মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। প্রতিবারই টপারদের সাক্ষাৎকার দেখা যায় ডিজিটালে, কিছু ক্ষেত্রে সংবাদপত্রেও। যখন সরাসরি রিপোর্টিংয়ে ছিলাম, অবকাশ ছিল টপারদের যোগাযোগের নম্বর সংকলিত করে রাখার। সেটা করা হয়নি। ভাবলাম, অতীতের টপাররা পরবর্তীকালে কে, কী ধরণের কাজ করেছেন? আমি ১৯৭৪-এর এইচ এস ব্যাচ। পড়তাম বালিগঞ্জ গভর্নমেন্টে। এইচ এস-এর দু’জন টপার গৌতম রায় ও অনির্বান চট্টোপাধ্যায়কে পরবর্তীকালে আনন্দবাজার পত্রিকায় পেয়েছি সাংবাদিক সহকর্মী হিসাবে। আমার সময়কালে ওই সংস্থার অন্য বিভাগেও ছিলেন একাধিক টপার। বিশদে যাচ্ছিনা।
তখন এইচ এস-এ ঘোষণা হত ফলাফলের নিরিখে প্রথম ১০ জনের নাম। এখন বহু বছর ধরে প্রথম ২০ জনের নাম-তালিকা প্রকাশিত হয়। ’৭৪-এ ওই পরীক্ষায় ফার্স্ট হল বালিগঞ্জ গভর্নমেন্টের আমাদের এক সহপাঠী অঞ্জন। থার্ড সোমপ্রকাশ। যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেল। জেনেছিলাম অঞ্জন বিদেশে চলে গিয়েছে। অন্তর্জালে সোমপ্রকাশের জীবনী পেয়ে গেলাম। “PhD in Computer Science from
JU, Kolkata and B.Tech in Electronics
and Electrical Communication Engineering from Indian Institute of
Technology, Kharagpur. a post doctoral
fellow of the Alexander von Humboldt Foundation, Germany and a fellow
of Japan Trust International Research
Cooperation Program.”
সোমপ্রকাশ ওর গত চার দশকের কাজ সম্পর্কে একটা সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট করেছে। আগ্রহীরা সেটা দেখলে হয়তো ঋদ্ধ হবেন। ২১বছর ও আইআইএম-এ অধ্যাপনা করেছে। ওর কীর্তি পড়তে পড়তে মনে পড়ল আর এক অত্যন্ত মেধাবীর কথা— সুব্রত গুপ্ত। এইচ এস-এ নয়, উনি ছিলেন দিল্লি বোর্ডে। পরীক্ষার ফলাফলে প্রায় ওপরদিকেই ছিল নাম। পড়াশোনাও প্রায় একই ক্ষেত্রে। আইআইটি-র ’৮৩-র ব্যাচ। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনে। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে রেডার প্রযুক্তি গুলে খাওয়া। বেশ কয়েক বছর পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের দায়িত্বে ছিলেন। আপাতত দিল্লিতে, কেন্দ্রীয় সরকারের সচিব। ৩১ মে অবসর।
’৭৬-এর মাধ্যমিকে যে ছাত্রটি পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় হয়েছিলেন, পরবর্তীকালে তাঁকেও পেয়েছিলাম আনন্দবাজার পত্রিকার সহকর্মী ও বন্ধু হিসাবে। ’৮৬-তে তিনি ইউপিএসসি-তে বসেন। ’৮৭-র ব্যাচ (যোগদান)। Post training all india rank ছিল ৩৫। তাঁর নাম আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিব হয়েছিলেন, এখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান পরামর্শদাতা।
খবর করার সূত্রে বিভিন্ন পরীক্ষায় টপার/অতি উজ্জ্বল ফল করা অনেকের কথা জেনেছি। লিখে রাখিনি। তাই ভুলে গিয়েছি। কোনও উদ্যমী যদি প্রতি বছর স্কুলের শেষ পরীক্ষায় প্রথম তিনজনের নাম/নম্বর, পরবর্তীকালের পড়াশোনা ও তাঁদের কাজ নিয়ে প্রামান্য তথ্য সংকলন করেন, সেটায় অনেকে জানার সুযোগ পাবেন।
শেষে বলি, পরীক্ষায় অতি উজ্জ্বল ফলের ওপর দুর্বলতাজনিত কারণে এসব লিখে ফেললাম। একবারও কিন্তু বলছি না, টপার মানেই তিনি সর্বোত্তম, তাঁর জীবন সোনা দিয়ে বাঁধানো, বা পড়াশোনায় (আমার মতো) খারাপ হলেই কারও জীবন বৃথা। ঘষে ঘষে পাশ করা অনেকেই (আমার মতো) যথেষ্ট ভালো প্রতিষ্ঠানে মনের মতো কাজ করে দিব্যি দিব্যি ছিলেন, বা আছেন। তাঁরাও কবির ভাষায় বলতে পারেন, “আমার মতন সুখী কে আছে”, বা “সুখী হৃদয়ের সুখের গান শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ।”
—অশোক সেনগুপ্ত, ৪-৫-২০২৫।