পাকিস্তানের জন্য আট হাজার কোটি টাকার (ভারতীয় মুদ্রায়) বাড়তি ঋণ মঞ্জুর করেছে আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ)। ইতিমধ্যে প্রথম দুই কিস্তির টাকাও ইসলামাবাদ পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী কিস্তির টাকা দেওয়ার আগে তাদের উপর ১১টি শর্ত চাপিয়েছে আইএমএফ। শনিবার এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট তারা প্রকাশ করেছে। ওই রিপোর্ট এবং এক্সপ্রেস ট্রিবিউন সংবাদপত্রকে উল্লেখ করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই রবিবার ১১টি শর্তের কথা জানিয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ঋণের জন্য পাকিস্তানকে আগে থেকেই ৩৯টি শর্ত দিয়ে রেখেছিল আইএমএফ। আরও ১১টি শর্ত চাপানোর ফলে মোট শর্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০। এই ৫০টি শর্ত পূরণ করলেই ঋণের পরবর্তী কিস্তির টাকা ইসলামাবাদ হাতে পাবে।
আইএমএফের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ২০২৬ অর্থবর্ষের বাজেট আইএমএফের চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে এবং তাতে সংসদীয় অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে। পাকিস্তানের ফেডেরাল বাজেটে ১৭ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেখিয়েছে আইএমএফ, তাতে শুধু উন্নয়নের জন্যই খরচ করতে বলা হয়েছে ১.০৭ লক্ষ কোটি টাকা। এ ছাড়া, পাকিস্তানের যে প্রদেশগুলিতে নতুন কৃষি আয়কর আইন বাস্তবায়ন করার কথা, সেখানে আয়কর রিটার্নের প্রক্রিয়াকরণ, করদাতাদের শনাক্ত করা এবং নথিভুক্ত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করতে বলা হয়েছে। সময় দেওয়া হয়েছে জুন মাস পর্যন্ত।
আইএমএফের সুপারিশ অনুযায়ী, পাকিস্তান সরকারকে একটি নির্দিষ্ট প্রশাসনিক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং তা প্রকাশ করতে হবে। প্রশাসনিক দুর্বলতাগুলিকে চিহ্নিত করে সংস্কারের পরিকল্পনা জনসমক্ষে তুলে ধরাই এর উদ্দেশ্য। ২০২৭ সালের পরে অর্থনৈতিক সেক্টরে পাকিস্তানের পরিকল্পনা কী হবে, তার একটি রূপরেখাও তৈরি করতে বলা হয়েছে ইসলামাবাদকে। ওই রূপরেখাও প্রকাশ করতে হবে।
বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে চারটি নতুন শর্ত আরোপ করা হয়েছে পাকিস্তানের উপর। চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের মধ্যে পাক সরকারকে বার্ষিক বিদ্যুৎ শুল্ক পুনর্নির্ধারণের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। এ ছাড়া, পাকিস্তানে বিদ্যুতের ঋণ পরিশোধের বাড়তি খরচের সর্বোচ্চ সীমা ইউনিট প্রতি ৩.২১ টাকা। জুন মাসের মধ্যে আইন করে এই সীমা তুলে দিতে হবে। আইএমএফের বক্তব্য, পাকিস্তানের উপর ঋণের যে বোঝা চেপেছে, তার জন্য সরকারের ভুল নীতিই দায়ী।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং তৎপরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারত। হামলা-পাল্টা হামলায় টানা চার দিন সীমান্ত উত্তপ্ত থেকেছে। গত ১০ মে দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এর মাঝেই পাকিস্তানের জন্য বিপুল অঙ্কের ঋণ মঞ্জুর করে আইএমএফ। এ বার চাপানো হল শর্তও।