‘প্রয়োজনে দল ছাড়ব’! হামলার মুখে পড়ে হুমকি রাজ্যের মন্ত্রীর, ব্যবস্থা না নিলে কলকাতায় ‘মহামিছিলের’ও হুঁশিয়ারি

নিজের কেন্দ্রেই হামলার মুখে পড়ে এ বার দল ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। শুধু তা-ই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে হামলার ঘটনায় যাঁরা জড়িত, দল যদি তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করে, তা হলে আগামী ১০ জুলাই কলকাতায় ‘মহামিছিল’ হবে বলেও হুমকি দিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার মন্তেশ্বরে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা। সেই সময় তাঁর গাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। দাবি, দলীয় কর্মীদেরই একাংশ হামলা চালিয়েছেন। তাতে সিদ্দিকুল্লা নিজেও আঘাত পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। সেই ঘটনার পর অভিযোগ জানাতে জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে যান মন্ত্রী। সুপারের সঙ্গে কথা বলার পর সেখান থেকে বেরিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখেছে গোটা ঘটনা। তারা চাইলেই হামলা আটকাতে পারত। কিন্ত তারা তা করেনি। এ নিয়ে পুলিশ সুপার তাঁর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। ঘটনাচক্রে, এ রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এর পরেই মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘এই চক্রান্ত যারা করল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সন্ত্রাস যদি বন্ধ না হয়, বলে দিচ্ছি, সিপিএমের আমলে যে রকম আন্দোলন করেছিলাম, সে রকম এ বারও হবে। আমার সারা রাজ্যে ১২০০ মাদ্রাসা রয়েছে। সাড়ে চারশো জমিয়তের ইউনিট আছে। ২০ লক্ষ সদস্য আছে। খুব স্পষ্ট ভাবে বলছি, দল যদি ব্যবস্থা না করে, আগামী ১০ জুলাই কলকাতায় মহামিছিল বার করে এর প্রতিবাদ করব।’’

সিদ্দিকুল্লা জানান, জেলা পুলিশ সুপারকে তাঁর যা জানানোর ছিল, তিনি তা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই নৈরাজ্য আমরা মানতে পারব না। তাতে দরকার হলে দল ছেড়ে দেব। এই দলের পরোয়া নেই। নৈরাজ্যকে দমন করতে হবে। বলতে হবে, ভাল মানুষকেই চাই। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী নৈরাজ্য চায়নি বলেই সিপিএমকে সরতে হয়েছে। তৃণমূলকে স্বীকার করতে হবে, আমাদের অবদান ছাড়া তৃণমূল আসতে পারত না।’’

সিদ্দিকুল্লা মন্তেশ্বরের বিধায়ক। একুশে জুলাইয়ে প্রস্তুতি সভার আগে বৃহস্পতিবার সেখানেই গিয়েছিলেন মন্ত্রী। তাঁর কনভয় মালডাঙা এবং মন্তেশ্বর বাজার এলাকায় পৌঁছোতেই হাতে ঝাঁটা, কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন কয়েক জন। তোলা হয় ‘গো ব্যাক’ স্লোগান। মন্ত্রীকে ‘চিটিংবাজ-ধাপ্পাবাজ’ বলেও আক্রমণ করতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। সেই সময় ইট-রড-লাঠি দিয়ে হামলাও হয় মন্ত্রীর গাড়িতে।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সিদ্দিকুল্লা গত চার বছর ধরে এলাকার খোঁজখবর রাখেননি। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনও কাজ হয়নি। মালডাঙা ও আশপাশের এলাকারা রাস্তাঘাট, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবায় অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিক্ষোভকারীরা।

এই ঘটনায় মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমদ হোসেন শেখের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন সিদ্দিকুল্লা। তাঁর অভিযোগ, আহমদের মদতে তাঁর অনুগামীরা হামলা চালিয়েছেন। মন্ত্রীর দাবি, তাঁকে খুনের চেষ্টা হয়েছে। তাঁর গাড়িতে থাকা ছ’জন জখম হয়েছেন। তাঁরও হাতে চোট লেগেছে বলে দাবি করেছেন মন্ত্রী। এ বিষয়ে আহমেদের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি।

জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। আমার ধারণা, বিরোধীরা একত্রিত হয়ে অশান্তি বাধিয়েছে। যত ভোট এগিয়ে আসবে, তত আমাদের দলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা চক্রান্ত করবে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.