পাটুলির যুবক পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় মৃত! ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বাক্‌রুদ্ধ স্ত্রী ফোনে কেঁদেই চলেছেন

‘হ্যালো!’

অপর প্রান্তে খানিক স্তব্ধতা।

আবার ‘হ্যালো’ বলে ‘কলকাতা থেকে সাংবাদিক বলছি’ বলতেই ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শোনা গেল। তার পর সেই নারীকণ্ঠ বলল, ‘‘আমি কিচ্ছু বলতে পারছি না…।’’ কয়েক সেকেন্ড পর কেটে গেল ফোনটা।

ফোনে ছিলেন কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা পাটুলির বাসিন্দা বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনী রায় অধিকারী। যিনি কয়েক ঘণ্টা আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। যিনি মঙ্গলবার দুপুরেও সন্তান এবং স্বামীকে নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হইহই করে ঘুরেছেন। বাড়িতে ফোন করে কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, কত সুন্দর সমস্ত জায়গা দেখছেন। কিন্তু তার পর সব কেমন হয়ে গেল। ভূস্বর্গ তাঁদের চোখের সামনে রক্তাক্ত হয়ে গেল। সোহিনী চোখের সামনে দেখলেন কী ভাবে জঙ্গির গুলি করে মেরে ফেলল তাঁর স্বামীকে!

মঙ্গলবার দুপুরে অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা প্রাণ নিয়েছে অন্তত ২৫ জনের। যার মধ্যে একজন পাটুলির বাসিন্দা বিতান। বিতানের বয়স ৪০ বছর। কর্মসূত্রে থাকতেন ফ্লোরিডায়। বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত যুবকের স্ত্রী সোহিনীও থাকেন সেখানে। গত ৮ এপ্রিল তাঁরা তিন বছরের পুত্র হৃদানকে নিয়ে কলকাতার বাড়িতে ফিরেছিলেন। গত ১৬ এপ্রিল তিন জনে জম্মু-কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন। কলকাতায় ফেরার কথা ছিল আগামী বৃহস্পতিবার। কিন্তু মঙ্গলবার বাড়িতে এল দুঃসংবাদ।

মঙ্গলবার সকালে বিতানরা গিয়েছিলেন পহেলগাঁও। জম্মু-কাশ্মীর বেড়াতে গেলে পর্যটকদের জন্য অবশ্য-দর্শনীয় বৈসরন উপত্যকা পহেলগাঁওয়ে। ‘মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড’ হিসাবে পরিচিত সবুজে ঢাকা যে জায়গা মঙ্গলবার জঙ্গিহানায় রক্তাক্ত। উপত্যকা জুড়ে শুধু নিরীহ মানুষের কান্না আর আর্তনাদের প্রতিধ্বনি।

অভিযোগ, নামধাম জিজ্ঞাসা করে পাঁচ-ছ’জন জঙ্গি একের পর এক পর্যটককে গুলি করে মেরেছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কলকাতার বিতানও। তাঁর বাবার কথায়, ‘‘আমাদের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যেতে চেয়েছিল। আমি বললাম, ‘বৌমাকে নিয়ে ঘুরে আয়।’ প্রতিদিন ফোনে কথা হত। আজও (মঙ্গলবার) বেশ কয়েক বার কথা হয়েছে। দুপুরেও কথা বলেছি… তার পর যে কী হয়ে গেল।’’

হাহাকার করে ওঠেন সদ্য পুত্রহারা বৃদ্ধ। বিতানের স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে বিতানের পাটুলির বাড়িতে পাঠিয়েছেন তিনি। সমাজমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিতানের দেহ কলকাতায় ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার পরিবারগুলির প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। নিহতদের মধ্যে একজন বিতান অধিকারী এই বাংলারই বাসিন্দা। আমি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। যদিও এই শোকের মুহূর্তে তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনও শব্দই যথেষ্ট নয়। আমি তাঁকে আশ্বস্ত করেছি যে, আমার সরকার তাঁর স্বামীর দেহ কলকাতার বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য সমস্ত পদক্ষেপ করছে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.