মাথা ফুলেছে আগের তুলনায়, পা-ও খানিক সরু হয়েছে! ন’মাস মহাকাশে কাটানোর পর পৃথিবীতে ফেরার পর নভশ্চর সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোরের শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবক্ষয় হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাঁরা সুস্থ। স্পেসএক্সের ক্যাপসুল থেকে হাসিমুখে বেরিয়ে আসেন দু’জনে। তবে তাঁরা এখনই বাড়ি ফিরতে পারবেন না। কাটাতে হবে নাসার বিশেষ বিশ্রামাগারে।
মহাকাশে পৃথিবীর কক্ষপথে মাধ্যাকর্ষণের কোনও অস্তিত্ব নেই। মহাকাশে কাটানোর জন্য সুনীতাদের শরীরও সেই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করে। কিন্তু পৃথিবীতে ফেরার পর আবার তাঁদের শরীরকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য তৈরি করতে হবে। তাই দু’জনকেই অন্তত ৪৫ দিন কাটাতে হবে ক্রু-কোয়ার্টারে। সেখানেই নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা চলবে তাঁদের।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকলে নভশ্চরদের শরীরে বিভিন্ন প্রভাব পড়তে পারে। হাড় এবং পেশির ক্ষয়, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, সহনশীলতার অভাব, ভারসাম্য বজায় রাখা-সহ নানা ধরনের সমস্যায় ভুগতে পারেন সুনীতারা। সেই কারণে তাঁদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। এত দিন শরীরে যে পরিমাণ ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করার কাজ করবেন বিশেষজ্ঞেরা। সুনীতাদের শরীরকে আবার পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ তাঁদের কাছে।
সুনীতাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। প্রতি দিন দু’ঘণ্টা করে করে চলবে বিভিন্ন শারীরিক কসরত। দীর্ঘ ৪৫ দিনের এই কর্মসূচিকে ভাগ করা হয়েছে কয়েকটি ভাগে। প্রথম ধাপে, শরীরে অ্যাম্বুলেশন, নমনীয়তা এবং পেশিশক্তি পুনরুদ্ধারের উপর জোর দেওয়া হয়। পরের ধাপে, কিছু বিশেষ ব্যায়াম করতে দেওয়া হবে সুনীতাদের। তবে তৃতীয় পর্যায়টি দীর্ঘস্থায়ী এবং গুরুত্বপূর্ণ। এই ধাপে বিশেষজ্ঞেরা নজর রাখবেন সুনীতাদের শারীরিক বিকাশের দিকে। পরীক্ষার ফল প্রতি মুহুর্তে লিপিবদ্ধ করা হবে। তার ভিত্তিতেই পরিবর্তন করা হবে চিকিৎসা পদ্ধতি। একই সঙ্গে সুনীতাদের মন ভাল রাখার জন্য তাঁদের পছন্দের বিনোদনমূলক কার্যকলাপের উপরও জোর দেওয়া হবে। যত দিন পর্যন্ত না স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার শারীরিক এবং মানসিক ক্ষমতা অর্জন করবেন তত দিন পর্যবেক্ষণে থাকবেন সুনীতারা।
তবে সুনীতা এবং বুচ, বহু বাধা কাটিয়ে পৃথিবীতে ফেরায় খুশি বিশ্ববাসী। অধীর আগ্রহে তাঁরা দুই নভশ্চরের ফেরার প্রহর গুনছিলেন। বুধবার ভারতীয় সময় ভোর ৩টে ২৭ মিনিট নাগাদ তাঁদের নিয়ে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের মহাকাশযান ফ্লরিডার সমুদ্রে অবতরণ করে। তাঁদের স্থলভাগে আনার জন্য আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল মার্কিন নৌ সেনা বাহিনীর জাহাজ। ক্যাপসুল থেকে একে একে বেরিয়ে আসেন সুনীতা এবং বুচ। তার পর তাঁদের নিয়ে সোজা চলে যাওয়া হয় হিউস্টন জনসন স্পেস সেন্টারে। সেখানকার ক্রু-কোয়ার্টারই এখন সুনীতাদের বর্তমান ঠিকানা।