে মোহনের সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ভগবত গীতার ‘সাম্প্রতিক সংস্করণ’ আনার জন্য অধস্তনদের নির্দেশ পাঠিয়েছেন বলে খবর।
এখানেই শেষ নয়। জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে মোহন সরকার মধ্যপ্রদেশের ৩২২২টি মন্দিরে একটি সমীক্ষা শুরু করেছে। লক্ষ্য, শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে সম্বন্ধ থাকা মন্দিরগুলিকে খুঁজে বার করা।
অন্য দিকে, মধ্যপ্রদেশ সরকারের এ হেন উদ্যোগ এবং মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যাকে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস। মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার বিরোধী নেতা উমঙ্গ সিঙ্গারের দাবি, যাদবরাই কৃষ্ণের জীবনকাহিনী বদলের চেষ্টা করেছিলেন। এখন সেই কাজ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘মোহন যাদব তাঁর মতো করে ইতিহাস রচনা করতে চান। শতকের পর শতক কৃষ্ণের নানা কর্মকাণ্ড উদ্যাপন করেন ভক্তেরা। তাঁকে আদরের নাম দেওয়া হয়। এখন কি সনাতন ধর্ম নিয়ে নতুন গল্প লিখবেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী?’’