ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে পর্ন ভিডিয়ো, দেহব্যবসা! মা-ছেলে উধাও, হাওড়াকাণ্ডে পদক্ষেপ জাতীয় মহিলা কমিশনের

কাজের টোপ দিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের তরুণীকে প্রায় পাঁচ মাস হাওড়ার ডোমজুড়ে আটকে রেখে নির্যাতন চালানোয় অভিযুক্ত ‘ব্যবসায়ী’ মা-ছেলের সন্ধান মেলেনি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ‘নির্যাতিতা।’ এর মধ্যে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করছে জাতীয় মহিলা কমিশন। অভিযুক্ত শ্বেতা খান এবং পুত্র আরিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বহর ক্রমশ বাড়ছে। মুখ খুলতে শুরু করেছেন একের পর এক ‘প্রতারিত’ ব্যক্তি।

শ্বেতা এবং আরিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রোডাকশন হাউস খুলে তাঁরা ছবিতে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রলুব্ধ করতেন অল্পবয়সিদের। কিন্তু মা-ছেলে পরিচালনা এবং প্রযোজনা করতেন পর্ন ভিডিয়োর। এমনকি, অনেককে জোর করে দেহব্যবসায় নামান বলেও অভিযোগ। সোদপুরের নির্যাতিতার সঙ্গে তেমনটাই হতে যাচ্ছিল বলে তাঁর মায়ের দাবি। ওই মহিলা জানিয়েছেন, পরিবারের হাল ফেরাতে মেয়ের কাজের দরকার ছিল। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ মেয়ের সঙ্গে সমাজমাধ্যমে পরিচয় হয় আরিয়ানের। ওই যুবক জানান, তাঁদের একটি ইভেন্ট ম‍্যানেজমেন্ট সংস্থা রয়েছে। সেখানে কাজ মিলবে।

অভিযোগ, ওই ‘টোপ’ দিয়ে ডোমজুড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সোদপুরের তরুণীকে। তাঁকে কাজ দেওয়া হয় একটি পানশালায়। তরুণীর মায়ের দাবি, ‘‘মেয়েকে দিয়ে খারাপ খারাপ কাজ করাতে চাইত ওরা (শ্বেতা ও আরিয়ান)। ও রাজি না হওয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন চলত।’’ শুধু আটকে রাখাই নয়, তরুণীর উপর শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। পরিবারের দাবি, মেয়েকে রড দিয়ে মারধর করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। শুক্রবার কোনও ভাবে হাওড়ার ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোদপুরে পৌঁছোন তরুণী। পাঁচ মাস পরে মেয়েকে ওই ভাবে দেখে চমকে যান বাড়ির লোকেরা। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পাশাপাশি খড়দহ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা।

পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, আরিয়ান এবং তাঁর মা শ্বেতা পর্ন ভিডিয়োর ব্যবসা চালাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ‘আরিয়ানা ইশারা’ নামে একটি প্রোডাকশন হাউস খুলে কখনও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নাম করে কখনও ছবিতে কাজ দেওয়ার নামে তরুণীদের ডাকতেন তাঁরা। টোপ দেওয়া হত মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকের। প্রথম পক্ষের ছেলে আরিয়ান কাজের খোঁজে থাকা মহিলাদের নিয়ে আসতেন এবং তাঁর মা বাড়িতে বসে পর্ন ভিডিয়ো ব্যবসা দেখভাল করতেন বলে অভিযোগ। সোদপুরের তরুণীর মাধ্যমে তাঁদের নাম এবং কাজকর্ম প্রকাশ্যে আসার পরেই গা ঢাকা দেন মা-ছেলে।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে এ-ও খবর, হাওড়ার বাঁকড়া এলাকার বাসিন্দা আরিয়ান এবং শ্বেতা। তাঁদের কাজকর্ম নিয়ে এলাকার মানুষদের বরাবরই সন্দেহ ছিল। নাজিরগঞ্জের ব্যবসায়ী মাসুদ আলম খানের অভিযোগ, আরিয়ানের একটি বোন ছিল। মা এবং দাদার কাজকর্মের কথা জানতে পেরে আত্মহত্যা করে সে। মাসুদের কথায়, ‘‘আমার মেয়ে এবং আরিয়ানের বোন ঈশিকা একই সঙ্গে পড়াশোনা করত। ঈশিকা আত্মহত্যা করে। কারণ, ওর মা ও দাদা ওকে খারাপ পথে নামতে বাধ্য করছিল।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই ঘটনার পরে (আত্মহত্যা বলে দাবি) আমার কাছ থেকে কোটি টাকা চেয়েছিল শ্বেতা খান। বলেছিল, ‘টাকা না দিলে আমার ছেলেকে ফাঁসানো হবে এবং পরে সেটাই করেছিল।’’ এই সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের পাকড়াও করার চেষ্টা চলছে। সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। অন্য দিকে, রবিবার জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা অর্চনা মজুমদার আনন্দবাজার ডট কমকে বলেছেন, ‘‘আমরা এই জঘন্য ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছি এবং স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করেছি। জাতীয় মহিলা কমিশনে অভিযোগ হিসাবে এই ঘটনার কথা নথিভুক্ত করা হয়েছে। আমরা স্থানীয় থানাকে সে কথা জানাব এবং দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার বিষয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করতে বলব।’’ অর্চনা অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের কোনায় কোনায় লাগাতার মহিলাদের উপরে জঘন্য অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গের মহিলারা সামগ্রিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করবেন। মহিলাদের নিরাপত্তা বলতে আর কিছু থাকবে না। তাই এ রকম কোনও ঘটনার খবর পেলেই আমরা কঠোরতম পদক্ষেপ করার পথে হাঁটব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.