দাবায় দিব‍্যার ইতিহাস, শতরঞ্জ কে খিলাড়ি ১৯ বছরের দাবাড়ু, ৬৪ খোপে প্রথম মহিলা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পেল ভারত

ভারত থেকে যে প্রথম বার মহিলাদের দাবা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে তা আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন ছিল কে জিতবেন? ৩৮ বছরের কোনেরু হাম্পি। না ১৯ বছরের দিব্যা দেশমুখ। শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করলেন দিব্যা। সোমবার টাইব্রেকারে তিনি হারালেন হাম্পিকে। দ্বিতীয় র‌্যাপিড গেম জিতে চ্যাম্পিয়ন হলেন দিব্যা।

দুটো ক্লাসিক্যাল গেম ড্র হওয়ায় খেলা গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। সেখানে প্রথম র‌্যাপিড গেমে সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলেন দিব্যা। তিনি শুরু করেন ‘পেট্রভ’স ডিফেন্স’ দিয়ে। দুই প্রতিযোগীই আক্রমণাত্মক খেলছিলেন। দ্রুত চাল বিনিময় হচ্ছিল। সময় কমছিল। কিন্তু দেখে বোঝা যাচ্ছিল, কেউ জেতার মতো জায়গায় নেই। ফলে বাধ্য হয়ে ড্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন দিব্যা ও হাম্পি।

দ্বিতীয় র‌্যাপিড গেমে সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলেন হাম্পি। তিনি শুরু করেন ‘কুইন্স গ্যাম্বিট’ দিয়ে। কালো ঘুঁটি নিয়ে খেললেও দিব্যা জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। তিনি সময় কম নিচ্ছিলেন। অন্য দিকে হাম্পি চাল দিতে সময় নিচ্ছিলেন বেশি। ফলে তাঁর ঘড়িতে সময় কমছিল। একটা সময় ৮ মিনিট এগিয়ে ছিলেন দিব্যা। বাধ্য হয়ে ড্র করার চেষ্টা করেন হাম্পি। কিন্তু পারেননি তিনি। চাপের মুখে একটা ভুল চাল দিয়ে ফেলেন হাম্পি। সেটাই কাজে লাগান দিব্যা। ৩৪ চালের পর হার মেনে নিতে বাধ্য হন হাম্পি।

অভিজ্ঞতায় হাম্পির থেকে অনেক পিছিয়ে ছিলেন দিব্যা। কিন্তু তিনি বাজিমাত করলেন আগ্রাসন কাজে লাগিয়ে। গোটা প্রতিযোগিতায় আক্রমণাত্মক খেলেছেন তিনি। তুলনায় হাম্পিকে অনেক বেশি রক্ষণাত্মক দেখিয়েছে। নিজের দ্বিগুণ বয়সি হাম্পিকে হারিয়ে প্রথম বার বিশ্বকাপ জিতে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি দিব্যা। কেঁদে ফেলেন তিনি।

এর আগে শনি ও রবিবার পর পর দু’দিন দুটো ক্লাসিক্যাল গেম হয়েছে। ক্লাসিক্যালে প্রথম ৪০ চালের জন্য ৯০ মিনিট সময় পান দাবাড়ুরা। তার পর আরও ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। প্রতি চালের পর ঘড়িতে ৩০ সেকেন্ড করে সময় বেড়ে যায়। শনিবার প্রথম গেমে সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলেছিলেন দিব্যা। তিনি সেখানে শুরু করেছিলেন ‘কুইন্স গ্যাম্বিট’ দিয়ে। প্রথম গেম হওয়ায় দুই প্রতিযোগীর কেউ বেশি ঝুঁকি নিতে চাননি। তার মাঝেই কয়েকটা ভাল চাল দিয়েছিলেন হাম্পি। ভাল জায়গায় ছিলেন তিনি। কিন্তু দিব্যা হার মানেননি। ৩১ চালের পর ড্র হয় সেই ম্যাচ। এগিয়ে থেকেও জিততে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছিলেন হাম্পি।

রবিবার সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলেন হাম্পি। দাবায় সাদা ঘুঁটি নিয়ে যিনি খেলেন তিনিই সাধারণত সুবিধা পান। কিন্তু হাম্পি শুরুতে কিছুটা রক্ষণাত্মক খেলেন। ‘এ০৬ জ়ুকারটর্ট ওপেনিং’ দিয়ে শুরু করেন হাম্পি। দিব্যার তুলনায় তাঁর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। নিজের অর্ধেক বয়সি প্রতিযোগীর বিরুদ্ধেও শুরুতে ঝুঁকি নিতে চাননি হাম্পি। তুলনায় দিব্যা অনেক বেশি আক্রমণাত্মক চাল দিতে থাকেন। ফলে প্রথম দিকে চাল দিতে সময় লাগছিল হাম্পির।

প্রাথমিক চাপ সামলে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে খেলায় ফেরেন হাম্পি। তিনিও দিব্যাকে বাধ্য করেন সময় নিতে। ফলে দুই খেলোয়াড়ের ঘড়িতেই সময় কমছিল। তার পরেও দিব্যা চেষ্টা করছিলেন খেলার ফয়সালা করতে। তিনি আক্রমণ থেকে সরেননি। কয়েক বার ঝুঁকিও নেন। কিন্তু হাম্পির খেলার ধরন বদলায়নি। ৩৪ চালের পর দুই প্রতিযোগীই ড্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ফলে দুই রাউন্ডের পর তাঁদের দু’জনেরই পয়েন্ট হয় ১। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই হাম্পিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন দিব্যা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.