ব্যর্থতা কাটিয়ে রানে ফিরল বৈভব সূর্যবংশী। কিন্তু দলকে জেতাতে ব্যর্থ সে। ১৫ বলে ৪০ রানের ইনিংস কাজে এল না। শুরুটা ভাল করেও সেই হারতে হল রাজস্থান রয়্যালসকে। জিতে আইপিএলের প্লে-অফের দিকে এক পা এগিয়ে গেল পঞ্জাব কিংস। আগে ব্যাট করে ২১৯/৫ তুলেছিল পঞ্জাব। রাজস্থান আটকে গেল ২০৯/৭ স্কোরে।
পুরনো রোগে আবার আক্রান্ত রাজস্থান। চলতি মরসুমে রান তাড়া করতে নেমে সহজ জায়গা থেকেও পরিস্থিতি কঠিন করে হেরেছে তারা। রবিবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বৈভব এবং যশস্বী জয়সওয়াল মিলে শুরুটা এত ভাল করা সত্ত্বেও ডুবিয়ে দিলেন মিডল অর্ডারের ব্যাটারেরা। ধ্রুব জুরেল বাদে কেউ দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারলেন না। আইপিএল থেকে আগেই বিদায় নিয়েছে রাজস্থান। ঘরের মাঠে নিজেদের শেষ ম্যাচেও মুখরক্ষা করতে পারল না তারা। চলতি মরসুমে রাজস্থান চারটি ম্যাচ তারা হারল ১০ রান বা তারও কম ব্যবধানে। একটি হেরেছে সুপার ওভারে।
গুজরাতের বিরুদ্ধে শতরান করার পর বৈভবের ব্যাটে রান ছিল না। ব্যর্থ হয়েছিল মুম্বই এবং কলকাতার বিরুদ্ধে। সেই বৈভব আবার রানে ফিরল। সেই জয়পুরেই, যেখানে শতরান করে গোটা বিশ্বের নজরে চলে এসেছিল সে।
২২০ রান তাড়া করতে নামলে যে কোনও দলই চাপে থাকে। তবে প্রথম ওভারে অর্শদীপ সিংহের ওভার থেকে ২২ রান নিয়ে শুরুটা ভালই করেছিলেন যশস্বী। বৈভবও শুরু থেকেই আগ্রাসী খেলতে শুরু করে। মার্কো জানসেনের দ্বিতীয় বলই লং অনের উপর দিয়ে উড়ে যায়। সেই ওভারেই আরও একটি চার এবং ছয় আসে তার ব্যাট থেকে।
রেহাই পাননি অর্শদীপও। চতুর্থ ওভারে তাঁকে একটি চার এবং দু’টি ছয় মারে বৈভব। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞ হরপ্রীত ব্রার তুলে নেন ১৪ বছরের ক্রিকেটারকে। আউট হওয়ার পর বিস্ময়ে কিছু ক্ষণ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বৈভব। ভাবছিল, আরও একটা বড় ইনিংস মাঠে ফেলে আসতে হল কি না।
উল্টো দিকে যশস্বী চার-ছয় ছাড়া কথাই বলছিলেন না। অর্শদীপের প্রথম ওভারে চারটি চার এবং একটি ছয় মারেন। ছাড় পাননি জেভিয়ার বার্টলেটও। যশস্বী দৌড়ে প্রথম রান নেন ১৪তম বলে! তখন মনে হয়েছিল, বৈভব বড় রান না পেলেও সেই জায়গা পূরণ করে দেবেন যশস্বী।
কিন্তু জয়পুরের গরম তাঁকে ক্লান্ত করে দেয়। পরে বেশ কয়েকটি খুচরো রান নেওয়ার সময় হাঁফাতে দেখা যাচ্ছিল রাজস্থানের ওপেনারকে। অর্ধশতরানের পরের বলেই হরপ্রীতকে যে শটটি মেরে আউট হলেন তাতে সে রকম জোরই ছিল না। মিচেল ওয়েনের ক্যাচ ধরতে অসুবিধাই হয়নি।
বৈভবের পর যশস্বীও ফেরায় দলকে জেতানোর দায়িত্ব ছিল মিডল অর্ডারের। একমাত্র জুরেল (৫৩) বাদে কেউ রুখে দাঁড়াতে পারলেন না। সঞ্জু স্যামসন চোট সারিয়ে এই ম্যাচেই দলে ফিরেছিলেন। তিনে নেমে তাঁর অবদান মাত্র ২০। রিয়ান পরাগ করেন ১১। শিমরন হেটমায়ারের মতো বড় শট খেলা ব্যাটারও ১২ বলে ১১ রানের বেশি করতে পারেননি।
জয়ের পিছনে পঞ্জাবের দুই বোলারের কৃতিত্ব প্রাপ্য। হরপ্রীত চার ওভারে ২২ রানে ৩ উইকেট নেন। যুজবেন্দ্র চহল চার ওভারে উইকেট না পেলেও মোটে ২২ রান দেন। ওখানেই খেলা ঘুরে যায়।
তার আগে, পঞ্জাব দুশো রানের গন্ডি পেরিয়েছে দুই ব্যাটারের সৌজন্যে। তাঁরা হলেন নেহাল ওয়াধেরা এবং শশাঙ্ক সিংহ। আইপিএলের প্রথম পর্বে চর্চা হচ্ছিল পঞ্জাবের দুই ওপেনারকে নিয়ে। প্রিয়াংশ আর্য এবং প্রভসিমরন সিংহ শুরুটা এতই ভাল করছিলেন যে পরের দিকের ব্যাটারদের চাপ কমে যাচ্ছিল।
এ দিন জয়পুরে উল্টো চিত্র। ব্যর্থ পঞ্জাবের দুই ওপেনারই। তিন ওভারের মধ্যে দু’জনই সাজঘরে। আর্য (৭) এবং প্রভসিমরনের (২১) পর ওয়েনকে (০) হারিয়ে এক সময় চাপে পড়েছিল পঞ্জাব। ৩৪ রানে হারিয়েছিল ৩ উইকেট।
সেখান থেকে হাল ধরেন নেহাল এবং অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার। পঞ্জাবের ক্রিকেটার ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছেন। দলের বিপদের দিনে তাঁকে আরও এক বার রক্ষাকর্তা হয়ে উঠতে দেখা গেল। তার জন্য আগ্রাসনের রাস্তা থেকে সরেননি।
নেহালের ব্যাটিং দেখে নিজেকে সংযত রেখেছিলেন শ্রেয়স। নেহালকে আরও বেশি বল খেলার সুযোগ করে দিচ্ছিলেন। সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে যান নেহাল। পাঁচটি চার এবং পাঁচটি ছয় মেরে ৩৭ বলে ৭০ করেন। নেহাল ফেরার পর রান করার দায়িত্ব তুলে নেন শশাঙ্ক সিংহ। রাজস্থানের বোলারদের উপর দাপট দেখিয়ে তিনি ৩০ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন। দলকে দুশো পার করানোর নেপথ্যে তাঁরই ইনিংস।