জোরালো একটা বিস্ফোরণের শব্দ। তার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে এল পাথর আর কাদার স্রোত। কী ভয়াবহ তার রূপ। মুহূর্তে চার ফুট সমান সেই হড়পা বান গ্রাস করল জম্মু-কাশ্মীরের কিশ্তওয়াড়ের চিশোতী গ্রাম।
মচৈল মাতা মন্দির দর্শনের জন্য কয়েকশো পুণ্যার্থী হাজির হয়েছিলেন চিশোতী গ্রামে। ওখানেই পুণ্যার্থীদের জন্য অস্থায়ী শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, আবহাওয়াও যে খুব দুর্যোগপূর্ণ ছিল এমনটা নয়। কিন্তু আচমকাই মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বান নামায় অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে পারেননি। ফলে সেই জলের স্রোতে ভেসে যান অনেকে। একের পর এক ঘরবাড়ি, পুণ্যার্থীদের অস্থায়ী শিবির হড়পা বানের গ্রাসে চলে যায়।
বেঁচে ফেরা এক পুণ্যার্থী বলেন, ‘‘তখন সকাল ১১টা। পুণ্যার্থীরা শিবিরে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ একটা জোরালো বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। তখনও কেউ বুঝতে পারেননি সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত এগিয়ে আসছে তাঁদের দিকে। সেই আওয়াজের দু’মিনিটের মধ্যেই বিশাল জল, কাদা আর পাথরের স্রোত আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল। চার ফুটেরও বেশি উঁচু সেই স্রোত থেকে বাঁচতে তখন মরিয়া হয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন অনেকে। কিন্তু অনেকেই সেই সুযোগ পাননি। কেউ কেউ আবার সেই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে যায়।’’
ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, স্ত্রী এবং কন্যা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তিন জনেই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয়েরাই তাঁদের উদ্ধার করেন। আরও এক পুণ্যার্থী বলেন, ‘‘হড়পা বান আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কোনওমতে একটি গাড়িকে আঁকড়ে ধরি। গাড়ির নীচে আটকে যাই। আমার মা একটি বিদ্যুতের খুঁটির নীচে আটকে গিয়েছিল।’’ বৃহস্পতিবার কিশ্তওয়াড়ে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বান নেমে আসে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪৬ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। আহত হয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি। তাঁদের মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয় সূত্রে খবর, অনেক পুণ্যার্থী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। সেনা, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং স্থানীয় প্রশাসন জোরকদমে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। ১৬০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।