‘নগদকাণ্ডে’ নাম জড়ানো বিচারপতি যশবন্ত বর্মা আগে কেন অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হননি? তা নিয়ে বুধবার প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসীহর বেঞ্চ জানিয়েছে, আরও আগে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া উচিত ছিল বিচারপতি বর্মার। বুধবার তাঁর আবেদনের শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছে আদালত।
সংবাদসংস্থা পিটিআই অনুসারে, বিচারপতি বর্মার ভূমিকায় আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে না বলেই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট খারিজের আবেদন জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বিচারপতি বর্মা। সে ক্ষেত্রে কেন তিনি অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটির মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং কেন সঙ্গে সঙ্গে সেটি চ্যালেঞ্জ করেননি, তা জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বর্মার উদ্দেশে আদালত জানিয়েছে, অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টের বিরুদ্ধে আরও আগে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া উচিত ছিল।
বস্তুত, চলতি বছরে দোলের দিন দিল্লি হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি বর্মার বাসভবনের গুদামে আগুন লেগে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নেবাতে যাওয়ার পরে প্রথম নোটের কথা জানা যায়। দাবি করা হয়, সেখানে আধপোড়া নোটের বান্ডিল দেখা গিয়েছে। সেই থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। বিতর্কের আবহেই দিল্লি হাই কোর্ট থেকে ওই বিচারপতিকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বদলি করা হয়। পরবর্তী সময়ে মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালত ওই ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য হাই কোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। গত ৩ মে ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে।
ওই সময় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন খন্না। অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তিনিই অবসরগ্রহণের কয়েক দিন আগে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট-এর (অপসারণ) সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন। যদিও রিপোর্টে কী উল্লেখ রয়েছে, তা প্রকাশ্যে আসেনি। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দত্ত এবং বিচারপতি মসীহর বেঞ্চ জানিয়েছে, দেশের প্রধান বিচারপতি যদি মনে করেন কোনও একজন বিচারপতি কোনও অসদাচরণ করেছেন, তবে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে তা জানাতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, “পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়া যে অনুসরণ করা হয়েছে, সেই বার্তা সমাজের কাছে দিতে হবে বিচারবিভাগকে।”
এই মামলায় বিচারপতি বর্মার হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশকে অসাংবিধানিক বলে দাবি করেন সিব্বল। তাঁর বক্তব্য, এই ভাবে অপসারণ প্রক্রিয়ার সুপারিশ করা একটি বিপজ্জনক নজির সৃষ্টি করবে। বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতি বর্মার আবেদনের প্রেক্ষিতে রায়দান স্থগিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।