ডিজিটাল গ্রেফতারিতে দেশে ‘প্রথম’ সাজা শোনাল কল্যাণীর কোর্ট! পুলিশ সেজে কোটি টাকা হাতানো ৯ জনের যাবজ্জীবন

ডিজিটাল গ্রেফতারির ঘটনায় ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল কল্যাণীর আদালত। সম্ভবত দেশে এই প্রথম ডিজিটাল গ্রেফতারির ঘটনায় অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা শোনাল কোনও কোর্ট। ২০২৪ সালের অক্টোবরে রানাঘাটের এক ব্যক্তিকে মুম্বই পুলিশ সেজে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ করেছিল কয়েক জন। তার পরে তাঁর কাছ থেকে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। সেই ঘটনায় এ বার ধৃত ৯ জনকে সাজা শোনাল কল্যাণীর আদালত।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সিদ্ধার্থ ধাপোলা জানিয়েছেন, রানাঘাট পুলিশ জেলার কল্যাণীর সাইবার অপরাধ থানায় ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কল্যাণীর অবসরপ্রাপ্ত কৃষি বিজ্ঞানী পার্থ মুখোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন, ওই বছরের ১৯ অক্টোবর একটি নম্বর থেকে তাঁর কাছে একটি হোয়াটসঅ্যাপ কল এসেছিল। ফোন করে এক ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি মুম্বই পুলিশের কর্মী। পার্থের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। অভিযোগকারী আরও জানান, সাত দিন ধরে তাঁকে ডিজিটাল গ্রেফতার করে তাঁর কাছ থেকে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। সেই টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে বলা হয়েছিল।

ওই ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে রানাঘাট পুলিশ। তারা জানতে পারে, কম্বোডিয়ায় বসে প্রতারণা করেছিলেন ধৃতেরা। অভিযোগকারীর টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে বলা হয়েছিল। সেই অ্যাকাউন্টের মালিকেরা এ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়েছিটিয়ে ছিলেন। তাঁদের ধরতে ২৫ দিন ধরে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, হরিয়ানায় তল্লাশি চালায় এ রাজ্যের পুলিশ। ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে তিন জন গুজরাতের, সাত জন মহারাষ্ট্রের, তিন জন হরিয়ানার। সেই সঙ্গে পাশবই, এটিএম কার্ডও বাজেয়াপ্ত করে। রানাঘাট পুলিশ ২৬০০ পাতার চার্জশিট জমা দেয়। তাতে ধৃতদের মধ্যে ৯ জনের নাম ছিল।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কল্যাণী কোর্টে চার্জ গঠন করা হয়। শুরু হয় বিচার। রাজ্য সরকারের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই দলের নামে ১০৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে বিভিন্ন থানায়। প্রায় ১০০ কোটি টাকার প্রতারণা করেছে ধৃতেরা। মামলায় সাক্ষী দিয়েছেন ২৯ জন। তাঁদের মধ্যে ৬ জন ভিন্‌রাজ্য থেকে এসেছেন। সাড়ে চার মাসে আদালতে বিচার শেষ হয়েছে। বিচারক ৯ জনকে যাবজ্জীবন দিয়েছেন। দোষীরা হলেন মহম্মদ ইমতিয়াজ আনসারি, শহিদ আলি শেখ, শাহরুখ রফিক শেখ, যতীন অনুপ লাডওয়াল, রোহিত সিংহ, রূপেশ যাদব, সাহিল সিংহ, পঠান সুমাইয়া বানু, ফালদু অশোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.