শুরুটা হয়েছিল উপকূলীয় শহর লাটাকিয়ায়। গত এক সপ্তাহ জুড়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে টারটাস, জ়াবলেহ, বানিয়াস-সহ বিভিন্ন এলাকায় সুন্নি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির হামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের হাজারেরও বেশি অনুগামী নিহত হয়েছে। যাঁরা মূলত শিয়া আলাওয়াইট। এই আবহে প্রত্যাঘাতের জন্য আসাদপন্থীরা নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী গড়়লেন সিরিয়ায়। আর সেই সঙ্গেই নতুন করে তৈরি হল গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা।
‘মিলিটারি কাউন্সিল ফর দ্য লিবারেশন অব সিরিয়া’ নামে ওই নতুন গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা করছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গিয়াথ ডাল্লা। প্রাক্তন আল কায়দা নেতা আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন তিনি। ব্রিগেডিয়ার গিয়াথ আসাদের জমানায় সিরিয়া সেনার ৪২ মিলিশিয়া ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন। চতুর্থ পদাতিক ডিভিশনের অন্তর্গত এই বাহিনীর যোদ্ধারা গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিদ্রোহী নেতা আবু মুহাম্মদ আল-জোলানির নেতৃত্বাধীন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনীর আগ্রাসনের সময় মরণপণ প্রতিরোধ করেছিলেন।
সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ হলেন আলাওয়াইটরা। কিন্তু শিয়া মুসলিমদের এই গোষ্ঠীটি আসাদের আমলে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিল। আসাদ নিজেও আলাওয়াইট হওয়ায় তাঁর আমলে প্রশাসন এবং সামরিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠাঁই পেতে থাকেন ওই গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। আর সুন্নি কট্টরপন্থীরা ক্ষমতা দখলের পরে সেটাই আলাওয়াইটদের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৬ মার্চ থেকে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড চলছে লাটাকিয়া, টারটাস-সহ উত্তর-পশ্চিমের আলাওয়াইট অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে। ঘটনাচক্রে, ব্রিগেডিয়ার গিয়াথের প্রভাব রয়েছে ওই অঞ্চলগুলিতে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর নেতৃত্বে মরিয়া আলাওয়াইটরা প্রত্যাঘাতের পথে হাঁটলে নতুন করে সিরিয়া অশান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিরিয়ায় দীর্ঘ দিন শাসন করেছে আসাদ পরিবার। সে দেশের বর্তমান সংবিধান বাশারের বাবা হাফিজ় আল-আসাদের জমানায় কার্যকর হয়েছিল। টানা ৩০ বছর সিরিয়া শাসন করেছিলেন তিনি। বাশার এবং তাঁর বাবা হাফিজ়, দু’জনে মিলে ৫০ বছরের বেশি সময় সিরিয়া শাসন করেছেন। ২০০০ সালে হাফিজ়ের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন বাশার। টানা ২৪ বছর শাসন করার পর গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ায় তাঁর সাম্রাজ্যের পতন হয়। তবে এখনও উত্তর-পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী এলাকার কিছু অংশ প্রাক্তন সরকারের অনুগত সেনা ও মিলিশিয়া বাহিনীর দখলে রয়েছে। সেই বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আসাদ-অনুগামী ব্রিগেডিয়ার গিয়াথের হাতেই।