রাজা বিজয় সেনের স্ত্রী পথে এক পুত্রের জন্ম দেন। পরবর্তীকালে তিনি খ্যাত হন বল্লাল সেন নামে। সিংহাসনে আরোহণের পর স্বীয় জন্মস্থানকে মহিমান্বিত করার জন্য তিনি একটি মন্দির তৈরি করান। কিংবদন্তি অনুযায়ী, বল্লাল সেন একবার জঙ্গলে ঢাকা থাকা দেবতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বল্লাল সেন সেই দেবীকে আবিষ্কার করে মন্দির স্থাপন করান। মূর্তিটি ঢাকা ছিল বলে ঢাকেশ্বরী নাম করা হয়। ঢাকেশ্বরী মাতা দেবী দুর্গা বা আদি পরা মহাশক্তির একটি রূপ।
দেশ ভাগের সময় কয়েক লক্ষ ভিটেমাটি হারা হয়। সেই সময় মূর্তিটিকে বাঁচাতে লুকিয়ে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। দেশভাগ-পরবর্তী দাঙ্গার সময় সম্ভাব্য আক্রমণ এবং লুন্ঠনের হাত থেকে দেবীকে রক্ষা করতে ঢাকার মূল বিগ্রহটিকে গোপন, বিশেষ একটি বিমানে এবং দ্রুততার সঙ্গে ১৯৪৮-এ কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন রাজেন্দ্রকিশোর তিওয়ারি (মতান্তরে প্রহ্লাদকিশোর তিওয়ারি) এবং হরিহর চক্রবর্তী। তিনি শোভা বাজারের ধনবান ব্যবসায়ী দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরি মহাশয়ের বাড়ির গুদামঘরে বিগ্রহকে লুকিয়ে রাখেন।
কলকাতায় বিগ্রহটি আনার পর প্রথম দু’বছর হরচন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটে দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরির বাড়িতে দেবী পূজিতা হন। চৌধুরি মহাশয় মাত্র ৬ মাসের ভেতরে কুমারটুলিতে জমি ও একটি বিশাল বাড়ি কিনে মন্দির তৈরি করিয়ে সেই আদি বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ মায়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় কলকাতায়। দেশভাগের বেদনাময় পরিণামের কারণেই বিগ্রহ আনা এবং মন্দিরের প্রতিষ্ঠা। দেবীকে যেভাবে অলংকারহীন এবং প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় লুকিয়ে আনা হয়েছিল, তার ছবিও এই মন্দিরে সংরক্ষিত আছে।দেবীর বেদীমূলে লেখা হল—
ঢাকেশ্বরী জগন্মাতঃ ত্বং খলু ভক্ত বৎসলা। স্বস্থানাৎ স্বাগতা চাত্র স্বলীলয়া স্থিরা ভব।
অর্থাৎ – হে দেবী জগন্মাতা ঢাকেশ্বরী তুমি পরম ভক্তবৎসলা। আজ থেকে এই তোমার স্বস্থান (নিজের জায়গা), তোমার স্বস্থানে তোমায় স্বাগত জানাই মা। ঢাকায় যে লীলায় তুমি ছিলে আজ থেকে এই খানে তুমি স্বরূপে স্বমহিমায় স্থিরভাবে বাস করে নিজ লীলা বিস্তার কর।
রবিবার (২-৩-২৫) সকালে কুমোরটুলিতে মায়ের সেই আসল মূর্তির সামনে বর্তমান পূজারী অজয় তিওয়ারির হাতে তুলে দিলাম সদ্যপ্রকাশিত পূর্ববঙ্গের হিন্দু স্মৃতি (প্রথম খণ্ড)।
