‘বঞ্চনা’ হচ্ছে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলির প্রতি! কেন অবহেলা করছে আন্তর্জাতিক জোটগুলি? ‘ব্রিক্‌স’ সম্মেলনে প্রশ্ন মোদীর

দক্ষিণ গোলার্ধের উন্নয়নশীল এবং স্বল্প উন্নত দেশগুলির প্রতি ‘বঞ্চনা’ নিয়ে সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দক্ষিণ গোলার্ধের এই দেশগুলি বর্তমান বিশ্ব কূটনীতিতে কেন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা রবিবার ‘ব্রিক্‌স’ সম্মেলনে তুলে ধরেন মোদী। তাঁর মতে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জোটগুলিতে এই দেশগুলির পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলির নিজস্ব বিশ্বাসযোগ্যতার জন্যই এই পদক্ষেপ করা উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

সাধারণত দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া এবং ওশিয়ানিয়ার উন্নয়নশীল এবং স্বল্প উন্নত দেশগুলিকে ‘গ্লোবাল সাউথ’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এ বারের ‘ব্রিক্‌স’ সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে ব্রাজ়িলের রিও ডি জেনেইরো শহরে। ব্রাজ়িলও ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর মধ্যেই পড়ে। রবিবার মোদী বলেন, “গ্লোবাল সাউথ প্রায়শই দ্বিচারিতার শিকার হয়। তাদের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলার অর্থ, উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে এই দেশগুলিকে বেশির ভাগ সময়েই নামমাত্র কিছু দেওয়া হয়ে থাকে।”

শুধু এখন বলে নয়, দীর্ঘ দিন ধরেই দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলি ‘বঞ্চনা’র শিকার হচ্ছে বলে দাবি মোদীর। তিনি জানান, এই দেশগুলি বিশ্ব অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। কিন্তু, বিংশ শতাব্দীতে যে আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলি তৈরি হয়েছে, সেখানে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলিকে পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া হয়নি। কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও এই দেশগুলিকে আলোচনার টেবিলে জায়গা দেওয়া হয়নি। ‘ব্রিক্‌স’ সম্মেলনে বক্তৃতার নির্যাস সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে মোদী লেখেন, “গ্লোবাল সাউথকে ছাড়া আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলি যেন এমন একটি মোবাইল ফোন, যার সিম আছে কিন্তু নেটওয়ার্ক নেই।”

তবে এখন এই পরিস্থিতির বদলের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। মোদীর কথায়, “এখন কৃত্রিম মেধার যুগ চলছে। প্রতি সপ্তাহে প্রযুক্তি বদলাচ্ছে। সেখানে গত ৮০ বছরে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলি একবারের জন্যও নিজেদের পরিবর্তন করেনি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। বিংশ শতাব্দীর টাইপরাইটারে একবিংশ শতাব্দীর সফ্‌টওয়্যার কখনও চলতে পারে না।”

দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলির প্রতি অবহেলার অভিযোগ করার পাশাপাশি ‘ব্রিক্‌স’ কেন বাকিদের থেকে আলাদা, তা-ও বোঝানোর চেষ্টা করেন মোদী। তাঁর বক্তব্য, ‘ব্রিক‌্‌স’ এমন একটি জোট যেটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের পরিবর্তন করতে পারে। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ব্যাঙ্কেও এই সংস্কার দেখতে পাওয়া দরকার। ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের জন্য ঋণ মঞ্জুর করেছে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ)। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক থেকেও সম্প্রতি ঋণ পেয়েছে পাকিস্তান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.