শুল্কযুদ্ধে ভারতের পাশে আছে চিন। আমেরিকার চাপানো ৫০ শতাংশ শুল্কের বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবার এমনটাই জানালেন ভারতে চিনের রাষ্ট্রদূত শু ফেইহং। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘চুপ করে থাকলে মস্তানি বেড়ে যায়’। মনে করা হচ্ছে, আমেরিকার উদ্দেশেই এই বার্তা দিয়েছেন চিনা রাষ্ট্রদূত।
সম্প্রতি দু’দিনের ভারত সফরে এসেছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। বুধবারই সেই সফর শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। চলতি বছরের শেষে মোদীকে চিনে আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার চিনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘আমেরিকা ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। আরও শুল্কের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। চিন কঠোর ভাবে এর বিরোধিতা করছে। চুপ করে থাকলে মস্তানি আরও বে়ড়ে যায়। চিন ভারতের পাশে আছে।’’ চিন এবং ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সমগ্র এশিয়ার উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন চিনা রাষ্ট্রদূত। তাঁর কথায়, ‘‘এত বড় দুটো প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংহতি, সহযোগিতা থাকা খুব প্রয়োজন। তাতে উন্নতির পথ প্রশস্ত হয়। চিন আর ভারতের বন্ধুত্বে এশিয়া মহাদেশের লাভ। এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতির ‘ডবল ইঞ্জিন’ আমরা। আমাদের সংহতি আসলে সারা বিশ্বের জন্য লাভজনক।’’
দুই দেশের মধ্যে সন্দেহের বাতাবরণ সরিয়ে ভরসা ও বিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি করা দরকার, মনে করেন বেজিঙের প্রতিনিধি। তাঁর কথায়, ‘‘দুই দেশই বন্ধু, শত্রু তো নয়। তাই কোনও সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে তা মিটিয়ে নেওয়া উচিত। কৌশলগত উন্নয়ন এবং সহযোগিতার পরিধি বৃদ্ধির জন্য আমরা ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। চিনের বাজারে সকল ভারতীয় পণ্যকে স্বাগত।’’
উল্লেখ্য, ভারত এবং চিন, উভয়েই রাশিয়া থেকে খনিজ তেল কেনে। যাতে আপত্তি জানিয়েছে আমেরিকা। রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চিন। তাদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ওয়াশিংটন কোনও পদক্ষেপ করেনি। তবে রাশিয়ার তেল কেনার ‘অপরাধে’ ভারতকে ‘জরিমানা’ করা হয়েছে। চাপানো হয়েছে ৫০ শতাংশ বাড়তি শুল্কের বোঝা। তার মধ্যে ২৫ শতাংশ ইতিমধ্যে কার্যকর হয়ে গিয়েছে। আরও ২৫ শতাংশ কার্যকর হওয়ার কথা ২৭ অগস্ট থেকে। রাশিয়ার তেল কিনলেও কেন চিন বা অন্য কোনও দেশের পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করল না আমেরিকা? ভারতকেই কেন বেছে নেওয়া হল? প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট। আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই বাণিজ্যনীতি স্থির করা হয় বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। রাশিয়ায় গিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেখান থেকেও তিনি জানান, এ বিষয়ে আমেরিকার যুক্তিতে তাঁরা ‘হতবাক’। এ বার সেই শুল্ক নিয়ে লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিল বেজিং।