পাক আপত্তি উড়িয়ে চন্দ্রভাগার উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রূপায়ণে টেন্ডার ডাকল ভারত, সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের পর পদক্ষেপ

দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে যে প্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে, অবশেষে তা শুরু করার উদ্যোগ নিল ভারত। জম্মু ও কাশ্মীরে চন্দ্রভাগা নদীর উপরে সাওলকোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হল। গত শতকের ৮০-র দশকে এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। দীর্ঘ দিন ধরে তাতে আপত্তি জানিয়ে এসেছে পাকিস্তান। তবে এ বার তাদের আপত্তি উড়িয়েই প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। বুধবার ন্যাশনাল হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন (এনএইচপিসি) আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বিডিংয়ের ভিত্তিতে সাওলকোট প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর। এনএইচপিসি এবং জম্মু ও কাশ্মীর পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে।

চন্দ্রভাগা নদীর উপরে যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা থেকে ১৮৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হওয়ার কথা। একে কাশ্মীরের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বলা হচ্ছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জম্মু ও কাশ্মীরের বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটা মিটবে বলে আশা। তবে এর ফলে চন্দ্রভাগার জলপ্রবাহ প্রভাবিত হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দীর্ঘ দিন ধরে তারা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে এসেছে। এ ছাড়াও, প্রক্রিয়াগত নানা অসুবিধার জন্য বার বার এই প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। চন্দ্রভাগার উপর ভারতের এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দু’টি ধাপে সম্পন্ন হওয়ার কথা। মোট ২২,৭০৪ কোটি টাকা এই প্রকল্পে খরচ হবে।

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জলচুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে সিন্ধু এবং তাঁর পাঁচটি উপনদীর জল দুই দেশের মধ্যে বণ্টিত হয়ে থাকে। সিন্ধু, চন্দ্রভাগা এবং বিতস্তা— এই তিন পশ্চিমমুখী নদী পাকিস্তানের উপর দিয়ে প্রবাহিত। সে দেশের ৮০ শতাংশ কৃষি এই নদীগুলির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ করে ভারত। তখনই স্থগিত করে দেওয়া হয় সিন্ধুচুক্তিও। এর পর দুই দেশের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়েছিল। ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েই সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু সিন্ধু চুক্তির বিষয়ে ভারত তাদের অবস্থানে অনড়। এখনও চুক্তি স্থগিতই রাখা হয়েছে। ফলে চুক্তির শর্ত মেনে চন্দ্রভাগার উপরে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য পাকিস্তানের সম্মতি আর প্রয়োজন হবে না। সাওলকোট প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেই সম্মতি ছাড়াই এগোতে চলেছে নয়াদিল্লি।

সাওলকোট প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে হলে চন্দ্রভাগার তীরে একাধিক গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সমস্ত গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং তাঁদের অন্যত্র থাকার বন্দোবস্ত করে দেওয়াও প্রকল্পের অংশ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের অধীনে বন উপদেষ্টা কমিটি সাওলকোট প্রকল্পের জন্য প্রায় তিন হাজার একর জঙ্গল এবং সংরক্ষিত বনজমি হস্তান্তরের অনুমোদন দিয়েছে। সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করা নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা প্রথম থেকেই করে আসছে পাকিস্তান। তারা জানিয়েছে, এই জলের উপর পাকিস্তানের বহু মানুষ নির্ভরশীল। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চের দৃষ্টিও তারা আকর্ষণ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.