দক্ষিণ চিন সাগরে একাধিপত্যের দাবি থেকে এক ইঞ্চিও সরছে না বেজিং। বিতর্কিত এলাকার দখলদারি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর শি জিনপিং সরকার এ বার সরাসরি হুঁশিয়ারি দিল পড়শি দেশ ফিলিপিন্সকে।
গত মঙ্গলবার থেকে পালাওয়ান এবং অক্সিডেন্টাল মিন্দরোর উপকূলবর্তী এলাকায় যৌথ ভাবে যুদ্ধ-মহড়া চালাচ্ছিল আমেরিকা এবং ফিলিপিন্সের নৌসেনা। কাগজে কলমে আন্তর্জাতিক জলসীমা হলেও দীর্ঘ দিন ধরেই ওই চিনের দাবি, ওই এলাকা তাদের। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বিকেলে ওই এলাকায় চিন এবং ফিলিপিন্সের দু’টি জাহাজের মুখোমুখি সংঘর্ষের পরে উত্তজনা ছড়ায় দক্ষিণ চিন সাগরে।
চিনা বিদেশ দফতরের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ফিলিপিন্স দক্ষিণ চিন সাগরে সীমারেখা লঙ্ঘন এবং উস্কানি দেওয়া’ অবিলম্বে বন্ধ না করলে চিনের কড়া প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে।’’ প্রসঙ্গত, ‘মেরিটাইম কোঅপারেটিভ অ্যাকটিভিটি’ (এমসিএ) নামে আমেরিকা ফিলিপিন্স যৌথ মহড়ায় ফিলিপিন্সের নৌ ও বায়ুসেনার পাশাপাশি উপকূলরক্ষী বাহিনী অংশ নিয়েছে। পেন্টাগত ‘স্ট্র্যাটন’ যুদ্ধজাহাজের পাশাপাশি পাঠিয়েছে ‘পি-৮এ পোসেইডন’ সামুদ্রিক টহলদারি বিমান।
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চিনকে চাপে রাখার জন্য ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে আমেরিকা ‘কোয়াড’ (চতুর্দেশীয় অক্ষ) গড়েছিল আগেই। বছর কয়েক আগে দক্ষিণ চিন সাগরকে ‘পাখির চোখ’ করে পেন্টাগন জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিপিন্সকে নিয়ে নতুন সামরিক জোট ‘স্কোয়াড’ গড়েছে। জোটে ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে বলে সম্প্রতি ফিলিপিন্স সরকার ইঙ্গিত দিয়েছিল। ঘটনাচক্রে, তার পরেই ম্যানিলাকে নিশানা করল বেজিং।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ চিন সাগরের অধিকাংশ এলাকাই নিজেদের অংশ বলে দাবি করে বেজিং। তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে ফিলিপিন্স, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেইয়ের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে একদলীয় চিনের কমিউনিস্ট শাসকগোষ্ঠীর বিরোধও রয়েছে। ফিলিপিন্স এবং চিনের বিরোধের অন্যতম কারণ দক্ষিণ চিন সাগরের সেকেন্ড টমাস শোলে দ্বীপকে কেন্দ্র করে। ফিলিপাইন দ্বীপের পালাওয়ান থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওই দ্বীপে ১৯৯৯ সালে ফিলিপিন্স নৌবাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি জাহাজে অস্থায়ী নৌঘাঁটি বানিয়ে অবস্থান নিয়েছিল প্রায় দু’দশক আগে।
২০১২ সালে ফিলিপিন্সের কাছ থেকে স্কারবরো শোলে দ্বীপের দখল নিয়েছিল চিনা পিপল্স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। যা নিয়ে দু’দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ২০১৬ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের মোট বাণিজ্যসামগ্রীর প্রায় ২১ শতাংশ দক্ষিণ চিন সাগরের সমুদ্রপথ দিয়ে পরিবহণ করা হয়। বিগত কয়েক বছরে সেই পরিমাণ আরও বেড়েছে। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে চিনের সংঘাতের পারদ চড়ছে। এই আবহে ফিলিপিন্সের সঙ্গে মার্কিন নৌমহড়া আমেরিকা-বেজিং সম্পর্কে নতুন উত্তেজনার অনুঘটক হতে পারে বলে মনে করছে সামরিক ও কূটনৈতিক মহলের একাংশ।