যে দেশের ক্রিকেটারই হোন, জীবনে অন্তত এক বার লর্ডসে খেলার জন্য মুখিয়ে থাকেন। বৃহস্পতিবার থেকে শুভমন গিলেরা সেই মাঠে তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামছেন। তার আগে লর্ডসের মাঠে ‘স্লোপ’, অর্থাৎ ঢাল নিয়ে আলোচনা চলছে।
ক্রিকেট মাঠে এ ধরনের ঢাল সাধারণত দেখা যায় না। বিশেষ করে আধুনিক সময়ে প্রযুক্তির উন্নতিতে মাঠের যে কোনও খুঁত সহজেই মেরামত করা যায়। তবে লর্ডস বিশ্বের ঐতিহ্যশালী স্টেডিয়াম হলেও, এই খুঁত মেরামত করা হয়নি। ফলে ব্যাটার এবং বোলার, উভয়ের কাছেই বিষয়টা সমস্যার।
লর্ডসের বিখ্যাত ব্যালকনিতে দাঁড়ালে স্পষ্ট বোঝা যায়, মাঠ এক দিক থেকে আর এক দিকে কতটা ঢালু। উত্তর-পশ্চিম দিক (প্যাভিলিয়ন এন্ড) থেকে ঢাল নেমে গিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব (নার্সারি এন্ড) দিকে। এই ঢাল প্রায় আট ফুট দু’ইঞ্চির। এই ঢাল অন্যান্য মাঠে দেখা যায় না। তবে লর্ডসে থাকার কারণ এই এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান।
লর্ডস রয়েছে ইংল্যান্ডের সেন্ট জন্স উড এলাকায়, যেটি ভৌগোলিক ভাবেই ঢালু। ১৮১৪ সালে লর্ডস তৈরি হওয়ার সময়েই সেটি ঢালু ছিল। পরে বিভিন্ন সময়ে কৃত্রিম ভাবে সেই ঢালু অংশ সমান করার প্রস্তাব উঠলেও, পরিকাঠামোগত সমস্যা এবং ইংরেজদের ‘ঐতিহ্যের’ কথা ভেবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন বোলার অ্যাঙ্গাস ফ্রেজার ‘দ্য অ্যাথলেটিক’ ওয়েবসাইটে বলেছেন, “যদি আপনি নতুন করে কোনও ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরি করেন তা হলে নিশ্চিত ভাবেই এই ঢাল দেখতে পাবেন না। কিন্তু এখানে রয়েছে। তার কারণ, হাজার হাজার বছর ধরে এটাই এই এলাকার ভৌগোলিক বিশেষত্ব। হ্যাম্পস্টেড হিথ (শহরের উচ্চতম এলাকা) থেকে শুরু হয়ে এটা টেমস নদীতে গিয়ে শেষ হয়েছে।”
ফ্রেজার আরও বলেছেন, “বেশ আলাদা একটা ব্যাপার আছে এই মাঠের। লিডস এবং নটিংহ্যামে ঢাল রয়েছে। কিন্তু লর্ডসের মতো কোথাও নেই।”
প্যাভিলিয়ন প্রান্ত থেকে কোনও বোলার বল করতে এলে তাঁর মনে হতে পারে, তিনি নীচের দিকে নেমে যাচ্ছেন। তবে এই ঢালের কারণে ডানহাতি ব্যাটারদের ক্ষেত্রে ইনসুইং এবং বাঁ হাতিদের ক্ষেত্রে আউটসুইংয়ের সুবিধা পাওয়া যায়। তাই অনেক এলবিডব্লিউ হয়। অতীতে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রাও এই সুবিধার কথা জানিয়েছিলেন।
নার্সারি প্রান্ত থেকে বল করলে মনে হয়, উপরের দিকে উঠতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ডান হাতিদের কাছে আউটসুইং এবং বাঁ হাতিদের কাছে ইনসুইং করা সহজ। জসপ্রীত বুমরাহ হয়তো সেই প্রান্ত থেকে বল করতে পারেন। ব্যাটারদেরও টেকনিক ঠিকঠাক রাখতে হয়।