‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতীয় সেনা ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল, নিশানা ছিল পাক বিমানঘাঁটি, দাবি করলেন শাহবাজ় শরিফ

‘অপারেশন সিঁদুর’-পর্বে পাক সেনার প্রত্যাঘাতের আগেই হামলা চালাতে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ভারত। নিশানায় ছিল পাক বায়ুসেনার ঘাঁটি। ৯-১০ তারিখের রাতে আচম্বিতে সেই হামলা হয়েছিল বলে দাবি করলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ।

ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতপর্বে সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া দেশ আজ়েরবাইজানে গিয়ে শাহবাজ় বলেন, ‘‘আমাদের বিমানঘাঁটি নিশানা করে প্রায় ১৫টি ব্রহ্মস ছুড়েছিল ভারত। আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। ওদের পরিকল্পনা ছিল ভোরে আমাদের সেনার নমাজ়ের সময় হামলা চালানো। যদিও রাত থেকেই শুরু হয়েছিল।’’ শাহবাজ়ের দাবি, পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির প্রথম তাঁকে ফোন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে অবহিত করেছিলেন।

পহেলগাঁও কাণ্ডের প্রত্যাঘাত হিসাবে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ কোন কোন অস্ত্র ব্যবহার হয়েছিল, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে এখনও। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ভারতীয় সেনা সরাসরি এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে উত্তররপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আগেই দাবি করেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ব্রহ্মস ব্যবহার করে পাক সামরিক ঠিকানায় আঘাত হেনেছিল ভারতীয় সেনা। তবে ব্রহ্মসের নাম না করলেও ১০ জুন সকালে পাক সেনা জানিয়েছিল, সে দেশের রাজধানী রাওয়ালপিন্ডি এবং পঞ্জাব প্রদেশে (আদতে পঞ্জাব প্রদেশের অংশ হলেও রাজধানী রাওয়ালপিন্ডি পৃথক ‘প্রশাসনিক ক্ষেত্র’) ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

সামরিক কৌশলগত দৃষ্টিতে তিনটি অবস্থান ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ বলে জানিয়েছিলেন পাক সেনার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর (আইএসপিআর)-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি। এ প্রসঙ্গে রাওয়ালপিন্ডির নূর খান, শোরকোটের রফিকি এবং চাকওয়ালের মুরিদ বিমানঘাঁটির নাম করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁর দাবি ছিল, হামলায় পাক বিমানবহরের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যদিও ১৫ মে পাক বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল মাসুদ আখতার জানিয়েছিলেন, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৯ মে গভীর রাতে ইসলামাবাদের ভালোরী বিমানঘাঁটিতে পাকিস্তানের একটি ‘এয়ারবোর্ন ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম’ (অ্যাওয়াক্স) সম্বলিত বিমান ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

শাহবাজ় অবশ্য সুনির্দিষ্ট ভাবে কোনও বিমানঘাঁটির নাম করেননি। তবে ‘অপারেশন সিঁদুর’-পরবর্তী সংঘাতপর্বের সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশ জানিয়েছিল, পাক বায়ুসেনার রসদ সরবরাহের প্রাণকেন্দ্র নূর খানে আঘাত হেনেছে ব্রহ্মস। প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মুর পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই জঙ্গিদমন নিয়ে সুর চড়াতে শুরু করে ভারত। প্রত্যাঘাত হিসাবে গত ৭ মে রাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ন’টি জঙ্গিঘাঁটি উড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। লক্ষ্য করা হয়েছিল মূলত জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম) এবং লশকর-এ-ত্যায়বার (এলইটি) গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি এবং লঞ্চিং প্যাড। ১০ জুন সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম জানিয়েছিলেন, দু’পক্ষ যুদ্ধিবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তার পরে ভারত এবং পাকিস্তান সেনা পৃথক বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতির কথা জানিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.