আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডলের নামই বাদ! এসএসসির ‘যোগ্য’ তালিকা দেখে কী বলছেন তিনি?

স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) চাকরিহারাদের আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। গত কয়েক দিনে বার বার উঠে এসেছেন খবরে। চাকরিহারাদের বিক্ষোভে তাঁকে প্রথম সারিতে দেখা গিয়েছে। সেই চিন্ময় মণ্ডলের নামই নেই এসএসসির দেওয়া ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের তালিকায়! নতুন করে ১৮০৩ জনকে বাদ দিয়ে মোট ১৫ হাজার ৪০৩ জনের তালিকা প্রস্তুত করেছে কমিশন। মঙ্গলবার রাত থেকে সেই তালিকা বিভিন্ন জেলার ডিআই দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকাতেই নিজের নাম খুঁজে পাননি চিন্ময়। জানিয়েছেন, নতুন এই তালিকায় কিছু অসঙ্গতি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ শুধু তিনি নন, ‘যোগ্য’ বলে যাঁরা নিজেদের দাবি করছেন, তাঁদের অনেকেরই নাম ওই তালিকায় নেই। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা এসএসসির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান বলে জানিয়েছেন চিন্ময়।

‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ বা ‘দাগি’ নন, এমন ১৭ হাজার ২০৬ জন শিক্ষকের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেই তালিকা সুপ্রিম কোর্টেও জমা দেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পরে সেখান থেকে আরও ১৮০৩ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র-সহ একাধিক বিষয়ে সমস্যা রয়েছে বলে জানতে পেরেছে পর্ষদ। তাঁদের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকায় শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১৫,৪০৩। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই শিক্ষকেরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন এবং বেতন পাবেন। তাঁদের নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দিতে হবে, যে নিয়োগপ্রক্রিয়া চলতি বছরের মধ্যে শেষ করতে বলেছে শীর্ষ আদালত।

স্কুলে স্কুলে এই শিক্ষকদের তালিকা পৌঁছে যাওয়ার পর আন্দোলনকারীরাও তা দেখতে পেয়েছেন। চিন্ময় বুধবার বলেন, ‘‘যোগ্যদের তালিকায় কিছু অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে। মামলাকারী অনেকের নামই নেই। আমার নামও নেই। সাধারণ ভাবে যাঁরা একটি স্কুলে চাকরি করতে করতে পরে অন্য স্কুলে বদলি নিয়েছেন, সেই তথ্য কমিশনের কাছে নেই। ওরা প্রথম স্কুলের কাছেই তালিকা পাঠিয়েছে। তবে আমার নাম প্রথম বা দ্বিতীয়, কোনও স্কুলের কাছেই আসেনি। এর কী কারণ, কী ব্যাখ্যা আমার জানা নেই। কী এমন ঘটল যে আমাদের নাম বাদ পড়ে গেল, বুঝে উঠতে পারছি না।’’

তাহলে এখন কী করবেন? চিন্ময় বলেন, ‘‘যাঁরা নিজেদের যোগ্য বলে দাবি করছেন, কিন্তু তালিকায় নাম আসেনি, আমরা তাঁদের নাম সংগ্রহ করছি। একটি তালিকা তৈরি করছি। এসএসসিকে সেই তালিকা পাঠাব। যোগ্যরা যাতে চাকরি ফিরে পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।’’

চাকরিহারাদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ মেহবুব মণ্ডল। নতুন তালিকায় তাঁর নাম অবশ্য রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। অনেকে বদলি নিয়েছিলেন। কোন স্কুলে তাঁর নাম যাবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া কিছু প্রযুক্তিগত ত্রুটিও থাকতে পারে। গুগ্‌ল ফর্মের মাধ্যমে এই ধরনের শিক্ষকদের নাম, রোল নম্বর সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসএসসির সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা হবে।’’ মেহবুব আরও বলেন, ‘‘যাঁরা যোগ্য, যাঁরা ‘দাগি’ নন, আমরা তাঁদের সঙ্গে আছি। আমরা সমস্ত নথি, সিবিআইয়ের চার্জশিট, উত্তরপত্র যাচাই করে মামলাকারীদের তালিকা বানিয়েছিলাম। তাঁদের মধ্যে কেউ ভুয়ো নেই। অযোগ্য নেই। নিশ্চিত ভাবেই এই তালিকায় প্রযুক্তিগত ত্রুটি রয়েছে।’’

এসএসসি তালিকা প্রকাশ করায় আন্দোলনরত চাকরিহারারা এ বার স্কুলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। গরমের ছুটির আগেই স্কুলে যোগ দিতে পারেন তাঁরা। তবে আন্দোলন থেকে তাঁরা সরে আসবেন না। আগামী দিনে কী ভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন মেহবুব, চিন্ময়রা। পরে সেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.