শুভমন গিল ক্যাচ ধরতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে দু’হাত ছড়িয়ে দিলেন আকাশদীপ। এজবাস্টনে দু’ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে তিনি ম্যাচের নায়ক। একগাল হাসি নিয়ে সতীর্থদের জড়িয়ে ধরছেন। নজিরের ম্যাচে স্মারক হিসাবে তুলে নিয়েছেন উইকেট। কিন্তু সেই সাফল্য, সেই হাসির মধ্যে লুকিয়ে ছিল এক যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণার কথাই বললেন বাংলার পেসার।
খেলা শেষে মাঠেই ভারতের টেস্ট ক্রিকেটার (এই সিরিজ়ে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় রয়েছেন) চেতেশ্বর পুজারার সঙ্গে কথা বলেন আকাশ। সেখানেই উঠে আসে তাঁর পরিবারের কথা। পুজারা আকাশকে জিজ্ঞাসা করেন, “খেলা শেষে স্মারক হিসাবে স্টাম্প আর বল নিয়েছো। এটা নিশ্চয় বাড়ি ফিরে সকলকে দেখাবে।” জবাবে আকাশ বলেন, “একটা কথা আমি কাউকে বলিনি। আমার বড় দিদি আজ দু’মাস ধরে ক্যানসারে ভুগছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি ওর মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলাম। প্রত্যেকটা বলের সময় আমার চোখের সামনে ওর মুখটা ভেসে উঠছিল। আমি ওর জন্য উইকেট পেতে চেয়েছিলাম। ওর কথা ভাবছিলাম। ওর মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। এই জয়টা ওর জন্য।” আকাশ যখন এই কথা বলছেন, তখন তাঁর চোখে জল। সেই সঙ্গে মুখে হাসি। তাঁকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন পুজারাও। তিনি প্রার্থনা করেন, যাতে আকাশের দিদি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এজবাস্টনে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটের পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছেন আকাশ। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলার পেসারের দাপটে ভেঙে পড়েছে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডার। জো রুট, হ্যারি ব্রুকের মতো ব্যাটারদের বোকা বানিয়ে আউট করেছেন। বিশেষ করে তাঁর সেরা দুই উইকেট রুট ও ব্রুক। সেই দুই উইকেটের কথা আলাদা করে উঠে এসেছে আকাশের মুখে। এজবাস্টনের পাটা উইকেটে নিজের সাফল্যের রহস্য ফাঁস করেছেন তিনি।
আকাশদীপ এই উইকেটে গুড ও ফুল লেংথে বল করেছেন বেশি। উইকেট লক্ষ্য করে বল করেছেন। ব্যাটারকে খেলানোর চেষ্টা করেছেন। সেই কথা উঠে এসেছে আকাশের কথায়। তিনি বলেন, “আমি সিমে বল ফেলার চেষ্টা করেছি। উইকেট লক্ষ্য করে বল করেছি। রুটকে তার আগে ক্রমাগত পায়ে বল করছিলাম। যাতে ও ভাবে বল ভিতরের দিকে ঢুকবে। তার পর একটা বল বাইরের দিকে বার করেছি। তাতে ও আউট হয়েছে। ব্রুকের ক্ষেত্রেও অফ স্টাম্পের বাইরে টানা বল করে একটা ভিতরের দিকে ঢুকিয়েছি। আমি জানতাম পিচের ফাটল আমাকে সাহায্য করবে। সেটাই হয়েছে।”
এজবাস্টনে জসপ্রীত বুমরাহের বদলে সুযোগ পেয়েছিলেন আকাশদীপ। তাঁর এই পারফরম্যান্সের পর তৃতীয় টেস্টে লর্ডসে তাঁকে দলের বাইরে রাখা অসম্ভব। তবে আপাতত সে কথা ভাবছেন না আকাশদীপ। এই টেস্টের জয়ের আনন্দ আরও কিছুটা উপভোগ করতে চান। আকাশ বলেন, “এখন লর্ডসের কথা ভাবছিই না। আপাতত এই জয়টা উপভোগ করব। ইংল্যান্ডের মাটিতে জয় সহজে আসে না। এত ভাল একটা ম্যাচ হয়েছে। আপাতত আজকের রাতটা যাক। তার পর লর্ডসের কথা ভাবব।”
পুজারার সঙ্গে আকাশের কথোপকথনের মাঝেই সেখানে এসে উপস্থিত হন মহম্মদ সিরাজ। তিনিও এই টেস্টে ৭ উইকেট নিয়েছেন। সিরাজ এসে জানান, কী ভাবে আকাশদীপকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সিরাজ বলেন, “ওকে প্রতিটা বলের পর বলছিলাম, উইকেট নেওয়ার পিছনে ছুটিস না। ঠিক জায়গায় বলটা রাখ। উইকেট এমনই আসবে। ওকে বলছিলাম, ওভারের চারটে বল ঠিকঠাক কর। দুটো বলে উইকেট নিতে হবে। ওভারের প্রথম ও শেষ বলটা গুরুত্বপূর্ণ। সেই দুটো বলেই ও মার খাচ্ছিল। তার পর আমাকে এসে বলছিল, ‘ভাই কেন আমার উপর চাপ দিচ্ছ।’” সিরাজের মুখে এ কথা শুনে হেসে ওঠেন আকাশদীপ। একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন তাঁরা। বোঝা যাচ্ছিল, একে অপরের সাফল্য কতটা আনন্দ পেয়েছেন তাঁরা।