পড়ুয়াদের ডাকে সাড়া দিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, যাদবপুরে ন’দিনের অচলাবস্থা কি বন্ধ হচ্ছে?

যাদবপুরের পড়ুয়াদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই বৈঠক ডেকেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুর সাড়ে ১১টায় শুরু হতে চলা বৈঠকে ডাকা হয়েছে পড়ুয়াদের দুই প্রতিনিধিকেও। এই বৈঠকে যাদবপুরে ন’দিন ধরে চলা অচলাবস্থা কাটতে পারে বলে আশাবাদী অনেকে। পড়ুয়ারা সোমবার দুপুর ১টার মধ্যে এগ্‌জ়িকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এর বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছিলেন। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষের বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্তকে পড়ুয়াদের ডাকে সাড়া দেওয়ার ইঙ্গিত বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও এটি ইসি বৈঠক নয়।

রবিবার বিকেলেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত। যাদবপুরকাণ্ডের দিন দুয়েক পরেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। তবে ছাড়া পেলেও আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন না যাদবপুরের উপাচার্য। কোন‌ও প্রকার উত্তেজনা কিংবা মানসিক চাপে ভাস্করের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এই পরিস্থিতিতে ভাস্করের অনুপস্থিতিতেই বৈঠকটি হতে চলেছে। বৈঠকে পড়ুয়াদের দুই প্রতিনিধি ছাড়াও থাকার কথা সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ডিন অফ স্টুডেন্টস এবং বিভিন্ন বিভাগের ডিনেদের।

শনিবারই পড়ুয়াদের একটি ইমেল পাঠিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা বলেছিলেন উপাচার্য। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পঠনপাঠনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার এবং শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার অনুরোধও জানান তিনি। একই মর্মে বার্তা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন জুটাও। এর পরে সুর ‘নরম’ করেন পড়ুয়ারাও। শনিবারই অসুস্থ উপাচার্যকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন কয়েক জন ছাত্র। ফলে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের দাবিদাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন, না কি ছাত্রদের আন্দোলন আর‌ও তীব্র হবে, সে নিয়েই চলছে জল্পনা। অন্য দিকে, যাদবপুরের অধ্যাপক তথা তৃণমূল প্রভাবিত অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্র সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। সোমবার পড়ুয়াদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তিনি।

পড়ুয়াদের হুঁশিয়ারি

ইসি বৈঠকে সদর্থক পদক্ষেপ করা না-হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন পড়ুয়ারা। অরবিন্দ ভবনে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারের অফিস-সহ বিভিন্ন দফতর ওই দিন বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তবে পড়ুয়াদের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, সে কথা মাথায় রেখে ‘কন্ট্রোলার অফ এগ্জ়ামিনেশন’ অফিস এবং বৃত্তি বিভাগ (স্কলারশিপ সেকশন)-কে এর আওতায় রাখা হচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে। সোমবারের বৈঠকটি ইসি বৈঠক নয়। তাই নিজেদের আগের দাবি থেকে কিঞ্চিৎ সরে এসে পড়ুয়ারা তাতে যোগ দেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

রবিতেও পথে-প্রতিবাদে

যাদবপুরকাণ্ডের প্রতিবাদে গত এক সপ্তাহে একাধিক বার পথে নেমেছেন পড়ুয়ারা। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদেরও এই কর্মসূচিগুলিতে দেখা গিয়েছে। রবিবার কলকাতার দুই প্রান্ত থেকে দু’টি মিছিল বেরিয়ে শেষ হয়ে অ্যাকাডেমির সামনে। একটি মিছিল শুরু হয় হাজরা থেকে, অপরটি ধর্মতলা থেকে। মিছিলগুলি থেকে আরজি কর-কাণ্ডের বিচার চাওয়ার পাশাপাশি যাদবপুরকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো হয়। মিছিল থেকে স্লোগান তোলা হয়, ‘বাংলার মেয়ে অভয়ার হত্যার সাত মাস/ মন্ত্রীর গাড়ির চাকায় শিক্ষার সর্বনাশ’। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্যের অভিযোগ তুলে পথে নামে বিজেপিও। টালিগঞ্জ থেকে শুরু হওয়া মিছিল শেষ হয় যাদবপুর থানার বেশ খানিকটা আগেই। মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

ঘটনাবহুল ১ মার্চ

গত ১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বেশ কয়েক জন পড়ুয়া তাঁর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান। দাবি, অবিলম্বে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করাতে হবে। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের হামলায় ভাঙে ব্রাত্যের গাড়ির কাচ। আহতও হন শিক্ষামন্ত্রী। শুধু ব্রাত্য নন, অধ্যাপক তথা তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্র-সহ আরও কয়েক জন আক্রান্ত হন। অন্য দিকে, বামেদের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের অভিযোগ, ব্রাত্যের গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছেন পড়ুয়ারা। সেই ঘটনার প্রতিবাদে ১ মার্চ থেকে রাস্তায় নামে পড়ুয়াদের একাংশ।

অচলাবস্থা কি কাটবে

গত সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ক্লাস বয়কট। বিক্ষোভকারীদের দাবি, উপাচার্যকে দেখা করতে হবে তাঁদের সঙ্গে। কথা বলতে হবে তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে। যদিও অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ভাস্কর। তাই সশরীরে পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তিনি। তবে হাসপাতাল থেকেই ক্যাম্পাসের অচলাবস্থা কাটাতে পড়ুয়াদের অনুরোধ করেন উপাচার্য।

এখনও হাসপাতালে ইন্দ্রানুজ

এখনও যাদবপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন যাদবপুরের পড়ুয়া ইন্দ্রানুজ রায়। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের দাবি, গত ১ মার্চ শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছিলেন ইন্দ্রানুজ। তার পরেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে ইন্দ্রানুজের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। শনিবার চিকিৎসকেরা তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার অনুমতি দিয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, সোমবারই তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শনিবারই অসুস্থ উপাচার্যকে দেখতে যান যাদবপুরকাণ্ডের আর এক অসুস্থ ছাত্র অভিনব বসু। সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েক জন পড়ুয়া। অসুস্থ উপাচার্যকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন ইন্দ্রানুজের বাবাও। ইন্দ্রানুজের চিকিৎসার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবেন বলেও তাঁকে জানিয়েছিলেন উপাচার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.