পহেলগাঁও কাণ্ডের জেরে ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অফ লেজেন্ডস’ (ডব্লিউসিএল) প্রতিযোগিতার গ্রুপ পর্বে ভারত বনাম পাকিস্তানের ম্যাচ বাতিল হয়ে গিয়েছিল। ভারতের একাধিক ক্রিকেটার নাম তুলে নেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত হয়। এ বার সেমিফাইনালেও মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। সেই ম্যাচ হবে কি না তা নিয়ে এখন থেকে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই ম্যাচের বিরোধিতা করে ভারতের একটি স্পনসরকারী সংস্থা নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে হারিয়ে গ্রুপ পর্বে চতুর্থ স্থানে শেষ করেছে ভারত। একটি জয়, তিনটি হার এবং একটি ম্যাচ বাতিল হয়েছে। গ্রুপে সবার উপরে শেষ করেছে ভারত। তারা চারটি ম্যাচ জিতেছে। একটি ম্যাচ বাতিল হয়েছে। প্রতিযোগিতার ফরম্যাট অনুযায়ী প্রথম এবং চতুর্থ স্থানে থাকা দল সেমিফাইনাল খেলবে। সেই অনুযায়ী ভারত এবং পাকিস্তানের ম্যাচ পড়েছে। তবে সেই ম্যাচ এখন অনিশ্চিত।
ভ্রমণ বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট ডব্লিউসিএলে আর ভারতের স্পনসর থাকছে না। সংস্থার মালিক নিশান্ত পিট্টি জানিয়েছেন, যুবরাজ সিংহদের পারফরম্যান্সে তাঁরা গর্বিত। কিন্তু পাকিস্তান অন্য প্রতিপক্ষের মতো নয়। সন্ত্রাস এবং ক্রিকেট হাতে হাত মিলিয়ে চলতে পারে না। তাই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সঙ্গে ওই সংস্থা জড়িত থাকছে না।
উল্লেখ্য, তারা গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জানিয়েছিল, “দু’বছর আগে এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি হয়েছে। তার পরেও আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। এই প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের কোনও ম্যাচের সঙ্গে আমরা যুক্ত নই। আমরা ভারত চ্যাম্পিয়ন্সকে সমর্থন করি। ওদের পাশে আমরা রয়েছি। নীতিগত ভাবে পাকিস্তানের কোনও ম্যাচের প্রচার আমরা করব না।”
গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পয়েন্ট ভাগ হওয়া নিয়েও বিস্তর নাটক হয়েছিল। ম্যাচ বাতিলের কারণে ভারত এক পয়েন্টে খুশি হলেও পাকিস্তান আপত্তি জানায়। আয়োজকেরা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছিলেন, “ইংল্যান্ড বোর্ডকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হবে না। ভারত চ্যাম্পিয়ন্স পয়েন্ট নিয়ে কোনও আপত্তি করেনি। কিন্তু পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্স পয়েন্ট ভাগভাগিতে রাজি নয়। ওদের বক্তব্য, ভারতের আপত্তিতে ম্যাচ বাতিল হয়েছে। ওদের কোনও দায় নেই। তা হলে কেন ওরা পুরো পয়েন্ট পাবে না?” যদিও শেষমেশ দুই দলকেই এক পয়েন্ট করে দেওয়া হয়েছে।
দুই দেশের প্রাক্তনদের তীব্র বাদানুবাদও হয়েছে। শাহিদ আফ্রিদি নিশানা করেছিলেন শিখর ধাওয়ানকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে না চেয়ে সবচেয়ে সরব হয়েছিলেন ধাওয়ানই। তিনি সমাজমাধ্যমে জানান যে, এই ম্যাচ খেলবেন না। পাশাপাশি আয়োজকদের ম্যাচ বাতিলের জন্য তাঁরা একটা চিঠিও লেখেন। সেই চিঠিও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন ধাওয়ান। তার পরে আয়োজকদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এই ম্যাচ হচ্ছে না। তার আগে অবশ্য হরভজন সিংহ, সুরেশ রায়না, ইরফান ও ইউসুফ পাঠান জানিয়েছিলেন যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবেন না। কিন্তু ধাওয়ানের মতো কড়া প্রতিক্রিয়া তাঁরা দেননি।
আফ্রিদির মতে, ধাওয়ানের কারণেই খেলা ভেস্তে গিয়েছে। তিনি বলেন, “খেলা বিভিন্ন দেশের মধ্যে দূরত্ব কমায়। যদি সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি চলে আসে তা হলে কী ভাবে আপনি এগোবেন? আলোচনা ছাড়া তো সমস্যা মিটবে না। কিন্তু কিছু করার নেই। একটা পচা ডিম আছে। সে সব নষ্ট করে দিচ্ছে।”
এই প্রথম নয়, এর আগেও সরাসরি কথার লড়াই হয়েছিল আফ্রিদি ও ধাওয়ানের। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর নিজের দেশের সমর্থনে মুখ খুলেছিলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। ভারতীয়দের মধ্যে সকলেই পাকিস্তানের নিন্দা করেছিলেন। তার মাঝেই পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে ভারতকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন আফ্রিদি। তার জবাবে ধাওয়ান লিখেছিলেন, “কার্গিলেও তোমাদের হারিয়েছিলাম। এত নীচে নেমেছ, আর কত নামবে? উল্টোপাল্টা মন্তব্য করার চেয়ে নিজের দেশের ভাল হয় এমন কোনও কাজ করো। ভারতীয় সেনাদের নিয়ে আমরা গর্বিত।” আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে ধাওয়ান খেলবেন না তা স্পষ্ট ছিল। সেই কারণেই হয়তো আফ্রিদি আবার ধাওয়ানকেই নিশানা করেছিলেন।