বসন্তেই গরমের দাপট, জানেন কত ধরনের রোগ হতে পারে এই সময়? কী কী করলে সুস্থ থাকবে শরীর

বসন্তের দেখা নেই। শীত থেকে সরাসরি লাফ দিয়ে গ্রীষ্মের দৌরাত্ম্য শুরু। রোদের তাপে ইতিমধ্যেই শারীরিক অস্বস্তি দেখা দিচ্ছে। মার্চের শুরুতেই এমন গরম পড়লে আগামী দিনে কী পরিস্থিতি হবে, তা বুঝতে বেগ পেতে হবে না। ভারতের আবহাওয়া দফতর এর মধ্যেই তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে দেশের একাধিক অঞ্চলে। ফলে এখন থেকেই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সতর্কবাণীও শোনা যাচ্ছে। গরমের সময়ে কিছু সাধারণ রোগের প্রকোপ অনেকটাই বেড়ে যায়। গ্রীষ্মের কিছু সাধারণ রোগ এবং সেগুলি এড়ানোর উপায় জেনে নেওয়া উচিত আগে থেকেই।

গরমে হালকা, সুতির পোশাক পরাই শ্রেয়।

১. হিট স্ট্রোক

হিট স্ট্রোক বা হাইপারথারমিয়া গ্রীষ্মের একটি সাধারণ রোগ। প্রবল তাপে দীর্ঘ ক্ষণ থাকার ফলে ঘটে। এই রোগের উপসর্গ হল মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, দুর্বলতা, বমি ভাব ইত্যাদি। সময়মতো খেয়াল না করলে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এমনকি, হিট স্ট্রোক থেকে মৃত্যুও হয়। হাইপারথারমিয়ার এড়ানোর জন্য জল খেতে হবে ঘন ঘন। ঠান্ডা বাতাস বা বরফের প্যাক দিয়ে শরীর শীতল রাখা যায়।

২. খাদ্যে বিষক্রিয়া

গ্রীষ্মের সাধারণ রোগগুলির মধ্যে একটি হল খাদ্যে বিষক্রিয়া। দূষিত খাবার বা জলের কারণে ঘটে। উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া ব্যাক্টেরিয়ার বাড়বৃদ্ধির জন্য অনুকূল। ফলে এই সময়ে এই রোগ বেশি হয়। পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়েরিয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। কাঁচা মাংস, রাস্তার পাশের বিক্রি হওয়া খোলা খাবার, দূষিত জল এই রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর সাধারণ বাহক।

৩. ডিহাইড্রেশন

গ্রীষ্মকালে শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়, এর ফলে ডিহাইড্রেশন শুরু হয়। নিজের অজান্তেই ঘামের আকারে প্রচুর জল এবং লবণ বেরিয়ে যায় শরীর থেকে। এই রোগ এড়ানোর জন্য নিয়মিত জল খাওয়া, ওআরএস খাওয়া চালু রাখতে হবে।

৪. মাম্পস

অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ। গ্রীষ্মের তীব্র প্রকোপে মূলত শিশুদের মধ্যে দেখা যায় এই রোগ। সংক্রামিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে অন্য মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এই ভাইরাস। কানের সামনের প্যারোটিড গ্রন্থিকে প্রভাবিত করে। গলা ফুলে গিয়ে অসম্ভব ব্যথা হয়। তার সঙ্গে জ্বর।

৫. চিকেন পক্স

গ্রীষ্মের অন্যতম সাধারণ রোগগুলির মধ্যে একটি। সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ত্বকে ছোট ছোট ফোসকা, চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, প্রবল জ্বর, খিদে কমে যাওয়া এবং মাথাব্যথা হল এর লক্ষণ।

৬. হাম

গ্রীষ্মকালীন এই রোগ শ্বাসযন্ত্রে প্রভাব ফেলে। এই রোগের ভাইরাস নিয়ে আসে প্রবল জ্বর, কাশি, নাক দিয়ে জল পড়া, গলা ব্যথা এবং চোখ লাল হওয়া। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চুলে এবং মুখের চারপাশে ফুসকুড়ি দেখা যায়।

৭. টাইফয়েড

এটি জলবাহিত রোগ যা ওরোফেকাল রুটের মাধ্যমে ছড়ায়। এর সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, ক্লান্তি, দুর্বলতা, পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা এবং খিদে কমে যাওয়া।

গ্রীষ্মের সাধারণ রোগ এড়াতে প্রস্তুত থাকবেন কীভাবে?

রোদে বেরোলে ঢিলেঢালা সুতির পোশাক, হালকা রঙের জামা পরতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে টুপি এবং ছাতা।এমন আবহাওয়ায় শিশু এবং বয়স্কদের দিকে একটু বেশি নজর দিতে হবে। তা ছাড়া ঝুঁকি রয়েছে অন্তঃসত্ত্বা, কো-মর্বিডিটি থাকা মানুষদের ক্ষেত্রেও। প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। বাড়িতে থাকাকালীন বা বাইরে বেরোলে ডাবের জল এবং লেবু জলের মতো পানীয় ঘন ঘন পান করতে হবে। যাতে নিজেকে হাইড্রেটেড রাখা যায়। বাইরে বেরোলে ভারী কাজকর্ম এড়িয়ে চলুন। ছায়ায় থাকুন এবং যথাসম্ভব বিশ্রাম নিন। প্রচণ্ড রোদের সংস্পর্শে থাকা গাড়িতে বসবেন না। সব সময়ে ছায়ার নীচে গাড়ি পার্ক করার চেষ্টা করবেন। খাবার ধরার বা খাওয়ার সময়ে হাত ভাল ভাবে ধুয়ে নিন এবং সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। খাবার এবং জলবাহিত সংক্রমণ রোধ করতে যে কোনও খাবার স্পর্শ করার আগে হাত ধুয়ে নিলে ভাল। রান্না না করা অথবা রাস্তার খাবার খাবেন না বেশি। তরমুজ, শসা, আখ এবং আমের মতো তাজা ফল এবং সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। চা, কফি, চিনিযুক্ত পানীয়, অ্যালকোহল, উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চোখ ব্যথা এবং সংক্রমণের বিস্তার এড়াতে, ব্যথা কমাতে হাত ঘন ঘন পরিষ্কার রাখতে হবে। পরিষ্কার জল দিয়ে চোখ ধুয়ে নেবেন। হাম, মাম্পস এবং রুবেলার টিকা সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

যদি আপনার শিশুর এই তিনটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে টিকা না দেওয়া থাকে, তা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকা নেওয়া উচিত। অন্তত ১৫ এসপিএফ-সহ সানস্ক্রিন মেখে তবেই বাইরে বেরোনো উচিত। এর ফলে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে। বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত বাইরে না বেরোলেই ভাল। গ্রীষ্মে এই সময়টায় সূর্যের রশ্মি লম্ব ভাবে পড়ে। ফলে তাপ বেশি থাকে। বাইরে বেরোলে রোদের তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস এবং টুপি পরুন। এর ফলে ক্ষতিকারক অতিবেগনি রশ্মি ত্বককে ছুঁতে পারবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের দরকার এই গরমে। শোয়ার ঘর ঠান্ডা রাখতে ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। প্রতি দিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার এবং ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। ধারাবাহিকতা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.