ধোনির ব্যর্থতাই কি চেন্নাইয়ের হারের একমাত্র কারণ? খুঁজে দেখল আনন্দবাজার ডট কম

চলতি আইপিএলে খারাপ ফর্মে রয়েছে চেন্নাই। প্রথম ম্যাচে জেতার পর থেকে হেরেই চলেছে তারা। শেষ চারটি ম্যাচে হেরেছে তারা। শুধু তাই নয়, প্রতিটি হারই এসেছে রান তাড়া করতে গিয়ে। এ বার ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে এই মরসুমেও আইপিএলের প্লে-অফে উঠতে পারবে না চেন্নাই। কোথায় সমস্যা হচ্ছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের? খোঁজার চেষ্টা করল আনন্দবাজার ডট কম।

১) টপ অর্ডারের ব্যর্থতা

চেন্নাইয়ের টপ অর্ডারে রয়েছেন রাচিন রবীন্দ্র, ডেভন কনওয়ে, রুতুরাজ গায়কোয়াড়, রাহুল ত্রিপাঠীর মতো ব্যাটার। তবু শুরুটা ভাল হচ্ছে না তাঁদের। চার জনের বেশি বিদেশি খেলানো যাবে না। রাচিন এবং কনওয়ের মধ্যে তাই বাধ্য হয়ে এক জনকে বেছে নিতে হচ্ছে। যে দিন দু’জনে খেলেছেন সেই ম্যাচেও সাফল্য আসেনি। সাফল্য পেতে গেলে যে কোনও এক জনকে অন্তত ১৫ ওভার পর্যন্ত ক্রিজ়ে থাকতে হবে। চলতি মরসুমে তা এক বারও হয়নি। দিল্লির বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে তিন জনই পাওয়ার প্লে-র আগে সাজঘরে ফিরে যান। কোচ স্টিফেন ফ্লেমিংও হতাশ হয়ে বলেছেন, “অন্তত এক-দু’জনকে দরকার যারা ফর্মে রয়েছে। বাকি দলগুলোর প্রথম চার ব্যাটারই সবচেয়ে বেশি রান করছে। আমরা সেখানেই মার খাচ্ছি।”

২) রান তাড়ায় সমস্যা

চেন্নাইয়ের চারটি ম্যাচেই হার এসেছে রান তাড়া করতে গিয়ে। ২০২০ সালের পর থেকে চেন্নাই কোনও দিন ১৮০-র বেশি রান তাড়া করে জিততে পারেনি। এ বারও সেটাই হচ্ছে। রাজস্থান ১৮২ এবং দিল্লি ১৮৩ তুললেও চেন্নাই তার আগেই আটকে গিয়েছে। ধোনি আর আগের মতো ‘ফিনিশার’ নেই তা এত দিনে স্পষ্ট। কিন্তু তাঁর জায়গা নেওয়ার মতো কোনও ক্রিকেটারও তৈরি হননি। রুতুরাজ বাদে চেন্নাইয়ের কোনও ব্যাটারের স্ট্রাইক রেট দেড়শোর উপরে নেই। শেষ দিকে এতটাই চাপ তৈরি হচ্ছে যে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। প্রাক্তন ক্রিকেটার ওয়াসিম জাফর বলেছেন, “শুরুতে অনেকগুলো উইকেট হারাচ্ছে ওরা। খারাপ ফর্ম, খারাপ শট নির্বাচন না কি দল নির্বাচনের গলদ, কোথায় সমস্যা সেটা বোঝা যাচ্ছে না। ক্রিকেটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব স্পষ্ট।”

৩) খারাপ ফিল্ডিং

চেন্নাইকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে আরও একটি দুঃস্বপ্ন। তা হল খারাপ ফিল্ডিং। মাত্র পাঁচটি ম্যাচ হয়েছে। এর মধ্যেই ১১টি ক্যাচ ফেলেছে তারা। লোপ্পা ক্যাচও ফস্কেছেন রাচিন, মুকেশ চৌধরিরা। জীবন পেয়ে রান করে যাচ্ছেন সেই ব্যাটারেরা। রান আটকানোর ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সক্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে না চেন্নাইয়ের ক্রিকেটারদের মধ্যে। পঞ্জাব ম্যাচে হারের পর বিরক্ত রুতুরাজ বলেন, “শেষ চারটে ম্যাচে ফিল্ডিংই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ফেলে দেওয়া ক্যাচের জন্যই হেরেছি। সেই ব্যাটার ১৫, ২০ বা ৩০ রান করে দিয়েছে।” খুশি হননি কোচ ফ্লেমিংও। তিনি বলেন, “ফিল্ডিংয়েই ম্যাচটা হেরে গেলাম। প্রচণ্ড শ্লথ ছিলাম। চাপের মুখে নিখুঁত খেলাটাই খেলতে পারিনি। ক্যাচ ফস্কানো আমাদের কাছে বড় চিন্তার জায়গা। ওই কারণেই বাড়তি ২০ রান হজম করতে হয়েছে।”

৪) ঘরের মাঠের সুবিধা নিতে না পারা

ঘরের মাঠে এত দিন চেন্নাই অপ্রতিরোধ্য ছিল। বিপক্ষ দলের মাঠে যা-ই হোক, ঘরের মাঠে সাতটির মধ্যে সব ক’টি জেতার লক্ষ্য নিয়েই নামত তারা। দলও গড়া হত সে ভাবেই। কিন্তু এ বার তা দেখা যাচ্ছে না। চিপকে দু’টি ম্যাচ খেলে দু’টিতেই হেরেছে তারা। তার মধ্যে বেঙ্গালুরুর কাছে ১৭ বছর পর হারতে হয়েছে। দিল্লির কাছে ১০ বছর পর। ঘরের মাঠের সুবিধা তোলার জন্য যেমন ক্রিকেটার দরকার তা যে চেন্নাই দলে নেই, সেটা প্রতি ম্যাচেই বোঝা যাচ্ছে। বেঙ্গালুরুর কাছে হারের পর রুতুরাজ বলেছিলেন, “উইকেট মন্থর ছিল। বল পড়ে থামছিল। এই ধরনের উইকেটে রান করতে হলে পাওয়ার প্লে ব্যবহার করতে হয়। আমরাও সেটার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু প্রথম পাঁচ ওভারেই বল থামছিল। কেন জানি না এমনটা হল। চেন্নাইয়ের এই উইকেটে ব্যাট করা সত্যিই খুব কঠিন।”

৫) নিলামে ভুল সিদ্ধান্ত

পাঁচটি ম্যাচে দলের ১৭ জন ক্রিকেটারকে খেলিয়ে ফেলেছে চেন্নাই। বাকি দলগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। এতেই বোঝা যাচ্ছে দলটার এখনও প্রথম একাদশই তৈরি হয়নি। এর নেপথ্যে নিলামে ভুল সিদ্ধান্ত। নুর আহমেদকে চেন্নাইয়ের পিচের কথা মাথায় রেখে কেনা ভাল সিদ্ধান্ত। তেমনই খারাপটা হল, মিডল অর্ডারে বড় শট খেলার মতো ক্রিকেটার না কেনা। শিবম দুবে একেবারেই ফর্মে নেই। খারাপ অবস্থা দীপক হুডারও। রাচিন, কনওয়েকে খেলিয়ে ব্যাটিং গভীরতা বাড়াতে গিয়ে মার খাচ্ছে বাকি বিভাগগুলি। নুর এবং মাথিশা পাথারানাকে খেলাতে হচ্ছে। ফলে স্যাম কারেনের মতো বড় খেলা অলরাউন্ডার নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছেন না। বিজয় শঙ্করের উপর ভরসা করলে কী হয় তা ইতিমধ্যেই বোঝা গিয়েছে! ফর্মে নেই জেমি ওভার্টনও।

আইপিএলে আর ন’টি ম্যাচ বাকি চেন্নাইয়ের। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে এটা বলাই যায়, প্লে-অফে উঠতে আরও অন্তত সাতটি ম্যাচে জিততে হবে। চেন্নাইয়ের ফর্ম দেখে অবশ্য কেউই সেই আশা করছেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.