আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্ল। মুখে স্মিত হাসি। বাইরে ঝলমলে রোদ। হাস্যোজ্জ্বল এবং সুস্থ দেখাচ্ছে ভারতের ভবিষ্যতের ‘গগনযাত্রী’কেও! এ বার এমনই ছবি প্রকাশ্যে আনল অ্যাক্সিয়ম স্পেস।
শুভাংশুই ভারতের প্রথম নভশ্চর, যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এ পা রেখেছেন। অ্যাক্সিয়ম-৪ নামে এই অভিযানে শুভাংশু ছাড়াও রয়েছেন আরও তিন নভশ্চর। ইতিমধ্যেই সেখানে ১০ দিন কাটিয়েও ফেলেছেন তাঁরা। আপাতত নানা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা করেই তাঁদের দিন কাটছে। আইএসএস থেকে মা-বাবা-বোনকে ভিডিয়ো কলও করেছেন শুভাংশু। মহাকাশ থেকে সূর্যোদয় কেমন লাগে, পৃথিবীকেই বা কেমন দেখায়, সে সব দেখিয়েছেন পরিবারকেও। শুভাংশুর বাবা শম্ভুদয়াল শুক্লর কথায়, ‘‘এই সূর্যোদয়ের তুলনা হয় না। পাহাড়-চূড়া থেকে নয়, বিমান থেকে নয়, পৃথিবী থেকে অনেক অনেক মাইল দূরে মহাকাশ কেন্দ্রের জানলা থেকে সূর্যোদয়!’’ এর আগে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও কথা হয়েছিল শুভাংশুর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে কেমন দেখতে লাগে? শুভাংশু উত্তর দিয়েছিলেন, মহাকাশ থেকে দেশবিদেশের সীমানা দেখা যায় না। দেখা যায় না কাঁটাতার। কোনও ভেদাভেদ নয়, বরং মহাকাশ জাগিয়ে তোলে ঐক্য এবং মানবতার অনুভূতি!
গত ২৬ জুন স্পেসএক্সের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযানে চড়ে আইএসএসের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন চার নভশ্চর। ক্রু-কমান্ডার পেগি হুইটসন, মিশন বিশেষজ্ঞ স্লাওস উজানস্কি-উইজ়নিউস্কি, টিবর কাপু এবং পাইলট শুভাংশু— চার জন আইএসএস-এ ১০ দিন কাটিয়ে ফেলেছেন। আসার পর থেকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রচারমূলক কাজেই সময় কাটছে তাঁদের। গত ৩ এবং ৪ জুলাই বেঙ্গালুরুর তিরুঅনন্তপুরম এবং লখনউয়ের দুই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে একটি কর্মসূচিতেও অংশ নিয়েছেন শুভাংশু, যেখানে ৫০০-রও বেশি পড়ুয়ার সঙ্গে সরাসরি কথা হয়েছে ভারতীয় নভশ্চরের। মহাকাশের প্রতি শিশুদের কৌতূহল জাগানোই ছিল এই কর্মসূচির লক্ষ্য। পাশাপাশি, একগুচ্ছ গবেষণাও করছেন শুভাংশুরা। এর মধ্যে অন্যতম হল মায়োজেনেসিস। মাধ্যাকর্ষণের অনুপস্থিতি কী ভাবে পেশিক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে, তা খতিয়ে দেখাই এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য। এ ছাড়াও, টার্ডিগ্রেড্স নিয়েও গবেষণা করছেন তাঁরা। পৃথিবীর এই আনুবীক্ষণিক সামুদ্রিক জীব গভীর সমুদ্রের প্রতিকূল অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে। মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণশূন্য পরিবেশেও এরা বেঁচে থাকবে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখছেন শুভাংশুরা। এ ছাড়া, মাইক্রোঅ্যালগি (ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শৈবাল) ও সায়ানোব্যাক্টিরিয়া (সালোকসংশ্লেষে সক্ষম ব্যাক্টিরিয়া) মহাকাশে কেমন আচরণ করে, তা-ও দেখা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, দীর্ঘ মহাকাশ অভিযানে অভিযাত্রীদের খাবারের জোগান, প্রয়োজনীয় পুষ্টি সুনিশ্চিত করা, সর্বোপরি প্রতিকূলতার মধ্যে জীবনধারনের উপায় খুঁজে বার করতে সাহায্য করবে এই গবেষণা।