আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে গাজ়ায় দিনে ১০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে ইজ়রায়েলি সেনা। বেশ কিছু এলাকাকে ‘নিরাপদ’ হিসাবে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই এলাকাগুলিতে প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কোনও হামলা হবে না। কিন্তু অভিযোগ, ইজ়রায়েলের গোলাবর্ষণ থামেনি। গাজ়ায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরেও তাদের হামলায় আরও অন্তত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার সংবাদমাধ্যম আলজাজ়িরা। অনাহারে মৃতের সংখ্যাও বেশ খানিকটা বেড়েছে।
রবিবার ইজ়রায়েলের সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানায়, আল-মাওয়াসি, দের এল-বালাহ্, গাজ়া সিটি-সহ মধ্য ও উত্তর গাজ়ার বেশ কিছু এলাকায় দিনে ১০ ঘণ্টা সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ রাখা হবে। ক্ষুধার্তদের কাছে ত্রাণ যাতে পৌঁছোতে পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রতি দিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট কিছু রাস্তাও খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু অভিযোগ, ঘোষণার পরেও আইডিএফ হামলা থামায়নি। গাজ়া সিটিতে রবিবারই আকাশপথে হামলা চালানো হয়েছে। স্থানীয় প্যালেস্টিনীয়দের দাবি, একটি বেকারি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। তাতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন বহু মানুষ।
গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে এবং অপুষ্টিতে নতুন করে আরও ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে রয়েছে দু’জন শিশু, এক জনের বয়স মাত্র পাঁচ মাস। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখনও পর্যন্ত গাজ়ায় খেতে না-পেয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১৩৩ জন। অনেকে অপুষ্টিজনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, চিকিৎসকেরাও খেতে পাচ্ছেন না। গাজ়ায় খাবারের অভাব মেনে নিয়েছেন আইডিএফ-এর আধিকারিকেরাও। তবে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি মানতে রাজি নন তাঁরা।
প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসাবে গাজ়ায় ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ রুখে দিয়েছিল ইজ়রায়েল। রাষ্ট্রপুঞ্জের পাঠানো ত্রাণও সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। এই পরিস্থিতিতে অনাহারে লক্ষ লক্ষ শিশুর মৃত্যু হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। ইজ়রায়েলের পদক্ষেপের সমালোচনা চলছে বিশ্ব জুড়ে। অভিযোগ, ইচ্ছাকৃত ভাবে গাজ়ায় খাদ্যের অভাব তৈরি করা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি। দিনের পর দিন না-খেয়ে কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে রবিবার থেকে ইজ়রায়েলি সেনা গাজ়ায় আকাশপথে ত্রাণবর্ষণ শুরু করে। ত্রাণের সামগ্রী, খাবারের বস্তা আকাশ থেকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে গাজ়ায়। রবিবার সেই বস্তার আঘাতেও বেশ কয়েক জন জখম হয়েছিলেন। তবে অভিযোগ, যে পরিমাণ খাবার আকাশ থেকে ফেলা হচ্ছে, তা সিন্ধুতে বিন্দুর সমান। তাতে চাহিদা মিটছে না। খাদ্যের হাহাকারের মাঝে ইড়রায়েলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠল গাজ়ায়।