এ বারের উইম্বলডন অঘটনের। প্রতিযোগিতা শুরুর পর থেকে প্রায় প্রতি দিনই কোনও না কোনও বাছাই খেলোয়াড় ছিটকে গিয়েছেন। সোমবার হয়তো আরও একটি অঘটন ঘটতে পারত। হতে দিলেন না নোভাক জোকোভিচ। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে আলেক্স ডি মিনাউরের বিরুদ্ধে প্রথম সেটে উড়ে গিয়েও পরের তিনটি সেটে প্রত্যাবর্তন করলেন সার্বিয়ার খেলোয়াড়। জিতলেন ১-৬, ৬-৪, ৬-৪, ৬-৪ গেমে। এই নিয়ে ১৬ বার উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে নামবেন তিনি। তিন ঘণ্টা ১৮ মিনিটে ম্যাচ জিতেছেন জোকোভিচ।
গত বছর কোয়ার্টার ফাইনালে জোকোভিচের বিরুদ্ধে খেলার কথা ছিল আলেক্সের। কিন্তু চোটের কারণে সেই ম্যাচ থেকে নাম তুলে নিয়েছিলেন। এ বার এক রাউন্ড আগে জোকোভিচকে সামনে পেয়েছিলেন। প্রথম সেটের ফলাফল দেখে মনে হচ্ছিল আরও একটা অঘটন দেখতে চলেছে উইম্বলডনের সেন্টার কোর্ট। তবে জোকোভিচ বুঝিয়ে দিলেন, বুড়ো হাড়ে এখনও জোর রয়েছে। আলেক্সের স্বপ্ন সফল হতে দিলেন না। চতুর্থ সেটে ১-৪ গেমে পিছিয়ে থেকেও যে ভাবে টানা পাঁচটি গেম জিতলেন, সেটাই জোকোভিচের ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ দিয়েছে। গ্যালারিতে তারিয়ে তারিয়ে সেই খেলা উপভোগ করলেন আট বারের বিজয়ী রজার ফেডেরার। তাঁর রেকর্ডই এ বার ছোঁয়ার লক্ষ্যে নেমেছেন জোকোভিচ। শুধু ফেডেরারই নন, এ দিন উইম্বলডনের গ্যালারিতে ছিলেন বিরাট কোহলি ও অনুষ্কা শর্মা, ব্রায়ান লারা, জেমস অ্যান্ডারসন, জো রুটেরা।
চতুর্থ রাউন্ডে ওঠার পথে মাত্র একটি সেট খুইয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার আলেক্স। বোঝাই যাচ্ছিল জোকোভিচের গাঁট হতে পারেন। ২৬ বছরের খেলোয়াড় প্রথম সেটে জোকোভিচকে দাঁড় করিয়ে জিতলেন। তবে দ্বিতীয় সেটে ৪-৫ পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও ব্রেক পয়েন্ট কাজে লাগাতে পারলেন না। তার থেকেও অবাক করা ব্যাপার দেখা গেল চতুর্থ সেটে। ৪-১ এগিয়ে গিয়েছিলেন আলেক্স। সেখান থেকে বিপক্ষকে দু’বার ব্রেক করে এবং নিজের সার্ভিস ধরে রেখে টানা পাঁচটি গেম জিতে ম্যাচ পকেটে পুরলেন জোকোভিচ।
এই নিয়ে উইম্বলডনে ১০১টি ম্যাচ জিতলেন জোকোভিচ। সামনে শুধু ফেডেরার। তবে এ বার ট্রফি জিতলেও ফেডেরারকে ছোঁয়া বা পেরনো হবে না জোকোভিচের। ফাইনাল নিয়ে তাঁর হাতে পড়ে মাত্র তিনটি ম্যাচ। তিনটি জিতলেও ১০৪-এ আটকে যাবেন। কোয়ার্টার ফাইনালে জোকোভিচের সামনে ইটালির ফ্লাভিয়ো কোবোল্লি, যিনি এ দিন মারিন সিলিচকে হারিয়েছেন ৬-৪, ৬-৪, ৬-৭, ৭-৬ গেমে।
ম্যাচের পর স্বাভাবিক ভাবেই জোকোভিচের চোখেমুখে বিস্ময়। বললেন, “এখনও বুঝে উঠতে পারছি না কোর্টে এত ক্ষণ ধরে ঠিক কী হল। শুরুটা সত্যিই খুব ভাল হয়নি। প্রথম সেটে আলেক্স তিন বার আমার সার্ভ ভেঙেছে। কোর্টে খুব হাওয়া দিচ্ছিল। পরিস্থিতি আলেক্স ভাল ভাবে কাজে লাগিয়েছে।”
কী ভাবে ম্যাচে ফিরলেন সেই রহস্যও খোলসা করেছেন জোকোভিচ। বলেছেন, “খুব বেশি সমাধান আমার হাতে ছিল না। আমি নিজেকে নতুন ভাবে চাঙ্গা করে তুলি। দ্বিতীয় সেটেও লড়াই করে জিততে হয়েছে। তার পর নিজেই নিজেকে বলি, ‘যাক, ম্যাচে ফিরতে পেরেছি’। গোটা ম্যাচেই ইঁদুর দৌড় হয়েছে। অনেক ভাল শট মেরেছে আলেক্স। আমিও কম যাইনি। এমনিতেই টেনিস সার্কিটে অন্যতম দ্রুত খেলোয়াড় আলেক্স। ওর গতির সঙ্গে তাল মেলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তা সত্ত্বেও জিততে পেরেছি, এটাই অনেক।”
জোকোভিচ জানতেন গ্যালারিতে ফেডেরার রয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে বলেন, “একটা কঠিন ম্যাচ খেললাম। কখনও সখনও ভাবছিলাম, দর্শকাসনে ওই যে ভদ্রলোকটি বসে আছে, ওর মতো যদি সার্ভ আর ভলি করতে পারতাম তা হলে কত সহজ হত ব্যাপারটা।”
জোকোভিচের ম্যাচ দেখে মুগ্ধ কোহলিও। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, “কী অসাধারণ একটা ম্যাচ। তবে গ্ল্যাডিয়েটর খেলল নিজের ছন্দেই।”