দিঘা পর্বের পরে যে মন্তব্য করে নিজের দলের একাংশের রোষানলে পড়েছিলেন দিলীপ ঘোষ, মাস দুয়েক পরে দিল্লিতে গিয়ে সেই অবস্থানেই অনড় রইলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কোনও দুর্নীতির মামলা নেই বলে আরও এক বার মন্তব্য করলেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি। তার সঙ্গেই ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বললেন, ‘‘মমতার আশেপাশে যাঁরা ছিলেন বা রয়েছেন, তাঁরা বরং দাগি।’’ দলের সর্বভারতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিব প্রকাশের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে বেরোনোর পরেও দিলীপের এই বয়ান চমকে দিয়েছে রাজ্য বিজেপির অনেককে।
মঙ্গলবারই বিধাননগরের বিজেপি দফতরে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যকে শুভেচ্ছা জানান দিলীপ। দু’জনের মধ্যে দু’দফায় আধ ঘণ্টা কথাও হয়। সেই কথোপকথনের মাঝেই এক বার বাইরে বেরিয়ে এসে দলীয় দফতরের নীচে জড়ো হওয়া কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে নাতিদীর্ঘ ভাষণ দিয়ে যান শমীক। তাঁর সে বক্তব্যের সার কথা ছিল, দিলীপ দলেই থাকছেন এবং দল নতুন-পুরনোয় ভেদাভেদ করবে না।
শমীকের সঙ্গে এই বৈঠকের পরের দিন অর্থাৎ বুধবার সকালেই দিলীপ দিল্লি যান। সর্বভারতীয় নেতৃত্বের কয়েক জনের সঙ্গে দেখা করবেন বলে কলকাতা ছাড়ার আগেই জানান। কথা মতোই বুধবার বিকেলে বিজেপির সর্বভারতীয় সদর দফতরে গিয়ে যুগ্ম সংগঠন সম্পাদক শিব প্রকাশের সঙ্গে সস্ত্রীক দেখা করেন দিলীপ। দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের দফতরে তিনি ঘণ্টাখানেক ছিলেন। বেরিয়ে এসে ফের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে ‘ইতিবাচক’ মন্তব্যই তিনি করেন। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে হাজির হওয়ার পরে দলের একাংশের আক্রমণের মুখে পড়ে মমতা সম্পর্কে যে কথা বলেছিলেন, বুধবারও ফের সেই কথাই বলেন। মমতার নামে কোনও দুর্নীতির মামলা নেই বলে দিলীপ আরও একবার মন্তব্য করেন। যাঁরা মমতার সমালোচনা করছেন, তাঁদের অনেকের নামে দুর্নীতির মামলা রয়েছে বলেই খোঁচা দেন।
পরে আনন্দবাজার ডট কমকে ফোনে দিলীপ বলেন, ‘‘আমি কারও প্রশংসা করিনি। আমাকে সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন করেছিল, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্লিনচিট দিয়েছি কি না? আমি বলেছি, আমি কারওকে ক্লিনচিট দিইনি। কারও আলাদা করে প্রশংসাও করিনি। আমি সবারই প্রশংসাই করি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কেও তেমন কথাই বলেছি।’’ দিলীপের কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো কোনও দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হননি। কিন্তু তাঁর আশেপাশের লোকেরা দাগি। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা রয়েছে। সে কথাই বলেছি।’’
দিলীপের এই মন্তব্য সম্পর্কে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের তরফ থেকে কেউই এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। কিন্তু দিলীপ আর বিজেপির মাঝে প্রায় আড়াই মাস ধরে চলতে থাকা টানাপড়েনে যখন ইতি পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছিলেন, ঠিক তখনই দিল্লিতে দিলীপের এই মন্তব্য দলের অন্দরের জল আবার খানিকটা ঘোলা করে তুলল বলে বিজেপির একাংশের মত।