অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানের হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছিলেন ভারতীয় সেনা সর্বাধিনায়ক জেনারেল অনিল চৌহান। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে তার কারণ ‘ব্যাখ্যা’ করলেন আর এক সেনাকর্তা। তাঁর দাবি, ‘‘রাজনৈতিক বাধার কারণে ধ্বংস হয়েছিল ভারতের যুদ্ধবিমান।’’
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ায় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত নৌসেনা আধিকারিক ক্যাপ্টেম শিব কুমারের ওই মন্তব্যে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেছেন, ‘‘ভারত কিছু যুদ্ধবিমান খুইয়েছে। তবে তার কারণ রাজনৈতিক বাধা ছিল। নেতারা চাইছিলেন পাক সামরিক ঘাঁটি বা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলা চালাতে।’’
ক্যাপ্টেন কুমারের এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই আসরে নেমেছে কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, সরকার দেশবাসীকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘প্রথমে সিঙ্গাপুরে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ্যে এনেছিলেন। এ বার আরও এক প্রবীণ সেনাকর্তা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন সর্বদল বৈঠক ডাকছেন না এবং বিরোধীদের সব কিছু জানাচ্ছেন না? কেন সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হচ্ছে না?’’
গত মে মাসে সিঙ্গাপুরে ‘ব্লুমবার্গ টিভি’র একটি সাক্ষাৎকারে সেনা সর্বাধিনায়কের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, পাকিস্তান ভারতের কোনও যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিল কি না। ওই প্রশ্নে প্রথমে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলেননি ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের কাছে যুদ্ধবিমান ধ্বংসটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন সেটা ধ্বংস হল, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’’ তখনই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তার মানে অন্তত একটি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানি হামলায় ধ্বংস হয়েছিল? ওই প্রশ্নের জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলে ভারতীয় সেনার কৌশল ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি।
তবে পাক বাহিনীর হাতে ক’টি ভারতীয় বিমান ধ্বংস হয়েছিল, তা জেনারেল চৌহান সিঙ্গাপুরে স্পষ্ট করেননি। ভারতের রণকৌশল ব্যাখ্যার উপরেই জোর দিয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন যে, বাহিনী সঙ্গে সঙ্গে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল। তার পরে আবার হানা দিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘ইতিবাচক দিক হল, আমরা আমাদের কৌশলগত ভুলটা তখনই বুঝতে পেরেছি এবং তা শুধরে দু’দিন পর আবার সেই কৌশল প্রয়োগ করেছি। সব যুদ্ধবিমান আবার আমরা উড়িয়েছি এবং দূরের লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করেছি।’’ এই নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ যে দাবি করেছেন, তা সর্বৈব মিথ্যা বলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন জেনারেল চৌহান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, চারটি রাফাল-সহ ছ’টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে পাক সেনা। সেই দাবি মিথ্যা বলে জানিয়েছিলেন জেনারেল চৌহান।
জেনারেল চৌহানের ওই মন্তব্যে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছিল দেশে। সেই আবহে পরে পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, কেন সিঁদুর অভিযান জরুরি হয়ে পড়েছিল। সেই সূত্রেই তিনি বলেছিলেন, অভিযানের ফলাফলই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কথায়, ‘‘ক্ষয়ক্ষতি গুরুত্বপূর্ণ নয়, পরিণাম গুরুত্বপূর্ণ। এর আগের সাক্ষাৎকারেও আমি বলেছি সে কথা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অপারেশন সিঁদুরের আবহে আমি যুদ্ধের কৌশল ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলাম। আমরা জানতাম মোকাবিলা করার জন্য আমাদের হাতে ড্রোন প্রতিরোধ করার জন্য অনেক ভাল ব্যবস্থা রয়েছে। ঝুঁকি কতটা ছিল, তা বোঝাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পেশাদার বাহিনী হিসাবে আমরা ক্ষতি বা বাধার কথা ভেবে খুব বেশি প্রভাবিত হই না। নিজেদের ভুল আমাদের বুঝতেই হবে এবং শোধরাতে হবে। বিপত্তির কারণে বসে থাকলে তো চলবে না।’’