দেড় বছর পর ডার্বির রং লাল-হলুদ, জোড়া গোলে দিয়ামানতাকোস নায়ক, মোহনবাগানকে হারিয়ে ডুরান্ডের সেমিতে ইস্টবেঙ্গল

কোথায় মোহনবাগানের রক্ষণ? কোথায় বিশ্বকাপার জেমি ম্যাকলারেন? কোথায় মাঝমাঠে আপুইয়া, সাহাল আব্দুল সামাদ, লিস্টন কোলাসোর মতো তারকা দেশীয় ফুটবলারেরা? বহু দিন পর ডার্বিতে এতটা আধিপত্য দেখাল ইস্টবেঙ্গল। গোটা ম্যাচ জুড়ে খুঁজে পাওয়া গেল না মোহনবাগানকে। যোগ্য দল হিসাবে দাপট দেখিয়ে জিতল লাল-হলুদ। দেড় বছর পর বড়দের ডার্বিতে মোহনবাগানকে হারাল ইস্টবেঙ্গল। জোড়া গোল করলেন দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস। ২-১ গোলে জিতে ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে উঠল তারা। সেখানে তাদের অপেক্ষা করছে বাংলারই দল ডায়মন্ড হারবার।

ডুরান্ডের ডার্বির আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজ়ো জানিয়েছিলেন চমকের কথা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, গত বারের থেকে ভাল খেলবে তাঁর দল। সেই চমক সত্যিই দেখালেন ব্রুজ়ো। ঠিক যে যে জায়গায় গত বার ইস্টবেঙ্গলের সমস্যা হয়েছিল, সেই সব জায়গা ভরাট করেছেন তিনি। প্রান্ত ধরে বিপিন সিংহের মতো গতিশীল ফুটবলার এনেছেন। রক্ষণে আনোয়ার আলির সঙ্গে জুড়েছেন কেভিন সিবিলেকে। মিগুয়েল ফিগুয়েরা, হামিদ আহদাদের মতো বিদেশি এসেছে দলে। তাতেই বদলে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল।

রবিবার খেলার শুরু থেকেই প্রাধান্য ছিল ইস্টবেঙ্গলের দখলে। একটা চালে মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনার দলের উপর চাপ বাড়িয়ে দেন ব্রুজ়ো। তিনি জানতেন, মাঝমাঠের দখল নিতে হবে। সেটাই করলেন লাল-হলুদ ফুটবলারেরা। মহেশ নাওরেম সিংহ, মিগুয়েল, সাউল ক্রেসপোরা একে অপরের কাছাকাছি ছিলেন। ছোট ছোট পাসে খেলছিলেন। সেখানেই চাপ হল বাগানের। আপুইয়া, অনিরুদ্ধ থাপা, সাহালদের মধ্যে দূরত্ব ছিল বেশি। ফলে মাঠমাঠে বল ধরে আক্রমণ হচ্ছিল না। প্রথম ২০ মিনিট লাল-হলুদ ফুটবলারদের পায়েই বল ছিল। দু’বার কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বাগান গোলের সামনে। কিন্তু গোল হয়নি।

মোলিনা গোলের জন্য শুরু থেকে ভরসা রেখেছিলেন ম্যাকলারেনের উপর। কিন্তু এই ম্যাচে খুঁজে পাওয়া গেল না তাঁকে। যে কয়েক বার বল পেলেন, আনোয়ার ও সিবিলে তাঁকে বোতলবন্দি করে রাখলেন। ডুরান্ডে বাগানের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন লিস্টন। তাঁকে থামাতেও জোড়া ফুটবলার রাখলেন ব্রুজ়ো। মহম্মদ রাকিপের ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কখনও বিপিন, কখমও এডমুন্ড লালরিন্ডিকা যোগ দিচ্ছিলেন। ফলে বার বার থমকে যাচ্ছিলেন লিস্টন। তাঁর সেই পরিচিত খেলা দেখা গেল না।

১৫ মিনিটের মাথায় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ইস্টবেঙ্গলের স্ট্রাইকার হামিদ আহদাদকে। বাধ্য হয়ে দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোসকে নামান ব্রুজ়ো। সেটা শাপে বর হয়ে দাঁড়াল। ৩৫ মিনিটের মাথায় বিপিনকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেন আশিস রাই। পেনাল্টি পায় লাল-হলুদ। ঠান্ডা মাথায় গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন দিয়ামানতাকোস। প্রথমার্ধের শেষ দিকে আপুইয়ার দূরপাল্লার শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধে সেটাই বাগানের সবচেয়ে ভাল প্রয়াস।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই জেসন কামিংসকে নামিয়ে দেন বাগান কোচ মোলিনা। কামিংস নেমেই সুযোগ তৈরি করেন। বক্সের মধ্যে তিনি অরক্ষিত ছিলেন। কিন্তু তাঁকে বল না দিয়ে নিজে শট মারার চেষ্টা করেন সাহাল। গোল করতে পারেননি তিনি। সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হয় বাগানকে। ৫২ মিনিটে সুন্দর আক্রমণ তুলে আনে ইস্টবেঙ্গল। বক্সের মধ্যে আলবের্তো রদ্রিগেজ় ঘাড়ের কাছে নিয়ে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল করেন দিয়ামানতাকোস।

দেখে মনে হচ্ছিল, আরাম করে জিতবে ইস্টবেঙ্গল। তখনই নিজের বাকি সব তাস খেলে ফেলেন মোলিনা। দিমিত্রি পেত্রাতোস, দীপক টাংরিদের নামিয়ে দেন তিনি। ৬৫ মিনিটের পর থেকে অল আউট আক্রমণে ওঠে মোহনবাগান। সেই সময় কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে ইস্টবেঙ্গলও। একের পর এক আক্রমণ তুলে আনে মোহনবাগান। লিস্টনের শট পোস্টে লেগে ফেরে। ৬৮ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে ফিরতি বলে দূর থেকে শট মারেন থাপা। বল জালে জড়িয়ে যায়। পরের কয়েক মিনিটে আরও কয়েকটা আক্রমণ করে বাগান। কিন্তু কোনও রকমে গোলরক্ষা করে ইস্টবেঙ্গল। সিবিলে একটা বল গোললাইন সেভ করেন।

সময় কমছিল। শেষ দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ছিল। মাথা গরম করছিলেন দু’দলের ফুটবলারেরা। তাতে অবশ্য সুবিধা হয় ইস্টবেঙ্গলেরই। পরিকল্পনা করে আক্রমণ করতে পারেনি বাগান। শেষ পর্যন্ত জিতে মাঠ ছাড়ে ইস্টবেঙ্গল। বহু দিন পর ডার্বি জয়ের আনন্দে মাতলেন লাল-হলুদ সমর্থকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.