গত সপ্তাহ জুড়ে তাপপ্রবাহের কারণে হাঁসফাঁস অবস্থা ইউরোপের বড় অংশের নাগরিকদের। কাজকর্মে তার প্রভাব পড়েছে। দিনের বেলায় মহাদেশের বেশির ভাগ অংশে কাজে যেতে পারছেন না নাগরিকেরা। বাধ্য হয়ে বাড়িতেই কাটাচ্ছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগ্নেয়গিরির উপর বসে কাজ করছেন বলে মনে হচ্ছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ। চেক প্রজাতন্ত্রের নদীতে ভেসে উঠছে মরা মাছ। পচা গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয়েরা। যাঁরা ইউরোপে এখন বেড়াতে গিয়েছেন, তাঁরা সমাজমাধ্যমে সতর্ক করছেন প্রিয়জনকে। বলছেন, ‘‘ভুলেও এই গ্রীষ্মে আসবেন না!’’
মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ
পশ্চিম ইউরোপের পরে হাঁসফাঁস গরম এখন মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপেও। চেক প্রজাতন্ত্রে ঊর্ধ্বমুখী পারদ। মনে করা হচ্ছে, তার জেরে নদীতে মাছের মড়ক লেগেছে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে থায়া নদীতে ভেসে উঠেছে মরা মাছ। গত সপ্তাহে এই নদী থেকে ৩০ টন মৃত মাছ সরানো করা হয়েছে। প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে সবচেয়ে বেশি মাছের মৃত্যু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, গরম এবং অক্সিজেনের অভাবে এই ঘটনা হয়েছে। প্রাগে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যাহত হয়েছে মেট্রো চলাচল। সে সময় লিফ্টে আটকে পড়েন বেশ কয়েক জন যাত্রী। দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ, গরমের কারণে এসি বেশি করে চালানো হচ্ছে বলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। গরমে হাঁসফাঁস আলবানিয়াও। সেখানকার এলবাসানে পুরসভার ফেলা আবর্জনায় আগুন লাগে। সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি দমকলকর্মীরা। গরমের জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে আলবানিয়া, বসনিয়া, মন্টেনেগ্রো, সার্বিয়া, হারজ়েগোভিনায়। বসনিয়ার মস্টার শহরে শুক্রবার তাপমাত্রা পৌঁছোয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মন্টেনেগ্রোতে দিনের বেলা খাঁ খাঁ করছে রাস্তা, রেস্তরাঁ, ক্যাফে। ব্যবসায়ীদের আক্ষেপ, এ ভাবে গরম পড়লে লাটে উঠবে ব্যবসা।
ইটালি
গরমের কারণে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে ইটালিতেও। দুপুরবেলা বাড়ি থেকে বার হচ্ছেন না লোকজন। সিসিলি দ্বীপে ২০২১ সালে তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ৪৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বাসিন্দাদের দাবি, এ বারও সে রকমই কিছু হবে। সেখানে এক রেস্তরাঁর রাঁধুনি রানদাজ্জ়োর কথায়, ‘‘আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে যখন রান্না করছি, মনে হচ্ছে আগ্নেয়গিরির উপরে রয়েছি। এসিও কাজ করছে না।’’
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডামে একটি ঐতিহাসিক বাড়ির এক তলায় গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়শিবির খোলা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে সেই শিবির। সেখানে গৃহহীনদের স্নান করার ব্যবস্থাও রয়েছে।
জার্মানি
জার্মানিতে সপ্তাহের মধ্যভাগে দিনের গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সপ্তাহান্তে তা বেড়ে হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জার্মানিতে গরমের জন্য কাজ কামাই করার আইন নেই। তবে সংস্থার কর্তারা কর্মীদের কথা ভেবে সময়ে ছাড় দিচ্ছেন। অনেক অফিসেই পাখা ছিল না। সেখানে ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্মাণস্থলে ছায়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ফ্রান্স
সপ্তাহের মধ্যভাগে প্যারিসে দিনের তাপমাত্রা ৩৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল। দিনেরবেলা শহরের রাস্তা সুনসান। বিপাকে পড়েছেন চিজ় ব্যবসায়ীরা। গরমের কারণে খারাপ হয়ে যাচ্ছে চিজ়। সংরক্ষণের মতো ব্যবস্থা নেই। বিক্রেতাদের আক্ষেপ, যদি বা ফ্রিজ়ের ব্যবস্থা করে সংরক্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু ক্রেতা নেই। ফলে বিক্রি হচ্ছে না।
স্পেন
স্পেনে তাপপ্রবাহ চলেছে গত সপ্তাহে। উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে দাবানল। সে দেশে গরমে প্রাণ হারিয়েছেন চার জন। ক্যাফে, রেস্তরাঁ দুপুরে মাছি তাড়াচ্ছে। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েক জন।
গ্রীষ্মকালে ইউরোপে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। প্রচুর রাজস্ব ঘরে আসে দেশগুলির সরকারের। কিন্তু এ বার পর্যটকেরা ইউরোপের দেশে বেড়াতে গিয়ে গরমে নাজেহাল হয়েছেন। অনেকেই সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বলছেন, ‘‘ভুলেও গ্রীষ্ম ইউরোপে আসবেন না।’’ এর ফলে উদ্বেগে ইউরোপের দেশগুলির পর্যটন বিভাগ।