বৃষ্টির জেরে রবিবার ফয়সালা হল না নাটকীয় ওভাল টেস্টের, সোমবার জিততে ভারতের চাই ৪ উইকেট, ইংল্যান্ডের দরকার ৩৫ রান

কে ভেবেছিল ওভাল টেস্ট পাঁচ দিনে গড়াবে। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে মনে হয়েছিল, পাল্লা ভারী ভারতের। চতুর্থ দিনের শুরুর এক ঘণ্টাও সেই ইঙ্গিতই দিয়েছিল। তার পর খেলা ফিরল ইংল্যান্ড। হ্যারি ব্রুক ও জো রুটের শতরানের ইনিংস ইংল্যান্ডকে চালকের আসনে নিয়ে গেল। মনে হচ্ছিল, চা বিরতির কিছু ক্ষণ পরেই টেস্ট ও সিরিজ় জিতে যাবেন বেন স্টোকসেরা। খেলা আবার ঘুরল। ভারতের বোলারেরা শেষবেলায় দলকে ম্যাচে ফেরালেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও নাটক বাকি ছিল। বৃষ্টিতে দিনের শেষ দেড় ঘণ্টার খেলা আর হল না। ফলে সোমবার পঞ্চম দিনে হবে ম্যাচের ফয়সালা। জেতার সুযোগ রয়েছে দু’দলেরই। ইংল্যান্ডের জিততে দরকার আরও ৩৫ রান। ভারতের চাই ৪ উইকেট।

খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সুবিধা হল ভারতের। গোটা দিন ধরে বল করেছেন ভারতের তিন পেসার। ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। এ বার তাঁরা বিশ্রাম পাবেন। ফলে সোমবার তরতাজা হয়ে নামতে পারবেন তাঁরা। পাশাপাশি আর তিন ওভার পরেই দ্বিতীয় নতুন বল পাবে ভারত। সেটা কাজে লাগাতে পারবেন প্রসিদ্ধ, সিরাজ ও আকাশদীপ।

cricket

ওভালে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু হওয়ার আগে এগিয়ে ছিল ভারত। ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল আরও ৩২৪ রান। ভারতের প্রয়োজন ছিল ৮ উইকেট। সবুজ উইকেটে ৩২৪ রান কম নয়। দিনের শুরুটাও খারাপ হয়নি ভারতের। প্রথম সেশনে বেন ডাকেট ও ওলি পোপ আউট হয়ে যান। তখন ইংল্যান্ডের রান ১০৬। অর্থাৎ, জিততে দরকার ছিল আরও ২৬৮ রান। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও মহম্মদ সিরাজ ছন্দে ছিলেন। সেই সময় আর একটা উইকেট পড়লে খেলার রাশ অনেকটাই ভারতের হাতে চলে আসত।

সুযোগ তৈরিও করেছিলেন প্রসিদ্ধ। তাঁর একটা বলে পুল মারার চেষ্টা করেন ব্রুক। ব্যাটের কানায় লেগে বল হাওয়ায় ওঠে। প্রসিদ্ধ তখনই দু’হাত উপরে তোলেন। উল্লাস শুরুও করে দিয়েছিলেন তিনি। বলের নীচে দাঁড়িয়ে সিরাজ। বাউন্ডারির থেকে অনেকটাই আগে ছিলেন তিনি। কিন্তু সিরাজ বুঝতেই পারেননি বাউন্ডারির দড়ি ঠিক কোথায়। তিনি ক্রমশ পিছিয়ে যেতে থাকেন। ক্যাচ ধরে আরও এক পা পিছোন তিনি। তাতে বাউন্ডারির বাইরে চলে যান সিরাজ। সেই ভুলের খেসারত দিতে হল ভারতকে। এক বার জীবন পাওয়ার পর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করলেন ব্রুক। একের পর এক বড় শট মারার শুরু করলেন তিনি। এই প্রতি-আক্রমণে খেই হারিয়ে ফেলল ভারত।

অন্য প্রান্তে ঠান্ডা মাথায় খেললেন রুট। তিনি জানতেন, ব্রুক চালিয়ে খেলবেন। তাতে আউট হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে। তাই তাঁকে ধরে খেলতে হবে। দলের সবচেয়ে সিনিয়র ব্যাটার সেই কাজটা ভাল ভাবে করলেন। ব্রুক আক্রমণ করায় রান তোলার গতি কমছিল না। যত সময় গড়াচ্ছিল, ভারতীয় পেসারেরা তত ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন। এই পিচে স্পিনারদের জন্য কিছু না থাকায় তিন পেসারের উপরেই ভরসা করতে হচ্ছিল শুভমনকে। তাঁদেরই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বল করাতে হচ্ছিল।

রুট ও ব্রুক আইসিসি-র টেস্ট ক্রমতালিকায় শীর্ষে থাকা দুই ব্যাটার। কেন তাঁরা এক ও দু’নম্বরে তা আরও এক বার দেখালেন দুই ব্যাটার। তাঁদের মধ্যে ১৯৫ রানের জুটি হল। তাতেই খেলা ইংল্যান্ডের হাতে চলে গেল। চা বিরতির আগে নিজের শতরান পূর্ণ করলেন ব্রুক। তার পর আরও হাত খোলা শুরু করলেন তিনি। সেটা করতে গিয়ে ৯৮ বলে ১১১ রান করে আকাশদীপের বলে আউট হলেন ব্রুক। সেই সিরাজই তাঁর ক্যাচ ধরলেন। তবে তত ক্ষণে তিনি ইংল্যান্ডকে জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছেন। ব্রুক যখন নেমেছিলেন তখন দলের রান ছিল ১০৬। যখন ফিরলেন তখন রান ৩০১। তখন জয়ের জন্য বাকি আর ৭৩ রান। হাতে রয়েছে আরও ৫ উইকেট।

সেখান থেকে ম্যাচে ফিরতে হলে পর পর উইকেট তুলতে হত ভারতকে। রুট অবশ্য ভারতীয় বোলারদের কোনও সুযোগ দেননি। সিরিজ়ে আরও একটা শতরান করলেন তিনি। ভারতের বিরুদ্ধে রান করা জলভাতে পরিণত করেছেন রুট। ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে নিজের ১৩তম শতরান করলেন তিনি।

চা বিরতির পর ইংল্যান্ডের জিততে দরকার ছিল আর ৫৭ রান। সকলে ভাবছিলেন, কত তাড়াতাড়ি সেই রান হবে। কিন্তু ভারতের পেসারেরা শেষ চেষ্টা করলেন। একই রকম আগ্রাসন নিয়ে বল করলেন তাঁরা। প্রতিটা রানের জন্য লড়লেন। ইংল্যান্ডকে চাপে রাখলেন। চাপে পড়ে বড় শট মারতে গিয়ে আউট হলেন জেকব বেথেল। তার পরেই সাজধরে ফিরলেন রুট। তিনি ফেরায় ভারত শেষ আলোর আশা দেখল।

ঠিক তখনই বৃষ্টি শুরু হল। কিছু ক্ষণ পর বৃষ্টি থামলেও খেলা শুরু করা যায়নি। কারণ, মাঠে জল জমে গিয়েছিল। তাই ঝুঁকি নেননি আম্পায়ারেরা। দু’দলকেই তাঁরা সেটা জানিয়ে দেন। অর্থাৎ, সোমবার হবে এই টেস্ট ও সিরিজ়ের ফয়সালা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.