(প্রথম পর্ব)
কোনো দেশের প্রতিভাবান বিজ্ঞানী যদি নিউক্লিয়ার টেকনোলজি বা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের গোপন তথ্য শত্রু দেশকে জানিয়ে দেয় তাহলে সেই দেশের বিজ্ঞানী সে দেশের সমস্ত মানুষের জীবন বিপন্ন করবে।
এরকমটা কি হতে পারে ?
হ্যাঁ হতে পারে যদি সেই বিজ্ঞানীটি কমিউনিস্ট হন , যদি তিনি কমিউনিজমে দীক্ষিত হন।
আমেরিকা যেমন নিজের এফ-35 বিমানের পাইলট নিয়োগের সময় ভালো করে দেখে নেয় যে সে পাইলট টি জীবনের কোন সময় কমিউনিজমের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিল কিনা।
বিশ্বের ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে যে কমিউনিজমের প্রতি আকৃষ্ট হলে তার নিজের দেশের প্রতি আনুগত্যে চির ধরে। আর যে দেশে কমিউনিস্ট শাসক আছে সেই দেশের প্রতি তার একনিষ্ঠ আনুগত্য থাকে। ভারতের কথা বিবেচনা করলে দেখা যায় যখন চীন ডোকলামে অনুপ্রবেশ করেছিল তখন ভারতের কমিউনিস্ট নেতারা চীনের পাশেই ছিল আবার ভারত চীন যুদ্ধের সময়ও তারা ‘চীনের চেয়ারম্যান আমার চেয়ারম্যান স্লোগান’ তুলেছিল।
যে করোনা ভাইরাসের জন্য গোটা বিশ্বের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেই করোনা ভাইরাস চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফল। করোনা মহামারীর সময় সীতারাম ইয়েচুরি ডি রাজাদের মতো কম্যুনিস্টরা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগদান করে চীনের সরকারের তথা সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টির ভূয়সী প্রশংসা করছিল। পাকিস্তানকে অস্ত্র সাহায্য করে চীন।
পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের হাতে যত ভারতীয় সেনা এবং সাধারণ মানুষের প্রাণ গিয়েছে পরোক্ষভাবে তার জন্য দায়ী চীন কিন্তু তবুও চীন এদেশের কমিউনিস্টদের কাছে প্রিয়।
কোনো মার্ক্সবাদী বিজ্ঞানীর কাছে ভারতের গোপন তথ্য কি সুরক্ষিত , বিশেষ করে যদি সেটা চীনের পক্ষে ক্ষতিকর হয় ?
ভারতের বিভিন্ন ঘটনা আর আমেরিকার মতো শক্তিধর দেশের বিবেচনা কে গুরুত্ব দিলে , উত্তরটা অবশ্যই ‘না’।
প্রথমে যে প্রতিপাদ্য দিয়ে শুরু করেছিলাম ভারতের ক্ষেত্রে যে ঘটনাগুলির উদাহরণ দিলাম তা থেকে প্রতিপাদ্য টি প্রমাণিত হয়।
আমরা জানি জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন বা মার্কসবাদী সংগঠন পার্লামেন্ট আক্রমণকারী আফজল গুরুর সমর্থনে মিছিল করেছিল।
শুধু স্বাধীনতা পরবর্তী ঘটনা নয় , স্বাধীনতার আগে থেকেই ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম লগ্ন থেকেই কমিউনিস্ট পার্টি এইরকম।
তারা পাকিস্তানের দাবিকে সমর্থন করেছিল অর্থাৎ ভারত ভাগে কমিউনিস্টদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কমিউনিস্টদের এই দেশবিরোধীতা সম্পর্কে দেশের প্রাপ্তবয়স্ক সমস্ত মানুষের কেনো জানা প্রয়োজন ? কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় শুধু আমাদের কেন গোটা বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থায় কমিউনিজমের প্রভাব রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে আছে আর ঢুকে আছে বলেই কমিউনিজমের প্রভাবে প্রভাবিত মানুষ নিজের অজান্তেই দেশবিরোধী আন্দোলন তথা দেশবিরোধী অবস্থানের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে ফেলে , দেশবিরোধী তত্ত্বকে নিজের অজান্তেই প্রচার প্রসার করে।
বিশেষ করে ইতিহাস শিক্ষায় কমিউনিজমের প্রভাব এতটাই যে , ভারতবর্ষের সঠিক ইতিহাস থেকে ভারতীয়রা বিচ্ছিন্নই থেকে গেছে। আর দেশভক্ত মানুষ, দেশের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন হলে সমসাময়িক পরিস্থিতিতে দেশের পক্ষে হিতকর অবস্থান নিতে পারেন না বা বিভ্রান্ত হন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে মূল প্রভেদ ইতিহাস-শিক্ষায় আর সঠিক ইতিহাস শিক্ষার অভাবের ফলেই তারা দেশের কাজে যোগ দিতে পারছেন না।
একজন চিকিৎসক বা একজন প্রতিষ্ঠিত কবি বা একজন প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী যদি সঠিক ইতিহাস শিক্ষা না পান তাহলে তার অন্য যেকোন বিষয়ে যতটাই পাণ্ডিত্য থাকুক না কেনো দেশে-বিদেশে ঘটে চলা বিভিন্ন বিষয়ে তার অবস্থান নির্ণয়ে বিভ্রান্তি থাকা স্বাভাবিক।
একদিকে মার্ক্সবাদ প্রভাবিত ইতিহাস শিক্ষা আর অন্যদিকে মার্ক্সবাদী রাজনৈতিক দল- এই দুইয়ের প্রভাবে দেশের হিতবিরোধী প্রচার চালাতে মার্ক্সবাদীরা ফাঁকা মাঠ পেয়ে যায়।
তাই মার্ক্সবাদ আর মার্ক্সবাদীদের ভারত বিরোধিতা সম্পর্কে না জানলে মার্ক্সবাদ এর বিষ থেকে দেশকে রক্ষা করা মুশকিল।
মার্কসবাদ প্রত্যেক দেশেই সেই দেশের মানুষকে সেদেশের আশু প্রয়োজন থেকে দূরে সরিয়ে একটি অলীক কল্পনার বশবর্তী করে সেই দেশের ক্ষতি সাধন করেছে।
মার্কসবাদ সবসময়ই বিপথগামী করেছে দেশের কাজে নিয়োজিত সক্রিয় মানুষগুলিকে।
ভারতে কমিউনিজম এর বীজ পোঁতার জন্য যে মানুষটির নাম সর্বপ্রথমে আসে তিনি হলেন মানবেন্দ্রনাথ রায়।
মানবেন্দ্রনাথ রায় প্রথম জীবনে বাঘা যতীন অর্থাৎ যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন। বাঘা যতীনের আত্ম বলিদানের পর মেক্সিকো, বার্লিন হয়ে মানবেন্দ্রনাথ রায় পৌঁছে যান মস্কোতে।
একসময় যে মানবেন্দ্রনাথ রায় জাতীয়তাবাদী ছিলেন, যার কাছে দেশের স্বাধীনতাই প্রথম লক্ষ্য ছিল তিনি মার্কসবাদে দীক্ষিত হয়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকেই পাখির চোখ মনে করলেন।
তার কাছে জাতি, রাষ্ট্র এগুলো তখন পিছনের সারিতে। তিনি শিখে গেলেন গোটা পৃথিবীকে শুধুমাত্র ধনী ও দরিদ্র এই দুই ভাগে ভাগ করতে। তার কাছে তখন ইংরেজ শ্রমিক ও ভারতীয় শ্রমিক এক শ্রেণীতে আর একজন ইংরেজ উচ্চবিত্ত মানুষ আর ভারতীয় উচ্চবিত্ত মানুষ এক শ্রেণীতে।
পরবর্তীকালে যখন ইংল্যান্ডের কারখানার কাপড় বয়কটের ডাক দিয়েছিল জাতীয় কংগ্রেস , ভারতের কমিউনিস্টরা তার বিরোধিতা করে বলেছিল ল্যাঙ্কাশায়ারের শ্রমিকরা এই বয়কটে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই যে তত্ত্বকে অভ্রান্ত মনে করে বাস্তবকে অস্বীকার করার যে সূচনা হয়েছিল তা আজ পর্যন্ত অব্যাহত আছে এবং কমিউনিস্টদের ভারত বিরোধিতা কে উত্তরোত্তর বাড়িয়ে চলেছে।
(চলবে)
পিন্টু সান্যাল
