রাধিকা খুনে মুখ খুললেন সেই মিউজ়িক ভিডিয়োর নায়ক! বাবা কেন বন্দুক তুলেন নিলেন, রহস্যের মেঘ এখনও কাটেনি

সমাজমাধ্যম প্রভাবী এলভিস যাদব ছিলেন তাঁর অনুপ্রেরণা। ঘটনাচক্রে, এলভিস তাঁর গ্রামেরই। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, এলভিসের মতোই সমাজমাধ্যম প্রভাবী হতে চেয়েছিলেন হরিয়ানার টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদব। কিন্তু তাতে আপত্তি ছিল তাঁর বাবা দীপকের। তবে রাধিকা তাঁর বাবাকে বলেছিলেন, ‘‘আমার মাথায় দারুণ দারুণ সব কনটেন্ট রয়েছে। অনেক খেলেছি। এ বার আরও বেশি টাকা আয় করতে চাই।’’ কাঁধের চোটের জন্য টেনিস খেলা থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পরেই না কি বাবাকে এ কথা জানিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর। এলভিসের মতো জনপ্রিয় সমাজমাধ্যম প্রভাবী হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন রাধিকা।

সূত্রের খবর, রিল বানানোর সময় মাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। বাড়িতে কথা দিয়েছিলেন যে, এমন কোনও কাজ করবেন না যাতে পরিবারের মাথা নত হয়। রাধিকার সঙ্গে বেশ কয়েকটি মিউজ়িক ভিডিয়ো বানিয়েছেন ইনাম-উল-হক। ইন্ডিয়া টুডে-কে ইনাম জানিয়েছেন, রাধিকা তাঁকে জানিয়েছিলেন যে, তাঁদের মিউজ়িক ভিডিয়ো তাঁর বাবার পছন্দ হয়েছে। ইনাম বলেন, ‘‘রাধিকাকে মিউজ়িক ভিডিয়ো বানানো প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তার বাবাকে গানটা শুনিয়েছিল রাধিকা। পছন্দও হয়েছিল। ভিডিয়ো শুটিংয়ের সময় সেটে তাঁর মা-ও ছিল।’’

দু’বছর আগে সেই ভিডিয়ো শুটিং হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ইনাম। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাধিকার সঙ্গে তাঁর বাবার কি কোনও ঝামেলা চলছিল? এ প্রসঙ্গে ইনামের দাবি, ‘‘প্রথমত, রাধিকা আমার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিলেন। এখনও তা-ই আছেন। পঞ্জাব টাইগার্স নামে একটি টেনিস দল যখন দিল্লিতে গিয়েছিল, সেখানেই রাধিকার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়। রাধিকা আমার এক পরিচিতের কাছে এসেছিলেন, তাঁকে জানিয়েছিলেন অভিনয় করতে আগ্রহী।’’ ইনাম আরও দাবি করেছেন, প্রথমে তিনি রাধিকাকে অভিনয়ের জন্য কোনও প্রস্তাব দেননি। কারণ, তিনি নিজেই জানতেন না মিউজ়িক ভিডিয়োয় তিনি অভিনয় করবেন কি না। তবে পরিচালক তাঁকে জানান যে, রাধিকার ‘স্ক্রিন লুকিং’ ভাল। তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। তার পরই রাধিকার কাছে প্রস্তাব যায়। খুব সাধারণ ভাবেই সেই ভিডিয়ো শুটিং হয়েছিল। ইনামের কথায়, ‘‘তার পর কী হল জানি না। রাধিকা আর নিজেকে এ বিষয়ে উৎসাহ দিতে চাননি। আমাদের দু’বারই দেখা হয়েছিল। এক বার দিল্লিতে। আর এক বার ভিডিয়ো শুটিংয়ের সময়।’’

ঘটনাচক্রে, রাধিকা খুনের পর বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। একই সঙ্গে সন্দেহ। প্রথম যে তত্ত্বটি উঠে এসেছিল সেখানে দাবি করা হচ্ছিল, ভিডিয়ো রিল বানানোর জন্য আপত্তি জানিয়েছিলেন তাঁর বাবা দীপক। বিষয়টি নিয়ে খুব একটা খুশি ছিলেন না। কিন্তু টেনিস প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সমাজমাধ্যম প্রভাবী হওয়ার দিকে ঝুঁকছিলেন রাধিকা। তা হলে কি সেই রিল বানানোর বিষয়টিই কি তাঁর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল? এ বিষয়টি স্পষ্ট না-হলেও রাধিকার পরিচিতদের একাংশ কিন্তু সে দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তা হলে কি এটি ‘সম্মানরক্ষার্থে’ খুন? তদন্তকারী এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রাধিকা খুনের এই দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাধিকার খুনের পর তাঁর সেই পুরনো মিউজ়িক ভিডিয়ো আবার চর্চায় চলে এসেছে।

পড়শি এবং আত্মীয়দের অনেকেরই দাবি, যে ব্যক্তি নিজের কন্যার সাফল্যে গর্ববোধ করতেন, শৈশব থেকেই তাঁকে নানা রকম ভাবে সব কিছুতে সমর্থন করতেন, কী এমন ঘটল যে রাধিকার বিরুদ্ধে এত আক্রোশ জন্মেছিল তাঁর? প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ করা নিয়ে বাবা-মেয়ের ঝামেলাকেও এই চরম পদক্ষেপের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে না। যদি প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ করার বিষয়টিই এর কারণ হত, তা হলে শুরু থেকেই কেন এর বিরোধিতা করেননি দীপক? দীর্ঘ দিন চলার পর কেন তা বন্ধ করার প্রসঙ্গ উঠল? তদন্তকারীদের একটি সূত্র বলছে, এটি ‘সম্মানরক্ষার্থে’ খুন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রাধিকার মা মঞ্জু যাদব মেয়ের খুনের বিষয়ে একটি কথাও বলেননি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। শুধু দাবি করেছেন, ঘটনার সময় তিনি ছিলেন না। তাঁর জ্বর হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে, তিনি কি তা হলে খুনের কারণ চেপে যেতে চাইছেন ইচ্ছা করেই? তদন্তকারীদের একাংশের সন্দেহ, খুনের নেপথ্যে এমন কোনও রহস্য রয়েছে যা প্রকাশ্যে আনতে চাইছেন না কেউ। শুধুই কি দীপক এই খুনে জড়িত, না কি এই ঘটনায় পরিবারের অন্য সদস্যরাও জড়িত, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

রাধিকার প্রশিক্ষণকেন্দ্র ভাল চলায় পড়শি এবং আত্মীয়দের কটাক্ষের মুখে পড়তে হচ্ছিল বলে দাবি করেছেন দীপক। তাঁরা কটাক্ষ করে তাঁকে বলতে শুরু করেন, ‘ভালই তো, বসে বসে মেয়ের উপার্জনের টাকায় খাচ্ছিস’। এই কটাক্ষ তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। আত্মসম্মানে আঘাত লাগায় কন্যাকে খুন করেছেন বলে দাবি দীপকের। কিন্তু আত্মীয় এবং পড়শিরা কিন্তু দীপকের এই যুক্তিতে সায় দিচ্ছেন না। কারণ দীপকের এমন কোনও টাকার অভাব পড়েনি যে মেয়ের উপার্জনে বসে বসে খেতে হবে। দীপকের বিপুল সম্পত্তি। মাসে আয় ১৭ লক্ষ টাকা। গ্রামের সকলেই জানেন, দীপকেরা বিত্তশালী। মেয়ের উপার্জনের টাকা তাঁর প্রয়োজন পড়ে না। ফলে দীপকের এই যুক্তি যে ধোপে টিকবে না বলে দাবি আত্মীয়দের একাংশের।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকালে বাড়িতে রাধিকাকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বাবা দীপকের বিরুদ্ধে। রাধিকাকে পর পর পাঁচটি গুলি করেন তিনি। দু’টি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও তিনটি গুলি রাধিকার পিঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় হরিয়ানার এই টেনিস খেলোয়াড়ের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.